বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: শরীয়তপুরে এক মণ দুধ দিয়ে গোসল করে হাসেম সরদার (৫৭) নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী বিএনপিতে যোগদান করেছেন। তিনি শরীয়তপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছিলেন।
শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) শহরের ধানুকা এলাকায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরদার একেএম নাসিরউদ্দিন কালুর বাসভবনের সামনে তিনি দুধ দিয়ে গোসল আওয়ামীলীগ ত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি।
এদিকে হাসেম সরদারের দুধ দিয়ে গোসলের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, হাসেম সরদার নিজেই মাথায় দুধ ঢেলে গোসল করছেন। কেউ কেউ আবার তার মাথায় দুধ ঢেলে দিচ্ছেন। দুধ দিয়ে গোসল করার সময় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে হাসেম সরদার বিএনপিতে যোগদানের ঘোষণা দেন।
হাসেম সরদার জানিয়েছেন, প্রথমে ১০ কেজি দুধ এনে গোসল শুরু করলে আমার শুভাকাঙ্ক্ষীরা আরও ৩০ কেজি দুধ এনে দিলে সেই দুধ দিয়ে গোসল করে বিএনপিতে যোগদান করেছেন।
হাসেম সরদার বলেন, আমার বাবা সাধনা ঔষধালয়ে চাকরি করতেন। তখন ১৯৭১ সাল, আমার বয়স তখন ৬-৭ বছর। ছোট্ট বয়সে বাবার কাছে বায়না ধরেছিলাম ৭ মার্চের ভাষণ শুনতে যাব। বাবা বলেছিল, মিছিলে যে মানুষ হয়, তাতে পিষ্ট হয়ে অনেকে মারা যায়। তোমাকে আমি রাখব কোথায়! তখন বাবাকে বলেছিলাম আমি ট্রাক থেকে নামব না। তখন থেকে আমি আওয়ামী লীগের প্রোগ্রামে যাই। দীর্ঘদিন প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ও ঢাকার সূত্রাপুরের নেতা নাছির ভাইয়ের সাথে রাজনীতি করেছি। সূত্রাপুর থানার ৮৩ নং ওয়ার্ড যুবলীগের নেতা ছিলাম। নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনের সাথে মিছিলে আমিও ছিলাম। তারপর গ্রামে আসার পর শরীয়তপুরের বর্তমান এমপি ইকবাল হোসেন অপুর সমর্থক হয়ে আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে কাজ করেছি।
অপু সাহেব এমপি হওয়ার আগে বলেছিলেন, দুর্দিনের কর্মীদের মূল্যায়ন করবেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। জীবনে ২১ বার জেল খেটেছি, ছয়টি বছর জেলে বন্দি ছিলাম আওয়ামী লীগ করার কারণে। আমাকে মূল্যায়ন করা হয়নি, পদ-পদবি দেওয়া হয়নি। মাটি কেটে খাই আমি। যে আওয়ামী লীগের জন্য এত কিছু করলাম সেই আওয়ামী লীগ আমাকে কিছুই দিলো না। রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে আমি আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করে দুধ দিয়ে গোসল করে বিএনপিতে যোগদান করেছি।
তিনি বলেন, সর্বশেষ আমাকে ধানুকার একটি ক্লাবে নিয়ে শরীয়তপুর পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ঘোষণা করা হয়েছে মৌখিকভাবে। লিখিত কোনো অনুমোদন নেই ওই কমিটির। ওই কমিটির সভাপতি প্রার্থী ছিলাম আমি। ওই কমিটির সভাপতি এখন আবদুল আজিজ বেপারী। যে দল ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও তৃণমূলকে মূল্যায়ন করতে জানে না, সেই দলকে প্রত্যাখ্যান করে দুধ দিয়ে ধুয়ে মুছে আমি বিএনপিতে যোগদান করেছি৷ জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুর রহমান কিরন ও সাধারণ সম্পাদক সরদার নাছির উদ্দীন কালু ধানের শীষ হাতে দিয়ে আমাকে বরণ করে নিয়ে যে সম্মান দেখিয়েছেন তা আমি আওয়ামী লীগে কোনো দিন পাইনি।
শরীয়তপুর পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল আজিজ বেপারী বলেন, হাসেম সরদার আওয়ামী লীগের কর্মী। তিনি দলের পদধারী কোনো নেতা নন। তিনি যে দাবি করেছেন ৭ নং ওয়ার্ডের সহ-সভাপতি তা মিথ্যা। আওয়ামী লীগের কর্মসূচি থাকলে এলাকার লোক হিসেবে তাকে ডেকে নিয়ে আওয়ামী লীগের মিছিল-মিটিংয়ে যেতাম আমি। উনি দুধ দিয়ে গোসল করে বিএনপিতে যোগদান করেছেন এটা সম্পূর্ণ উনার ব্যক্তিগত বিষয়। দুধ দিয়ে গোসল করে দল ছাড়ার সাথে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই।
হাসেম সরদারের বিএনপিতে যোগদানের বিষয়টি নিশ্চিত করে শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুর রহমান কিরন বলেন, আওয়ামী লীগের এক নেতা দুধ দিয়ে গোসল করে আওয়ামী লীগ ছেড়ে বিএনপিতে যোগদান করেছেন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে মাইকে ঘোষণা দিয়ে গতকাল তাকে আমরা বরণ করে নিয়েছি।
বিজনেস আওয়ার/২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩/এএইচএ