শাহিন শুভ : বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের উন্নয়ন ছাড়া কোনোভাবেই এদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহাম্মদ হাসান বাবু। তিনি বলেন, সিকিউরিটিজ হাউজগুলো তাদের দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করছে না।
সোমবার (১৪ আগস্ট) নিকুঞ্জের ডিএসই ভবনে বঙ্গবন্ধুর ৪৮তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. সাইফুর রহমান মজুমদার। তিনি দেশ ও মানুষের লক্ষে বঙ্গবন্ধু হৃদয় স্পর্শ কর্ম ও তার ত্যাগ তুলে ধরেন। “দোয়া মাহফিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার নিহত পরিবারবর্গের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পাশাপাশি নিহতদের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।”
শেয়ারবাজারের উন্নয়ন প্রসঙ্গে হাফিজ মুহাম্মদ হাসান বাবু বলেন, দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন যেভোবে এগিয়ে এসেছে, শেয়ারবাজারের উন্নয়ন সেইভাবে হয়নি। শেয়ারবাজার উন্নয়নে পিছিয়ে আছে। তাই পিছিয়ে থাকা শেয়ারবাজারে উন্নয়ন গতি বৃদ্ধিতে আমাাদের কাজ করতে হবে। আমরা যদি সততা নিয়ে কাজ করি, তাহলে শেয়ারবাজার দাঁড়িয়ে যাবে। এক্ষেত্রে ডিএসইকে লিডারশিপ দিতে হবে। এই লিডারশিপে যদি আপনারা পাশে থাকেন, তাহলে আমরা শেয়ারবাজাকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে পারবো।
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, অনেক ভালো মন্দের মধ্য দিয়ে আপনারা চলছেন। আমরা কিন্তু আপনাদের জন্য এখানে বসে আছি। আপনাদের জন্যই কাজ করছি। আক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, সিকিউরিটিজ হাউজগুলো তাদের দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করছে না। হাউজগুলোর কাছে আমাদের কোনো চাওয়া পাওয়া নেই। তবে শেয়ারবাজারের উন্নয়নে ডিএসই নিরলসভাবে কাজ করছে। আমরা এই উন্নয়নে হাউজগুলোকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যাবো।
বঙ্গবন্ধুর প্রতি স্মৃতিচারণ করে হাসান বাবু বলেন, বঙ্গবন্ধু একজন সরল প্রকৃতির নির্ভীক মানুষ ছিলেন। তার কথা বার্তায় কোনো জটিলতা ছিল না। তিনি কখনোই এদেশে নিরাপত্তাহীন্তায় ভুগতেন না। একেবারে সাধারণের মতো জীবনযাপন করতেন। সকল পেশাজীবী মানুষের সাথে তিনি অতি সাধারণ ভাবে মিশতে পারতেন।
আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যদি আমি পাশাপাশি রাখি তাহলে প্রথম যে জিনিসটা নজরে আসে তা হলো অত্যন্ত দেশপ্রেম। ক্ষমতার লোভ কোনো দিনই তাদের মধ্যে ছিল না। দেশের জনগণের জন্য তারা কাজ করেছেন। আর এসব কারণেই তাদের প্রতি এদেশের জনগণের এতো আস্থা।
এদেশে সততা আর দেশপ্রেমের বড্ড অভাব রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই দুটো জিনিস আমাদের মধ্যে নেই বললেই চলে। আমরা একে অপরকে ভালোবাসতে জানি না, শ্রদ্ধা করতে জানি না, বিশ্বাস করতে জানি না। সবখানে কেমন জানি বিশ্বাসঘাতকতায় ভরে গেছে। আজকে প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে যে দেশপ্রেম, সততা ও শ্রদ্ধাবোধ তার সবটায় এসেছে বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে।
আরও বলেন, জাতির জনকের যে সোনার বাংলা গড়ার ইচ্ছা ছিল সেটা তার হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে স্থগিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু কন্যা ক্ষমতায় আসার পর তার সেই অধরা স্বপ্নের বাস্তবায়ন শুরু করেন। বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের মত পার্থক্য থাকতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, উন্নয়নের পথে আমাদের মত পার্থক্যগুলো সড়িয়ে রেখে উন্নয়নের পথে আমাদেরকে একত্রিত থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্মময় সংগ্রামী জীবন নিয়ে আলোচনা করেন ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মূখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, ডিএসইর সাবেক চেয়ারম্যান মো. ইউনুসুর রহমান, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম, ডিবিএর প্রেসিডেন্ট রিজার্ড ডি রোজারিও, ডিএসইর সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমদ রশিদ লালী, বুলবুল সিকিউরিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস শাহুদুল হক বুলবুল, ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি জিয়াউর রহমান, ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি মুহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মির্ধা প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের নিজ বাসায় সেনাবাহিনীর কতিপয় বিপথগামী সেনাসদস্যের হাতে সপরিবারে নিহত হন। সেদিন তিনি ছাড়াও নিহত হন তার স্ত্রী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব। এছাড়া তাদের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনসহ নিহত হন আরও ১৬ জন। নিহত হন বঙ্গবন্ধুর ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু পুত্র শেখ রাসেল, পুত্রবধু সুলতানা কামাল, পুত্রবধু রোজী কামাল, ভাই শেখ আবু নাসের, ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগনে শেখ ফজলুল হক মণি, শেখ ফজলুল হক মণির অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মণি, কর্নেল জামিলউদ্দীন। দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট মেয়ে শেখ রেহানা।
বিজনেস আওয়ার/ ১৪ আগস্ট,২০২৩/এসএস/পিএস