বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : নগদ টাকার ব্যবহার কমিয়ে আনা ও লেনদেন আরও সহজ করতে সরকারের ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’ গড়ার উদ্যোগে ডিজিটাল ব্যাংক চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর এই ব্যাংকে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ২১টি কোম্পানি। ডিজিটাল ব্যাংকে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করেছে এসব কোম্পানি।
তবে কতগুলো প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে সেটি এখনও প্রকাশ করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে কোম্পানিগুলো যে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে এ সংখ্যা এখন পর্যন্ত ২১টি জানা গেছে।
এর মধ্যে ব্যাংক খাতের রয়েছে ১৬টি, হোটেল ১টি, ওষুধ খাতের ১টি, ঢেউশীট কোম্পানি ১টি, বীমা কোম্পানি ১টি এবং তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের ১টি কোম্পানি রয়েছে।
যেসব কোম্পানি ডিজিটাল ব্যাংক গড়ার কথা জানায় তাদের মধ্যে রয়েছে সিটি ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ইস্টার্ণ ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, এনসিসি, এনআরবিসি ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি), ইউনিক হোটেল, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস, আরামিট, প্রগতি ইন্স্যুরেন্স এবং জেনেক্স ইনফোসিস।
বেশ কয়েক বছরের প্রস্তুতি শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক লাইসেন্সের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু করে গত জুন থেকে। শুরুতে আবেদন করার শেষ সময় ছিল গত ১ অগাস্ট। সে সময়ের মধ্যে কোনো আবেদন জমা না পড়ায় পরে তা বাড়িয়ে ১৭ অগাস্ট করা হয়। ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদন দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি কমিটি কাজ করবে।
সবার আগে ‘ডিজি টেন পিএলসি’ নামে দশ ব্যাংকের জোট ডিজিটাল ব্যাংকে বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়। এই ১০টি ব্যাংক মিলিয়ে ১২৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বিনিয়োগের কথা জানিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, ডিজিটাল ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন হবে ন্যূনতম ১২৫ কোটি টাকা, যেখানে প্রচলিত ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন হচ্ছে ৫০০ কোটি টাকা।
কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবার আগে জোটবদ্ধ হয়ে ডিজিটাল ব্যাংক গড়ার জানান দেয় সিটি ব্যাংক। ব্যাংকটি ১৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বিনিয়োগের কথা জানায়। এরপর পূবালী ব্যাংক প্রথমে ১৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়। এই উদ্যোগে আরেক ব্যাংক ডাচ্-বাংলা। তারা ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করবে। ইস্টার্ন (ইবিএল), ট্রাস্ট, মার্কেন্টাইল, ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক (এনসিসিবি), প্রাইম ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, এনআরবিসি ব্যাংক ও মিডল্যান্ড ব্যাংকও একই পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করবে। এছাড়া মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ১৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করবে।
এছাড়াও ইউনিক হোটেল ১২ কোটি ৫০ লাখ, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস ৭ কোটি ৫০ লাখ, আরামিট ৬ কোটি ২৫ লাখ, প্রগতি ইন্স্যুরেন্স ১২ কোটি ৫০ লাখ এবং জেনেক্স ইনফোসিস ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা করে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এরপর রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী, রূপালী, অগ্রণী ও জনতা মিলে জোটবদ্ধভাবে ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের উদ্যোগের কথা জানায়। তারা আবেদন করলেও কী নাম হবে, সেটি প্রকাশ করা হয়নি।
বেসরকারি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী কোম্পানি উপায়ের নেতৃত্বে যে জোট আবেদন করেছে, তার নাম ঠিক করা হয়েছে ‘উপায় ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি’। এই জোটে আছে বেসরকারি ব্যাংক এনআরবিসি ও মেঘনাও।
‘সঞ্চয় ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি’ নামে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে বেসরকারি ঢাকা ব্যাংক। তাদের জোটেও বেশ কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্র্যাক ব্যাংক তাদের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান বিকাশ ডিজিটাল ব্যাংকের ৫১ শতাংশ শেয়ার পেতে বিনিয়োগ করার কথা জানিয়েছে।
রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান পাঠাও-ও ডিজিটাল ব্যাংক পেতে আবেদন করেছে। নগদ ডিজিটাল ব্যাংক চেয়ে আবেদন করেছে ডিজিটাল আর্থিক সেবাদানকারী কোম্পানি নগদও। শেষ দিনে এসে আবেদন করে বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর বাংলালিংক।
আবেদন করেছে রাইড শেয়ারিং, ফুড ডেলিভারি এবং ই-কমার্স লজিস্টিকস কোম্পানি ‘পাঠাও’, নাম দিয়েছে ‘পাঠাও ডিজিটাল ব্যাংক।’
গত এপ্রিল মাসে কোম্পানিটিকে পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) লাইসেন্স দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক বাদে সব ব্যাংকই শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ায় ১৩ ব্যাংকই নিজ নিজ পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিয়ে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য (পিএসআই) করেছে ডিজিটাল ব্যাংকে বিনিয়োগের সিদ্ধান্তে।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান হওয়ায় বড় ধরনের কোনো বিনিয়োগ বা ব্যবসায় নতুন কিছু সংযোজিত হলে বিনিয়োগকারীদের মূল্য সংবেদনশীল তথ্য (পিএসআই) প্রকাশের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
বিজনেস আওয়ার/২০ আগস্ট, ২০২৩/পিএস