ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুই রোহিঙ্গার সহযোগিতায় মানবপাচার চক্র গড়েন ইসমাইল

  • পোস্ট হয়েছে : ০৪:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৩
  • 82

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: ভাগ্য পরিবর্তন ও উন্নত জীবনযাপনের আশায় মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছা পোষণ করেন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার ২২ যুবক। পরে তাদের কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে ট্রলারযোগে মিয়ানমার নেওয়া হয়।

পরে সেখানে তাদের নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায় করে একটি চক্র। মিয়ানমার থেকে ট্রলারে পাচারকালে ১৯ যুবককে মিয়ানমার কোস্টগার্ড আটক করে। বাকি তিন যুবক অবৈধভাবে মালয়েশিয়া পৌঁছে যায়। কিন্তু পাচারকারী চক্রের নির্যাতনে মালয়েশিয়া পৌঁছানোর পর ভুক্তভোগী যুবক জহিরুল ইসলাম মারা যান। বাকি দুই যুবক অবৈধভাবে বর্তমানে মালয়েশিয়ায় রয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার ১৯ যুবককে মিয়ানমারে আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি ও সেখানে বন্দিদশায় নির্যাতনের ফলে একজনের নির্মম মৃত্যুর ঘটনায় দায়ী আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্রের বাংলাদেশের হোতা মো. ইসমাইল ও তার দুই সহযোগীকে আটক করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

শুক্রবার (১৮ আগস্ট) দিনগত রাতে নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক হয়। আটক তিনজন হলেন চক্রের হোতা মো. ইসমাইল (৪৫) ও তার সহযোগী জসিম (৩৫) এবং মো. এলাহী (৫০)।

শনিবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

গত ১৯ মার্চ নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার এলাকার ওই ১৯ যুবককে টেকনাফ থেকে নৌ-পথে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে মিয়ানমারের কোস্টগার্ড আটক করে। পরে ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা গত ১০ জুলাই নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে গিয়ে তাদের স্বজনদের ফিরে পেতে আবেদন করেন। এ ঘটনায় গত ১৫ এপ্রিল আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানায় একটি মানব পাচার আইনে মামলা দায়ের করেন।

চক্রের মাধ্যমে পাচার হওয়া জহিরুল গত ২৪ মে মালয়েশিয়ার একটি হাসপাতালে মারা যান। গত ২৮ মে বাংলাদেশ সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় তার মরদেহ দেশে আনা হয়। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে চক্রের সদস্যদের আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়ে চক্রের হোতাসহ তিনজনকে আটক করা হয়।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আটকদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ইসমাইল গত ২০০১ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত মালয়েশিয়া অবস্থানকালে মিয়ানমারের আরাকানের নাগরিক (রোহিঙ্গা) রশিদুল ও জামালের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং সখ্যতা গড়ে উঠে। পরে ইসমাইল দেশে ফিরে এসে রশিদুল ও জামালের যোগসাজশে ১০ থেকে ১২ জনের একটি আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্র গড়ে তোলেন।
এছাড়া তিনি স্থানীয় এজেন্টদের যোগসাজশে বাংলাদেশে মানব পাচার চক্রটির শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে। চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন এলাকার তরুণ ও যুবকদের কোনো প্রকার অর্থ ও পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পৌঁছানোর আশ্বাস দেন। মালয়েশিয়া পৌঁছানোর পরে কাজ করে তিন লাখ ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে এমন প্রলোভন দেখিয়ে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার এলাকার ২২ যুবককে পাচার করে। এরপর মিয়ানমারে তাদের আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করতে অমানবিক নির্যাতন চালায়।

তিনি বলেন, ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে আদায় করা তিন লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে আটক ইসমাইল, জসিম ও আলম ৩০ হাজার টাকা করে নেন। চক্রের অন্য সদস্যরা ১০ হাজার টাকা করে পেতেন এবং বাকি দুই লাখ ২০ হাজার টাকা মালয়েশিয়া অবস্থানরত রশিদুলের কাছে মোবাইল ব্যাংকিং ও ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠাতেন ইসমাইল।

কীভাবে মানব পাচার চক্র গড়ে তোলেন ইসমাইল:

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ইসমাইল এ চক্রের বাংলাদেশের হোতা। তিনি গত ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়া অবস্থান করেন। দেশে ফিরে তিনি ১০ থেকে ১২ জনের একটি মানব পাচার চক্র গড়ে তুলে অবৈধভাবে বিদেশে লোক পাঠাতেন। তিনি প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর ধরে মানব পাচারের এ চক্রটি পরিচালনা করছেন বলে জানা যায়। ইসমাইল নারায়ণগঞ্জে অবস্থান করে এ চক্রের দেশে এবং বিদেশে অবস্থিত অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় করে অবৈধভাবে মানব পাচার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া ইতোমধ্যে তিনি কারাভোগও করেছেন।

আটক জসিম ও এলাহী চক্রটির অন্যতম সহযোগী। তারা নারায়ণগঞ্জে অবস্থান করে বিভিন্ন এলাকা থেকে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক প্রত্যাশীদের সংগ্রহ করে ইসমাইলের কাছে নিয়ে আসতেন। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলাও রয়েছে।

আসামির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

বিজনেস আওয়ার/১৯ আগস্ট, ২০২৩/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

দুই রোহিঙ্গার সহযোগিতায় মানবপাচার চক্র গড়েন ইসমাইল

পোস্ট হয়েছে : ০৪:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৩

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: ভাগ্য পরিবর্তন ও উন্নত জীবনযাপনের আশায় মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছা পোষণ করেন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার ২২ যুবক। পরে তাদের কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে ট্রলারযোগে মিয়ানমার নেওয়া হয়।

পরে সেখানে তাদের নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায় করে একটি চক্র। মিয়ানমার থেকে ট্রলারে পাচারকালে ১৯ যুবককে মিয়ানমার কোস্টগার্ড আটক করে। বাকি তিন যুবক অবৈধভাবে মালয়েশিয়া পৌঁছে যায়। কিন্তু পাচারকারী চক্রের নির্যাতনে মালয়েশিয়া পৌঁছানোর পর ভুক্তভোগী যুবক জহিরুল ইসলাম মারা যান। বাকি দুই যুবক অবৈধভাবে বর্তমানে মালয়েশিয়ায় রয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার ১৯ যুবককে মিয়ানমারে আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি ও সেখানে বন্দিদশায় নির্যাতনের ফলে একজনের নির্মম মৃত্যুর ঘটনায় দায়ী আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্রের বাংলাদেশের হোতা মো. ইসমাইল ও তার দুই সহযোগীকে আটক করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

শুক্রবার (১৮ আগস্ট) দিনগত রাতে নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক হয়। আটক তিনজন হলেন চক্রের হোতা মো. ইসমাইল (৪৫) ও তার সহযোগী জসিম (৩৫) এবং মো. এলাহী (৫০)।

শনিবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

গত ১৯ মার্চ নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার এলাকার ওই ১৯ যুবককে টেকনাফ থেকে নৌ-পথে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে মিয়ানমারের কোস্টগার্ড আটক করে। পরে ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা গত ১০ জুলাই নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে গিয়ে তাদের স্বজনদের ফিরে পেতে আবেদন করেন। এ ঘটনায় গত ১৫ এপ্রিল আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানায় একটি মানব পাচার আইনে মামলা দায়ের করেন।

চক্রের মাধ্যমে পাচার হওয়া জহিরুল গত ২৪ মে মালয়েশিয়ার একটি হাসপাতালে মারা যান। গত ২৮ মে বাংলাদেশ সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় তার মরদেহ দেশে আনা হয়। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে চক্রের সদস্যদের আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়ে চক্রের হোতাসহ তিনজনকে আটক করা হয়।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আটকদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ইসমাইল গত ২০০১ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত মালয়েশিয়া অবস্থানকালে মিয়ানমারের আরাকানের নাগরিক (রোহিঙ্গা) রশিদুল ও জামালের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং সখ্যতা গড়ে উঠে। পরে ইসমাইল দেশে ফিরে এসে রশিদুল ও জামালের যোগসাজশে ১০ থেকে ১২ জনের একটি আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্র গড়ে তোলেন।
এছাড়া তিনি স্থানীয় এজেন্টদের যোগসাজশে বাংলাদেশে মানব পাচার চক্রটির শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে। চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন এলাকার তরুণ ও যুবকদের কোনো প্রকার অর্থ ও পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পৌঁছানোর আশ্বাস দেন। মালয়েশিয়া পৌঁছানোর পরে কাজ করে তিন লাখ ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে এমন প্রলোভন দেখিয়ে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার এলাকার ২২ যুবককে পাচার করে। এরপর মিয়ানমারে তাদের আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করতে অমানবিক নির্যাতন চালায়।

তিনি বলেন, ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে আদায় করা তিন লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে আটক ইসমাইল, জসিম ও আলম ৩০ হাজার টাকা করে নেন। চক্রের অন্য সদস্যরা ১০ হাজার টাকা করে পেতেন এবং বাকি দুই লাখ ২০ হাজার টাকা মালয়েশিয়া অবস্থানরত রশিদুলের কাছে মোবাইল ব্যাংকিং ও ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠাতেন ইসমাইল।

কীভাবে মানব পাচার চক্র গড়ে তোলেন ইসমাইল:

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ইসমাইল এ চক্রের বাংলাদেশের হোতা। তিনি গত ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়া অবস্থান করেন। দেশে ফিরে তিনি ১০ থেকে ১২ জনের একটি মানব পাচার চক্র গড়ে তুলে অবৈধভাবে বিদেশে লোক পাঠাতেন। তিনি প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর ধরে মানব পাচারের এ চক্রটি পরিচালনা করছেন বলে জানা যায়। ইসমাইল নারায়ণগঞ্জে অবস্থান করে এ চক্রের দেশে এবং বিদেশে অবস্থিত অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় করে অবৈধভাবে মানব পাচার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া ইতোমধ্যে তিনি কারাভোগও করেছেন।

আটক জসিম ও এলাহী চক্রটির অন্যতম সহযোগী। তারা নারায়ণগঞ্জে অবস্থান করে বিভিন্ন এলাকা থেকে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক প্রত্যাশীদের সংগ্রহ করে ইসমাইলের কাছে নিয়ে আসতেন। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলাও রয়েছে।

আসামির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

বিজনেস আওয়ার/১৯ আগস্ট, ২০২৩/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: