বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিন আজ। ১৯৪৭ সালের (২৮ সেপ্টেম্বর) গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গবমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনা।
শৈশব কৈশোর কেটেছে বাইগার নদীর তীরে টুঙ্গীপাড়ায় বাঙালির চিরায়ত গ্রামীণ পরিবেশে, দাদা-দাদির কোলে-পিঠে। পিতা শেখ মুজিবুর রহমান তখন জেলে বন্দি, রাজরোষ আর জেল-জুলুম ছিল তাঁর নিত্য সহচর। রাজনৈতিক আন্দোলন এবং রাজনীতি নিয়েই শেখ মুজিবুর রহমানের দিন-রাত্রি, যাপিত জীবন। বাঙালির মুক্তি আন্দোলনে ব্যস্ত পিতার দেখা পেতেন কদাচিৎ।
পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে শেখ হাসিনা ছিলেন জ্যেষ্ঠ সন্তান। তার কনিষ্ঠ ভাই-বোন হলেন- শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা এবং শেখ রাসেল। শেখ হাসিনা গ্রামবাংলার ধূলোমাটি আর সাধারণ মানুষের সাথেই বেড়ে উঠেছেন। গ্রামের সাথে তাই তাঁর নিবিড় সম্পর্ক।
শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৬ সালে শেখ হাসিনা ভর্তি হন টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে। শেখ হাসিনা ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন ঢাকার বকশী বাজারের ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে।
ওই সময় তিনি কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সভানেত্রী (ভিপি) পদে নির্বাচিত হন। একই বছর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করার কল্যাণে কিশোর বয়স থেকেই স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন শেখ হাসিনা।
১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের কিছুদিন পর শুরু হয় বাঙালি জাতির ১১-দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান। শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেত্রী হিসেবে তাতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।
১৯৭১ সালে গৃহবন্দি থাকা অবস্থাতেই ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই শেখ হাসিনার প্রথম সস্তান সজীব ওয়াজেদ জয় জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে তিনি মুক্ত হন। ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর তিনি জন্ম দেন একমাত্র কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে।
১৯৭৩ সালে শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকের নির্মম বুলেট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করলে আর দেশে ফিরতে পারেননি দুই বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। ১৯৮১ সালে ঢাকার ইডেন হোটেলে আওয়ামী লীগের এক ঐতিহাসিক কাউন্সিলে তার অনুপস্থিতিতেই তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।
সেই ডাকে সাড়া দিয়ে তৎকালীন সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এরপর দীর্ঘ ২১ বছর ধরে সামরিক জান্তা, স্বৈরশাসন ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম আন্দোলন করে দিকহারা আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জন্য বিজয় ছিনিয়ে আনেন।
এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তিনি। ২০০৪ সালে ২১ শে আগস্ট তদানীন্তন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মদদে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে চালানো হয় পরিকল্পিত নারকীয় গ্রেনেড হামলা। ওই হামলার প্রধান লক্ষ্য ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা। নেতাকর্মীরা মানবঢাল তৈরি করলে সেদিন প্রাণে বেঁচে যান তিনি।
এরপর ধীরে ধীরে বিএনপি-জামায়াত জোটের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজপথে রুখে দাঁড়ান শেখ হাসিনা। বাংলার আপামর মানুষ তার আহ্বানে রাজপথে নেমে আসে। শুরু হয় নির্বাচনে ষড়যন্ত্রের প্রস্তুতি। শেখ হাসিনা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলে শুরু হয় গণআন্দোলন। বাতিল হয় পাতানো নির্বাচন। প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন ইয়াজউদ্দিন।
আসে জরুরি অবস্থার ঘোষণা। ফখরুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত হয় নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এরপর আবার নতুন ষড়যন্ত্র। ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবরা শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে হাজির করেন ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকারি নিষেধাজ্ঞা, ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে ২০০৭ সালের ৭ মে ফিরে আসেন দেশে। এ
রপর মাত্র দু’মাস পর ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই নিজ বাসভবন সুধাসদন থেকে শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়। জাতীয় সংসদ এলাকায় একটি অস্থায়ী কারাগারে তাকে বন্দি করে রাখা হয়। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় একের পর এক ষড়ন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা। এমনকি কারাগারেও তার জীবননাশের ষড়যন্ত্র চলে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।
দেশে আওয়াজ ওঠে শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে কোনো নির্বাচন নয়। তাই রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয় সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এককভাবে আওয়ামী লীগই লাভ করে তিন-চতুর্থাংশের বেশি আসন। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন মহাজোট নেত্রী শেখ হাসিনা।
এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।
এক বর্ণাঢ্য সংগ্রামমুখর জীবন শেখ হাসিনার। তার এই কর্মময় জীবন কুসমাস্তীর্ণ ছিল না, ছিল কণ্টকপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস ছিলেন গৃহবন্দি। সামরিক স্বৈরশাসনামলেও বেশ কয়েকবার তাকে কারানির্যাতন ভোগ ও গৃহবন্দি থাকতে হয়েছে। বার বার তার জীবনের ওপর ঝুঁকি এসেছে। অন্তত ২১ বার তাকে হত্যার অপচেষ্টা করা হয়েছে।
জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তিনি অসীম সাহসে লক্ষ্য অর্জনে থেকেছেন অবিচল। একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তার অবদান আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ’৭৫ পরবর্তী বাঙালি জাতির যা কিছু মহৎ অর্জন, তা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই অর্জিত হয়েছে।
বিভিন্ন খাতে অবদানের জন্য এর আগেও বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সম্মানসূচক ডিগ্রি, পদক ও স্বীকৃতি দিয়ে শেখ হাসিনাকে সম্মানিত করা হয়েছে। নিখাদ দেশপ্রেম, দূরদর্শিতা, দৃঢ় মানসিকতা ও মানবিক গুণাবলী তাকে আসীন করেছে বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে। তিনিই আজ বাঙালির জাতীয় ঐক্য প্রতীক এবং আশা-ভরসার নিরাপদ আশ্রয়স্থল।
এবারও তার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালন করবে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সোমবার বিকাল সাড়ে তিনটায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সীমিত সংখ্যক নেতার অংশগ্রহণে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়াও ২৮ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে বাদ জোহর এবং দেশের সকল মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। একইদিনে ঢাকাসহ সারাদেশে সকল সহযোগী সংগঠন আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল, বিশেষ প্রার্থণা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীসহ সব কর্মসূচি যথাযথ স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে পালন করবে।
বিজনেস আওয়ার/২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০/এ