বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: মাদরাসার ছাত্রীদের প্রযুক্তিতে দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিনামূল্যে আইটি ট্রেনিং কোর্স চালু করেছে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) বিভিন্ন বিভাগের ছয়জন শিক্ষার্থী। প্রকল্পের নাম ‘প্রজেক্ট খাদিজা’। রাজশাহী শহরের বিভিন্ন মাদরাসার ছাত্রীদের প্রযুক্তিতে দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করবে প্রকল্পটি বলে দাবি আয়োজকদের।
প্রকল্পটি পরিচালনায় রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামিন ইয়াসির হাসান, সব্যসাচী সরকার, আতিয়া ইসলাম, মাঈশা মায়মুনা, আনিকা তাহসিন ও ইশতিয়াক সাদ।
প্রথমদিকে রাজশাহী মহিলা ফাজিল মাদরাসায় যাত্রা শুরু করে প্রকল্পটি। শিক্ষার্থীদের এই প্রকল্পে সহায়তা করছে বিডিঅ্যাপস এবং ইনোভেশন সোসাইটি অফ রুয়েট।
আয়োজকরা জানান, প্রকল্পের আওতায় শিক্ষার্থীরা কম্পিউটার গ্রাফিক্স, ইংরেজি ভাষা চর্চা, বেসিক কোডিং এবং ফ্রিল্যান্সিংয়ের বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি বাস্তব বিশ্বের সমস্যা সমাধানের দক্ষতা অর্জন করবে শিক্ষার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ‘প্রজেক্ট খাদিজা’ মাদরাসা ছাত্রীদের জন্য ৩ মাসব্যাপী যাত্রা। সপ্তাহে বুধবার ও বৃহস্পতিবার ক্লাস নেওয়া হবে। হাইব্রিড মডেলে ক্লাসের সময়কাল দেড় ঘণ্টা। ক্লাস শিক্ষকদের অনলাইনে জুমের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবেন এবং নারী শিক্ষকরা ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা প্রদান করবেন।
ক্লাস চলাকালে ছাত্রীরা প্রথম সপ্তাহে ডিভাইস পরিচালনা, ব্রাউজিং, নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার এবং ইন্টারনেটে সম্ভাব্য হুমকির পাশাপাশি গুগল এবং ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে অ্যাকাউন্ট তৈরির বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ পাবে।
দ্বিতীয় সপ্তাহে শিক্ষার্থীরা ১৫ মিনিটের কথোপকথন মূলক ইংরেজি ক্লাস পাবে এবং পরে বেসিক গ্রাফিক্স ডিজাইনিং ক্লাস শেষে একটি প্রতিক্রিয়া ফর্ম পূরণ করতে পারবে। প্রতিক্রিয়া ফর্মটি ডিজিটাল লেখা এবং চিন্তা প্রকাশের একটি অনুশীলন হবে।
পঞ্চম সপ্তাহে শিক্ষার্থীরা অর্থ উপার্জনের জন্য নিজস্ব পরিষেবা অ্যাপ তৈরি করতে সক্ষম হবে। ষষ্ঠ সপ্তাহে প্রত্যেকে ক্লাসে অ্যাপের ধারণা উপস্থাপন করা হবে যা শিক্ষার্থীদের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে উৎসাহের সঙ্গে কথা বলতে সহায়তা করবে।
সপ্তম থেকে দশম সপ্তাহে শিক্ষার্থীরা বেসিক সি প্রোগ্রামিং এবং কথোপকথনমূলক ইংরেজি শিখবে। একাদশ সপ্তাহে ইন্টারনেটের হুমকি, ইন্টারনেটে কীভাবে আচরণ করতে হয় এবং কীভাবে ইন্টারনেট থেকে নিজে থেকে শিখতে হয় তা শিখবে এবং পরবর্তী সপ্তাহে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা হবে এবং শিক্ষার্থীরা ‘Google G-suite’ এর ব্যবহার শিখবে।
প্রকল্পের সহ-প্রতিষ্ঠাতা আনিকা তাহসিন বলেন, ধর্মীয় বিধিনিষেধ কে কারণ দেখিয়ে নারী মাদরাসা শিক্ষার্থীদের আধুনিক শিক্ষার সুযোগ দেওয়া হয় না। আমরা বিধিনিষেধ মেনে প্রযুক্তির সহায়তায় মাদরাসার নারী শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তি শিক্ষা দেব। যেন তারা পরিবার, সমাজ ও দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি আরও বলেন, মাদরাসা কর্তৃপক্ষ শুরুতে এমন উদ্যোগের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দিহান হলেও, এখন শিক্ষার্থীদের উন্নতি ও তাদের আগ্রহ দেখে আমাদের সার্বিক সহায়তা করছেন।
ধর্মীয় বিধিনিষেধের কারণে নারীরা আধুনিক প্রযুক্তি শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হতে হবে না। প্রকল্পটি নারীদেরকে আধুনিক প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত করে সমাজ ও দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম হবে এবং এ জাতীয় প্রশিক্ষণ দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে এবং নারী মাদরাসার শিক্ষার্থীরা সামনে এগিয়ে আসবে বলে প্রত্যাশা আয়োজকদের।
প্রকল্পটির সার্বিক দায়িত্বে থাকা সামিন ইয়াসির হাসান বলেন, আধুনিক যুগে মানুষের মেধা ও কর্মক্ষমতাকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এক্ষেত্রে যথাযথ প্রযুক্তিগত শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে সমাজ ও দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নারীদের অগ্রণী ভূমিকা পালন একান্ত প্রয়োজন এবং সে লক্ষ্যে প্রকল্পটির যাত্রা।
বিজনেস আওয়ার/১৫ আগস্ট, ২০২৩/এইচএ