বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: দেশের শিল্প খাতে বিশেষ অবদান রাখায় ৬ ক্যাটাগরিতে ১২টি প্রতিষ্ঠানকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প পুরস্কার দেবে সরকার। আগামী ৩ অক্টোবর (মঙ্গলবার) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার তুলে দেবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
রোববার (১ অক্টোবর) শিল্প মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। ২০২২ সালের জন্য বৃহৎ, মাঝারি, ক্ষুদ্র, মাইক্রো, কুটির ও হাই-টেক শিল্প ক্যাটাগরিতে ১২টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দেওয়া হবে। এর আগে গত ৬ আগস্ট নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম প্রকাশ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিল্প মন্ত্রণালয়।
শিল্প মন্ত্রণালয় জানায়, ৩ অক্টোবর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি পুরস্কারের জন্য নির্বাচিতদের হাতে স্বর্ণখচিত ক্রেস্ট, টাকা ও সম্মাননাপত্র তুলে দেবেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট মো. মাহবুবুল আলম। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করবেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এবং স্বাগত বক্তব্য রাখবেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে এবং শিল্প উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানকে শিল্পখাতের অবদানের স্বীকৃতি প্রদান, প্রণোদনা সৃষ্টি ও সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দ্বিতীয়বারের মতো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। শিল্পসমৃদ্ধ উন্নত দেশ বিনির্মাণের জন্য বেসরকারি খাতে শিল্প স্থাপন, রপ্তানি ও আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদন করে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে ভূমিকা রাখাসহ দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বেসরকারি খাতের অবদানকে স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এ পুরস্কার দেওয়ার অন্যতম লক্ষ্য হলো বঙ্গবন্ধুর শিল্প পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশে শিল্পায়নের যে সূচনা হয়েছিল সে অবদানকে স্মরণীয় ও বরণীয় করা এবং বাংলাদেশের শিল্পায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে শিল্পায়নের ক্রমবিকাশকে টেকসই করা।
পাশাপাশি বেসরকারি খাতে পরিবেশবান্ধব শিল্প স্থাপন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বিনিয়োগ উৎসাহিত করাসহ পণ্য বহুমুখীকরণ, আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদন ও সৃজনশীলতাকে উৎসাহিতকরণের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা অনুযায়ী প্রযুক্তি নির্ভর ও মানসম্মত পণ্য উৎপাদন করে দেশীয় চাহিদা পূরণ করে রপ্তানি বৃদ্ধি করার জন্য উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নামে এই পুরস্কার প্রবর্তন দেশে শিল্পায়নের অভিযাত্রায় আরও সৃজনশীল উদ্যোক্তা তৈরি ও বিকাশে সহায়ক হবে।
শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বার্ষিক টার্নওভার, আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদন, স্থানীয় কাঁচামাল ব্যবহার, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, সামাজিক দায়িত্ব পালন, নিষ্কণ্টক ভূমি ও ভূমির পরিকল্পিত ও দক্ষ ব্যবহার, পরিবেশ সংরক্ষণ প্রভৃতি ক্ষেত্রের অবদান বিবেচনা করা হয়েছে। পুরস্কারের জন্য শিল্প উদ্যোক্তা/শিল্পপ্রতিষ্ঠান মনোনয়নে কয়েকটি নির্দিষ্ট যোগ্যতা ও শর্ত পূরণ আবশ্যক। এর মধ্যে শিল্প উদ্যোক্তা/শিল্প প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে স্থাপিত হতে হবে। শিল্প ক্ষেত্রে আবেদনকারীর শিল্পপতি ও উদ্যোক্তার সামগ্রিক অবদান সন্তোষজনক হতে হবে ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা পূরণ বা আমদানি বিকল্প বা রপ্তানিমুখী পণ্য উৎপাদন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কার্যকর অবদান রাখতে হবে।
এছাড়া, নিয়মিত কর পরিশোধ করতে হবে। কোনো ফৌজদারি অপরাধের জন্য কোনো ট্রাইব্যুনাল বা আদালত কর্তৃক ৬ মাস বা ততোধিক সময়ের জন্য কোনো উদ্যোক্তা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিককে দণ্ডিত করলে এবং দণ্ডভোগের পর ন্যূনতম ২ বছর সময় অতিক্রান্ত না হলে কিংবা তার বিরুদ্ধে কোনো ট্রাইব্যুনাল বা আদালতে উক্তরূপ কোনো মামলা চলমান থাকলে, সেই শিল্প প্রতিষ্ঠান মনোনয়নের জন্য বিবেচনা করা হয়নি।
ঋণ খেলাপি, সরকারি বিল খেলাপি, কর খেলাপি, অর্থ পাচারকারী, সরকারি জায়গায় অবৈধ দখলদার ও পরিবেশ দূষণকারী শিল্প উদ্যোক্তা/শিল্প প্রতিষ্ঠানও এই সম্মানজনক পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হয় না। উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে কোনো প্রতিষ্ঠান একবার পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হলে, একই ক্যাটাগরিতে পরবর্তী তিন বছরের জন্য তার আবেদন বিবেচনা করা হয় না।
শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্বাচিত ১২টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বৃহৎ শিল্প ক্যাটাগরিতে ৩টি, মাঝারি শিল্প ক্যাটাগরিতে ২টি, ক্ষুদ্র শিল্প ক্যাটাগরিতে ৩টি, মাইক্রো শিল্প ক্যাটাগরিতে একটি, কুটির শিল্প ক্যাটাগরিতে একটি এবং হাইটেক শিল্প ক্যাটাগরিতে দুটি। এই বছর হস্ত ও কারু শিল্প ক্যাটাগরিতে কোনো প্রতিষ্ঠান মনোনীত হয়নি।
বৃহৎ শিল্প ক্যাটাগরিতে ১ম হয়েছে রানার অটোমোবাইলস লি., ২য় হয়েছে জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিক্স লি., ৩য় হয়েছে বিএসআরএম স্টিলস্ লি.। মাঝারি শিল্প ক্যাটাগরিতে ১ম হয়েছে নিতা কোম্পানি লি. এবং ২য় হয়েছে নোমান টেরি টাওয়াল মিলস্ লি., ক্ষুদ্র শিল্প ক্যাটাগরিতে ১ম হয়েছে হযরত আমানত শাহ স্পিনিং মিলস্ লি., ২য় হয়েছে বসুমতী ডিস্ট্রিবিউশন লি. এবং ৩য় হয়েছে টেকনো মিডিয়া লি.। মাইক্রো শিল্প ক্যাটাগরিতে শুধু ১টি প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হয়েছে, গ্রিন জেনেসিস ইঞ্জিনিয়ারিং লি.। কুটিরশিল্প ক্যাটাগরিতে শুধু ১টি প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হয়েছে সামসুন্নাহার টেক্সটাইল মিলস্ এবং হাইটেক শিল্প ক্যাটাগরিতে ১ম হয়েছে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লি. এবং ২য় হয়েছে সুপার স্টার ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যাক্সেসরিজ লি.।
১ম পুরস্কার হিসেবে প্রত্যেককে ৩ লাখ টাকা ও ২৫ গ্রাম স্বর্ণখচিত ক্রেস্ট, ২য় পুরস্কার হিসেবে প্রত্যেককে ২ লাখ টাকা ও ২০ গ্রাম স্বর্ণখচিত ক্রেস্ট এবং ৩য় পুরস্কার হিসেবে প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা ও ১৫ গ্রাম স্বর্ণখচিত ক্রেস্ট দেওয়া হচ্ছে। স্বর্ণের ক্রেস্টগুলো ১৮ ক্যারেট মানের স্বর্ণ দ্বারা নির্মিত। এছাড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত সবাইকে সম্মাননাপত্র দেওয়া হবে।
বিজনেস আওয়ার/০১ অক্টোবর, ২০২৩/এএইচএ