বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে বিশ্বনেতাদের খোলা চিঠি একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর অযাচিত হস্তক্ষেপ বলে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গত ২৮শে আগস্ট ২০২৩ তারিখে বেশ কয়েকজন নোবেল বিজয়ী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং সুশীল সমাজের সম্মানিত সদস্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে তারা বাংলাদেশের শ্রম আইনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান মামলা স্থগিত করার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানিয়েছেন। একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর এমন অযাচিত হস্তক্ষেপের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।’
বিশ্বনেতাদের এই চিঠিকে অনৈতিক, ‘বেআইনি ও অসাংবিধানিক দাবি করে বিবৃতি বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৪(৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণরূপে স্বাধীনভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করে থাকে। কাজেই এ ধরনের চিঠি প্রদানের মাধ্যমে তারা অনৈতিক, বেআইনি ও অসাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার ওপর হস্তক্ষেপ করেছেন বলে আমরা মনে করি। আরও উদ্বেগের সাথে লক্ষণীয় যে, চিঠিতে স্বাক্ষরকারী ব্যক্তিবর্গ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের স্বার্থরক্ষায় আগ্রহী হলেও শ্রমিকদের মানবাধিকার ও আইনি সুরক্ষার বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চুপ থেকেছেন। এ ধরনের বিবৃতি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং বাংলাদেশের আইনে শ্রমিকদের প্রদত্ত অধিকার সংক্রান্ত বিধানাবলীর সম্পূর্ণ পরিপন্থী।’
চিঠির মন্তব্য স্বাধীন সার্বভৌম একটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সরাসরি হস্তক্ষেপের শামিল উল্লেখ করে বলা হয়, ‘শ্রম আইন ২০০৬-এর ধারা ২৩৪ অনুযায়ী গ্রামীন টেলিকমের বিরুদ্ধে শ্রমিক কর্মচারি কল্যাণ তহবিল গঠন না করা এবং ধারা ৪(৭) ও ৪(৮) অনুযায়ী শ্রমিকদের চাকুরিতে স্থায়ী না করার অভিযোগ করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীগণই। অধিকন্তু অন্য একটি মামলায় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের জানা মতে খোলাচিঠিতে যে সকল সম্মানিত ব্যক্তিত্বের নাম রয়েছে, তাদের দেশেও শ্রমিকদের অধিকার ও রাষ্ট্রীয় বিধিবিধানকে সর্বোচ্চ সম্মান ও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। তাছাড়া একই চিঠিতে বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে যে ধরনের মন্তব্য করা হয়েছে, তা স্বাধীন সার্বভৌম একটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সরাসরি হস্তক্ষেপের শামিল।”
ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে উল্লেখ করে বলা হয়, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের জনগণ এ ধরনের অবমাননাকর, অযাচিত ও বেআইনি হস্তক্ষেপ কোনভাবেই মেনে নেবে না। এ-ধরনের বিবৃতির পেছনে গোপন কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা এবং শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়ে সম্মান প্রদর্শনের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’
বিজনেস আওয়ার/৩১ আগস্ট, ২০২৩/এএইচএ