বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দলগুলোর সঙ্গে আর কোনো বৈঠক বা সংলাপের আয়োজন করার আপাতত কোনো পরিকল্পনা নেই নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। তবে অন্যদের সঙ্গে অনুষ্ঠেয় বৈঠকের বক্তব্য প্রজেক্টরের মাধ্যমে দলগুলোকে শোনাবে সংস্থাটি।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছে প্রতিটি দলের একজন করে প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
ইসির জনসংযোগ শাখার পরিচালক মো. শরিফুল আলম নির্দেশনাটি পাঠিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন ‘অবাধ ভোটাধিকার, প্রার্থী ও পোলিং এজেন্টদের ভূমিকা’ বিষয়ে এক দিনের একটি কর্মশালা আয়োজনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।
কর্মশালাটি আগামী ৪ অক্টোবর (বুধবার) বেলা ১১টায় নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে (কক্ষ নং-৫২০) অনুষ্ঠিত হবে।
এ কর্মশালাটি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ফেসবুক পেজে সরাসরি সম্প্রচার এবং জুম অ্যাপের মাধ্যমে সকল আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সংযুক্ত করা হবে।
অনুষ্ঠানটি জেলা নির্বাচন অফিসের সম্মেলন কক্ষে প্রজেক্টরের মাধ্যমে সম্প্রচার এবং সংশ্লিষ্ট জেলায় বিদ্যমান নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহের একজন করে প্রতিনিধি উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছে কমিশন।
জানা গেছে, এ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার জন্য আনুমানিক ৫০ জন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের স্ন্যাকস বাবদ জনপ্রতি ৪০ টাকা করে দুই হাজার টাকা ও আনুষঙ্গিক ব্যয় বাবদ এক হাজার টাকা, মোট তিন হাজার টাকা নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের বাজেট ও ফাইন্যান্স শাখা হতে বরাদ্দ প্রদান করা হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশিত হয়ে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করা হয়েছে।
কর্মশালায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), নির্বাচন কমিশনার (ইসি), সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা অংশ নেবেন।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান বলেছেন, বৈঠকের আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে—নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপি রোধে প্রার্থীর পক্ষে পোলিং এজেন্টের ভূমিকা কী হতে পারে, পোলিং এজেন্ট তার প্রার্থীর পক্ষে আইন ও বিধি অনুযায়ী কীভাবে দায়িত্ব পালন করে পোলিংকে স্বচ্ছতার রূপ দিয়ে নির্বাচন কীভাবে প্রভাবমুক্ত রাখতে পারেন, নির্বাচনের ফলাফলে জনমতের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটিয়ে কীভাবে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করিয়ে আনতে পারেন, প্রার্থী কী ধরনের পোলিং এজেন্ট নিয়োগ করবেন এবং কীভাবে তাকে দায়বদ্ধ করবেন।
মো. আহসান হাবিব খান বলেন, ভোট ভালো হলো, কি খারাপ হলো এই দায়ভারটা নির্বাচন কমিশনের ওপর বর্তায়। কিন্তু আসলে কি তাই? নির্বাচন হচ্ছে একটি টিম ওয়ার্ক। যে টিমের মধ্যে অনেকেই আছেন। তার মধ্যে রাজনৈতিক দল, প্রার্থী, ভোটার, পোলিং এজেন্ট, প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার আছেন। নির্বাচনে সবারই দায়িত্ব থাকে।
তিনি বলেন, প্রার্থীর প্রতিনিধি হিসেবে একজন পোলিং এজেন্ট থাকেন। পোলিং এজেন্ট যদি সেখানে সঠিকভাবে দায়িত্বপালন করেন, তাহলে কি সেখানে কোনো অনিয়ম হতে পারে?
সবাই যদি সহযোগিতা করে তাহলে কিন্তু একটি অবাধ, স্বচ্ছ নির্বাচন করা সম্ভব বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
কর্মশালায় আলোচক হিসেবে সাবেক সিইসি ড. এটিএম শামছুল হুদা, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ ও বেগম কবিতা খানমের থাকার কথা রয়েছে।
ইসির সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী, যুগ্মসচিব মো. নুরুজ্জামান তালুকদার ও খোন্দকার মিজানুর রহমান। জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আমাদের নতুন সময়ের সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান, গ্লোবাল টিভির সম্পাদক ইসতিয়াক রেজা ও একুশে টেলিভিশনের সিইও পীযুশ বন্দোপাধ্যায়।
এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক হারুন অর রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রফেসর ড. এস এম শামীম রেজাও আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
১৩ সেপ্টেম্বর সুধীজনদের নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রত্যাশা ও বাস্তবতা শীর্ষক কর্মশালার আয়োজন করেছিল ইসি।
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলগুলোর সঙ্গে কোনো সংলাপ করার আপাতত কোনো চিন্তা নেই বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর।
রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী নভেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল দিয়ে ডিসেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করবে ইসি।
বিজনেস আওয়ার/২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩/এএইচএ