বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: চট্টগ্রামের রাউজানে অপহরণের ১৪ দিন পর পাহাড়ের গর্তে মিলল শিবলী সাদিক হৃদয় (১৯) নামে কলেজছাত্রের খণ্ড-বিখণ্ড দেহ। আর লাশ উদ্ধার করে আনার সময় বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের পিকআপ ভাংচুর করে অপহরণকারী উমচিং মারমাকে (২৬) ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলে।
পরে রাউজান থানার ওসিসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় পুলিশের উপপরিদর্শক শাহাদাত হোসেন, কিশোর ও আজিজ আহত হন।
সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার সময় রাউজানের কদলপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের আশরাফ শাহ মাজার রোডে এ ঘটনা ঘটে।
এর আগে রোববার ভোর ৫টার দিকে রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ তিন অপহরণকারীকে গ্রেফতার করে। তাদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক সোমবার ভোরে পাহাড়ের গর্ত থেকে কলেজছাত্র সাদিকের খণ্ড-বিখণ্ড লাশ উদ্ধার করা হয়।
গণপিটুনিতে নিহত উমংচিং মারমা (২৬) রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালীর বেতবুনিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পূর্ব ভঙ্গিপাড়ার উথোয়াইমং মারমার ছেলে। এ ঘটনায় আটক অংথুইমং মারমা (২৪) একই এলাকার সাপমারাপাড়া গ্রামের আপ্রুমা মারমার ছেলে ও আটক অন্যজন সুইচিংমং মারমাও (২৪) একই জেলার কাপ্তাই থানার মিতিঙ্গাছড়ি গ্রামের সাচিং মারমার ছেলে।
জানা যায়, অপহরণকারীরা রাউজানের অপহরণকারীর একটি খামারে চাকরি করতেন। সেখানে ম্যানেজারের দায়িত্বে ছিল শিবলী সাদিক হৃদয়। এ সময় কাজ নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছিল। এ ঘটনার জের ধরে ২৭ আগস্ট অপহরণ হয় শিবলী সাদিক। অপহরণের দুই দিন পর অপহরণকারীরা মায়ের মোবাইলে ফোন করে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে সাড়া না পেয়ে গত ৩১ আগস্ট আবার ফোন করে দুই লাখ টাকা চায়। পরদিন ১ সেপ্টেম্বর শিবলীর বাবা দুই লাখ টাকা নিয়ে বান্দরবান জেলা সদরের পূর্বনির্ধারিত জায়গায় গিয়ে দুজন লোকের হাতে টাকা তুলে দেন। তাদের বলা হয় ছেলেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
ঘটনার ১৪ দিন পর রোববার ভোরে অপহরণকারীদের আটক করতে সক্ষম হয় রাউজান থানা পুলিশ। এতে সোমবার ভোরে তাদের নিয়ে লাশ আনতে যায়। সেখানে আসার পথে অপহরণস্থল রাউজানের কদলপুর ইউনিয়নের পঞ্চপাড়ার মুরগি খামার এলাকায় আশরাফ শাহ মাজার সড়কে বড় বড় গাছ দিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনি দেন বিক্ষুব্ধ লোকজন। সেখান থেকে উমংচিং মারমাকে উদ্ধার করে রাউজান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
জানা গেছে, অপহরণকারীকে ছিনিয়ে নিতে শত শত নারী পুরুষ-ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন।
শিবলী সাদিক হৃদয় কদলপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল। তার বাবা মুহাম্মদ শফি পরিবহণ ব্যবসায়ী।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন, রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির।
এ বিষয়ে রাউজান থানার ওসি আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, আসামিদের স্বীকারোক্তিতে আমরা লাশ উদ্ধারের পর ফেরার পথে উত্তেজিত জনতা পুলিশের গাড়ি গতিরোধ করে আসামিকে ছিনিয়ে নেন। পরে গণপিটুনিতে মূল আসামি মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে বলে তিনি জানান।
বিজনেস আওয়ার/১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩/এএইচএ