ঢাকা , শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘ইন্ডিয়ার’ নাম বদলের গুঞ্জন!

  • পোস্ট হয়েছে : ০৫:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • 56

বিজনেস আওয়ার ডেস্ক : ভারতের সংবিধানে বর্তমানে ইন্ডিয়া ও ভারত দুটি নামই উল্লেখ থাকলেও দেশটির বর্তমান ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার ‘ইন্ডিয়া’ নামটি আবারও বাদ দিতে চাওয়ার গুঞ্জন উঠেছে। হঠাৎ জি-২০ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিশ্বনেতাদের নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্রে দেশটির নাম শুধু ভারত হিসেবে উল্লেখ করায় বিষয়টি নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে।

বুধবার (৫ সেপ্টেম্বর) সংবাদমাধ্যম টাইমস নাওয়ের বরাতে বলা হয়, আগামী ১৮ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশনে দেশের নাম পরিবর্তনের বিষয়ে একটি রেজুলেশন আনতে পারে নরেন্দ্র মোদির সরকার। ওই রেজুলেশনে দেশটির নাম আনুষ্ঠানিকভাবে শুধু ভারত করা হতে পারে।

মঙ্গলবার জি২০ শীর্ষ বৈঠকে অংশ নেওয়া বিদেশি রাষ্ট্রনেতাদের কাছে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্র প্রকাশ্যে আসার পরেই জল্পনা শুরু হয়, লোকসভা ভোটের আগে দেশের নাম শুধুই ‘ভারত’ করতে চলেছে মোদি সরকার। এ সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনী বিল পাসের জন্যই আগামী ১৮-২২ ডিসেম্বর সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছে বলেও জল্পনার দানা বেঁধেছে।

সংবাদমাধ্যম টাইমস নাও জানায়, আসন্ন জি-২০ সম্মেলনে অংশ নেওয়া বিশ্ব নেতাদের নৈশভোজে অংশ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছে আয়োজক দেশটির কর্মকর্তারা। ওই নিমন্ত্রণপত্রে ‘প্রেসিডেন্ট অব ভারতের’ পক্ষে নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এ ধরনের নিমন্ত্রণপত্রে আগে ‘প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়া’ লেখা হতো।

বিজেপি নেতা সম্বিত পাত্র মঙ্গলবার তার এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) প্রধানমন্ত্রী মোদির আসন্ন ইন্দোনেশিয়া সফরের ঘোষণাসংক্রান্ত একটি সরকারি নথি প্রকাশ করেছেন। সেখানে মোদির পদ লেখা হয়েছে, ‘প্রাইম মিনিস্টার অফ ভারত’। যদিও সরকারি প্রথা অনুযায়ী তার পদটিকে ‘প্রাইম মিনিস্টার অফ ইন্ডিয়া’ লেখা হয়।

এ বিষয়ে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রামেশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) লেখেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে ইন্ডিয়ার নাম পরিবর্তনের খবরটি সত্যি হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে ৯ সেপ্টেম্বরের নৈশভোজে আমন্ত্রিত অতিথিদের নিমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়, যেখানে প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়ার পরিবর্তে প্রেসিডেন্ট অব ভারত লেখা হয়েছে। সংবিধানের এক নম্বর আর্টিকেল অনুযায়ী, ‘ইন্ডিয়া, যা হলো ভারত, রাজ্যগুলোর একটি ইউনিয়ন।’ এর মাধ্যমে ক্ষমতাসীনরা ইউনিয়ন অব স্টেটকে অসম্মানিত করছে।’

এদিকে, দেশটির আনুষ্ঠানিক নাম পরিবর্তনের পক্ষে সরব হচ্ছেন ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতারা। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমান্ত বিশ্ব শর্মা মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) দেশের নাম শুধু ‘ভারত’ করার পক্ষে যুক্ত তুলে ধরেন। এক্সে এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘রিপাবলিক অব ভারত, আমাদের লোকেরা সাহসিকতার সঙ্গে অমৃতকালের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে জেনে আমি খুশি ও গর্বিত।’

কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী রাজীবচন্দ্র শেখর বলেন, ‘আমাদের দেশের নাম ভারত, এ নিয়ে কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই। কংগ্রেস সবকিছুতেই সমস্যা দেখে।’

ভারতের প্রধান হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএসের প্রধান রাজীব শেখর আরও বলেন, ‘যুগ যুগ থেকেই এই দেশের নাম ভারত। আমাদের সে দিকেই যেতে হবে। ভাষা যাই হোক না কেন, নাম একই থাকে।’

বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে কথা বলেছিলেন বিজেপির আইনপ্রণেতা নারেশ বানসাল। অধিবেশনে নাম পরিবর্তনের প্রস্তাবটি তুলে ধরে তিনি বলেছিলেন, ‘ইন্ডিয়া নামটি ঔপনেবেশিক দাসত্বের প্রতীক। সংবিধান থেকে নামটি মুছে ফেলা উচিত।’

রাজ্যসভায় এই আইনপ্রণেতার বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে দেশটির সংবাদ সংস্থা এএনআই জানায়, ‘ব্রিটিশরা ভারতের নাম পরিবর্তন করে ইন্ডিয়া রেখেছিল। সংবিধানের এক নম্বর আর্টিকেল অনুযায়ী, ভারতই হলো ইন্ডিয়া। শতাধিক বছর থেকে আমাদের দেশকে মানুষ ভারত নামে জানে। এটি এই দেশের প্রাচীনতম নাম, যা প্রাচীন সংস্কৃত গ্রন্থে পাওয়া যায়। ইন্ডিয়া নামটি দিয়েছিল ঔপনিবেশিক ব্রিটিশরা। এটি দাসত্বের একটি উদাহরণ। সংবিধান থেকে ইন্ডিয়া নামটি মুছে ফেলা উচিত।’

বিজনেস আওয়ার/ ০৬ সেপ্টেম্বর,২০২৩/এসএস

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

‘ইন্ডিয়ার’ নাম বদলের গুঞ্জন!

পোস্ট হয়েছে : ০৫:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বিজনেস আওয়ার ডেস্ক : ভারতের সংবিধানে বর্তমানে ইন্ডিয়া ও ভারত দুটি নামই উল্লেখ থাকলেও দেশটির বর্তমান ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার ‘ইন্ডিয়া’ নামটি আবারও বাদ দিতে চাওয়ার গুঞ্জন উঠেছে। হঠাৎ জি-২০ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিশ্বনেতাদের নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্রে দেশটির নাম শুধু ভারত হিসেবে উল্লেখ করায় বিষয়টি নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে।

বুধবার (৫ সেপ্টেম্বর) সংবাদমাধ্যম টাইমস নাওয়ের বরাতে বলা হয়, আগামী ১৮ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশনে দেশের নাম পরিবর্তনের বিষয়ে একটি রেজুলেশন আনতে পারে নরেন্দ্র মোদির সরকার। ওই রেজুলেশনে দেশটির নাম আনুষ্ঠানিকভাবে শুধু ভারত করা হতে পারে।

মঙ্গলবার জি২০ শীর্ষ বৈঠকে অংশ নেওয়া বিদেশি রাষ্ট্রনেতাদের কাছে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্র প্রকাশ্যে আসার পরেই জল্পনা শুরু হয়, লোকসভা ভোটের আগে দেশের নাম শুধুই ‘ভারত’ করতে চলেছে মোদি সরকার। এ সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনী বিল পাসের জন্যই আগামী ১৮-২২ ডিসেম্বর সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছে বলেও জল্পনার দানা বেঁধেছে।

সংবাদমাধ্যম টাইমস নাও জানায়, আসন্ন জি-২০ সম্মেলনে অংশ নেওয়া বিশ্ব নেতাদের নৈশভোজে অংশ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছে আয়োজক দেশটির কর্মকর্তারা। ওই নিমন্ত্রণপত্রে ‘প্রেসিডেন্ট অব ভারতের’ পক্ষে নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এ ধরনের নিমন্ত্রণপত্রে আগে ‘প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়া’ লেখা হতো।

বিজেপি নেতা সম্বিত পাত্র মঙ্গলবার তার এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) প্রধানমন্ত্রী মোদির আসন্ন ইন্দোনেশিয়া সফরের ঘোষণাসংক্রান্ত একটি সরকারি নথি প্রকাশ করেছেন। সেখানে মোদির পদ লেখা হয়েছে, ‘প্রাইম মিনিস্টার অফ ভারত’। যদিও সরকারি প্রথা অনুযায়ী তার পদটিকে ‘প্রাইম মিনিস্টার অফ ইন্ডিয়া’ লেখা হয়।

এ বিষয়ে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রামেশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) লেখেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে ইন্ডিয়ার নাম পরিবর্তনের খবরটি সত্যি হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে ৯ সেপ্টেম্বরের নৈশভোজে আমন্ত্রিত অতিথিদের নিমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়, যেখানে প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়ার পরিবর্তে প্রেসিডেন্ট অব ভারত লেখা হয়েছে। সংবিধানের এক নম্বর আর্টিকেল অনুযায়ী, ‘ইন্ডিয়া, যা হলো ভারত, রাজ্যগুলোর একটি ইউনিয়ন।’ এর মাধ্যমে ক্ষমতাসীনরা ইউনিয়ন অব স্টেটকে অসম্মানিত করছে।’

এদিকে, দেশটির আনুষ্ঠানিক নাম পরিবর্তনের পক্ষে সরব হচ্ছেন ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতারা। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমান্ত বিশ্ব শর্মা মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) দেশের নাম শুধু ‘ভারত’ করার পক্ষে যুক্ত তুলে ধরেন। এক্সে এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘রিপাবলিক অব ভারত, আমাদের লোকেরা সাহসিকতার সঙ্গে অমৃতকালের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে জেনে আমি খুশি ও গর্বিত।’

কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী রাজীবচন্দ্র শেখর বলেন, ‘আমাদের দেশের নাম ভারত, এ নিয়ে কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই। কংগ্রেস সবকিছুতেই সমস্যা দেখে।’

ভারতের প্রধান হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএসের প্রধান রাজীব শেখর আরও বলেন, ‘যুগ যুগ থেকেই এই দেশের নাম ভারত। আমাদের সে দিকেই যেতে হবে। ভাষা যাই হোক না কেন, নাম একই থাকে।’

বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে কথা বলেছিলেন বিজেপির আইনপ্রণেতা নারেশ বানসাল। অধিবেশনে নাম পরিবর্তনের প্রস্তাবটি তুলে ধরে তিনি বলেছিলেন, ‘ইন্ডিয়া নামটি ঔপনেবেশিক দাসত্বের প্রতীক। সংবিধান থেকে নামটি মুছে ফেলা উচিত।’

রাজ্যসভায় এই আইনপ্রণেতার বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে দেশটির সংবাদ সংস্থা এএনআই জানায়, ‘ব্রিটিশরা ভারতের নাম পরিবর্তন করে ইন্ডিয়া রেখেছিল। সংবিধানের এক নম্বর আর্টিকেল অনুযায়ী, ভারতই হলো ইন্ডিয়া। শতাধিক বছর থেকে আমাদের দেশকে মানুষ ভারত নামে জানে। এটি এই দেশের প্রাচীনতম নাম, যা প্রাচীন সংস্কৃত গ্রন্থে পাওয়া যায়। ইন্ডিয়া নামটি দিয়েছিল ঔপনিবেশিক ব্রিটিশরা। এটি দাসত্বের একটি উদাহরণ। সংবিধান থেকে ইন্ডিয়া নামটি মুছে ফেলা উচিত।’

বিজনেস আওয়ার/ ০৬ সেপ্টেম্বর,২০২৩/এসএস

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: