বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: বরিশাল সিটি করপোরেশনের বিদায়ী মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর ছবি ব্যক্তিগত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে নামিয়ে ফেলায় স্থানীয় একটি ক্লাবে নিয়ে ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতার গলায় জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে।
জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরামদ্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য নাজমুল হাসান ওরফে মঈন জমাদ্দারের নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এই ঘটনার দুটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ছড়িয়ে পড়েছে। ছড়িয়ে পড়া ১ মিনিট ২ সেকেন্ড ও ১৭ সেকেন্ডের ২টি ভিডিওতে দেখা গেছে- দোকান থেকে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ছবি কেন নামিয়ে ফেলা হয়েছে, এ জন্য ভুক্তভোগী মনিরুজ্জামানের কাছে কৈফিয়ত চাচ্ছেন কয়েকজন সাদিক অনুসারী নেতাকর্মীরা।
এ ঘটনায় হেনস্তার অভিযোগে নাজমুল হাসান ওরফে মঈন জমাদ্দারের বিরুদ্ধে সোমবার (২৮ আগস্ট) সন্ধ্যায় কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী মনিরুজ্জামান খান বাচ্চু চরামদ্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। পেশায় তিনি সোনার বাংলা মটরসের স্বত্বাধিকারী।
ভাইরাল হওয়া ১ মিনিট ২ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, মনিরুজ্জামান খান বাচ্চুকে বাধ্য করা হয়েছে ‘সাদিক আব্দুল্লাহর ছবি দোকান থেকে নামিয়ে রাখা অন্যায় হয়েছে’ বলতে। আর একপর্যায় এ জন্য বাচ্চু ক্ষমাও চাইছেন।
আবার ১৭ সেকেন্ডের আরেকটি ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের বিদায়ী মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর ছবি নামিয়ে রাখায় শাস্তিস্বরূপ গলায় জুতার মালা পরানো হয়েছে।
মনিরুজ্জামান খান বাচ্চু বলেন, ‘বরিশাল নগরীর ১১ নম্বর ওয়ার্ড বান্দ রোডে সোনার বাংলা মটরস নামে আমার একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে। আমার পূর্বপরিচিত নাজমুল হাসান ওরফে মঈন জমাদ্দার ২২ আগস্ট ফোন করে নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুর রহমানের ক্লাব হিসেবে পরিচিত শহিদ রহিম স্মৃতি পাঠাগার ক্লাবের পশ্চিম পাশের একটি কক্ষে আমাকে ডেকে নেন। বিকেল ৩টার দিকে সেখানে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে রুম আটকে ওখানে থাকা সাব্বির, আব্দুল, কাওছার, সোহাগ আমাকে মারধর শুরু করে।
এর মধ্যে একজন বিএনপির সমর্থক ও বাকি চারজন সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারী। আমাকে মারধর করে ওরা বলতে বলে যে আমার ব্যক্তিগত অফিস থেকে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর ছবি নামিয়েছি। ওরা যতবার এই কথা বলতে বলেছে, ততবার আমি বলেছি যে সাদিক আব্দুল্লাহর ছবি আমার অফিস থেকে আমি নামাইনি। কিন্তু আমাকে রুমের মধ্যে আটকে ৮/৯ দফায় মারধর করে। শেষে মারধরের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। পরে বাধ্য হয়ে ওদের শেখানো কথা বলি যে সাদিক আব্দুল্লাহর ছবি নামিয়েছি এবং তা অন্যায় হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী। আমাকে হেনস্তা করার জন্য কাওছার জুতার মালা বানিয়ে দেয় আর সোহাগ আমার গলায় পরিয়ে দেয়। আমি দু-তিনবার ফেলে দিই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে আরও মারধর করে। শেষে আমি জ্ঞান হারালে গলায় জুতার মালা পরিয়ে চেয়ারে বসিয়ে ভিডিও করে।’
মনিরুজ্জামান খান অভিযোগ বলেন, ‘এর আগে মঈন জমাদ্দার কয়েক দফায় হুমকি দিয়েছে, আমি মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর পক্ষে কাজ করলে বরিশালে থাকতে দেবে না। সাদিক আব্দুল্লাহ বরিশালে ফিরলে আমাকে মারধর করবে। আমার কক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের ছবি আছে। যেহেতু আমি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি এবং আমার অফিস সোনার বাংলা মটরসে বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ আসেন। এই ইস্যু কাজে লাগিয়ে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে যে সাদিক আব্দুল্লাহর ছবি আমার অফিস থেকে নামিয়ে রেখেছি। এই অভিযোগ তুলে আমাকে মারধর ও গলায় জুতার মালা পরিয়ে তা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত নাজমুল হাসান ওরফে মঈন জমাদ্দার বলেন, ‘মনিরুজ্জামান খান বাচ্চুর যে ভিডিও ছড়িয়েছে তা আমি ধারণ করেছি ও ছড়িয়েছি এটা সত্য। কিন্তু জুতার মালা পরানোর যে ভিডিও তার আগের ভিডিওর সঙ্গে সম্পৃক্ত না। তাছাড়া ওখানে সাদিক আব্দুল্লাহর নাম বলাটাও আমার উচিত হয়নি। এটা আমি ভুল করেছি। এ জন্য সাদিক ভাইও (সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ) আমার ওপর খুব ক্ষিপ্ত হয়েছেন।’
এদিকে মারধর ও জুতার মালা পরানোর অভিযোগ এনে নাজমুল হাসান ওরফে মঈন জমাদ্দার ও মো. সোহাগের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৪/৫ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন মনিরুজ্জামান খান বাচ্চু।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা ও পকেটে থাকা অর্থ নিয়ে যাওয়ার আমরা অভিযোগ পেয়েছি। মামলাটি এজাহারভুক্ত করা হয়েছে। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিজনেস আওয়ার/ ২৯ আগস্ট,২০২৩/এএইচএ