স্পোর্টস ডেস্ক: ক্রিকেটের বৈশ্বিক আসরে বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণ হয় ১৯৯৯ সালে। এরপর থেকে আয়োজিত প্রতিটি ওয়ানডে বিশ্বকাপেই খেলেছে টাইগাররা। আইসিসির মেগা এই ইভেন্টে আনন্দ-বেদনার অনেক ঘটনার সাক্ষী এদেশের ক্রিকেটাররা। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪টি করে বিশ্বকাপ খেলেছেন সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মাশরাফী বিন মোর্তজা।
এবার ভারত বিশ্বকাপে নেই তামিম ও মাশরাফী, তবে বাকি ৩ অভিজ্ঞ টাইগার ক্রিকেটার খেলবেন তাদের পঞ্চম বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপের দীর্ঘ এই সফরে বাংলাদেশের পক্ষে বেশিরভাগ রেকর্ড দখলে রেখেছেন সাকিব। সেরা পারফর্মারের তালিকায় আর কারা আছেন, বাংলাদেশের বিশ্বকাপ শুরুর আগে তা দেখে নেওয়া যাক:-
(১) সর্বোচ্চ ম্যাচ : বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ২৯টি করে ম্যাচ খেলেছেন সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও তামিম ইকবাল। এই তিন ক্রিকেটারই খেলেছেন চারটি বিশ্বকাপে। তবে এবার পঞ্চম বিশ্বকাপে সাকিব-মুশফিক থাকলেও নেই মতো তামিম। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৪টি ম্যাচ খেলেছেন মাশরাফী বিন মোর্তজা। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মোহাম্মদ রফিক খেলেছেন ১৭টি করে ম্যাচ। এ ছাড়া মোহাম্মদ আশরাফুল ১৬টি ও আব্দুর রাজ্জাক বিশ্বকাপে ১৫টি ম্যাচ খেলেছেন।
(২) সর্বোচ্চ রান : বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের মালিক সাকিব আল হাসান। অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার বিশ্বমঞ্চে ২৯ ম্যাচে ২টি সেঞ্চুরি ও ১০টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৪৫.৮৪ গড়ে ১ হাজার ১৪৬ রান করেছেন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা মুশফিকুর রহিম সমান ম্যাচে একটি সেঞ্চুরি ও ৬টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৩৮.১৩ গড়ে ৮৭৭ রানের মালিক। ২৯ ম্যাচে ৪টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ২৪.৭৫ গড়ে ৭১৮ রান নিয়ে তিন নম্বরে তামিম ইকবাল। ১৭ ম্যাচে ২টি করে সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরিসহ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ৫১.৩৩ গড়ে ৬১৬ রান করা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ চার নম্বরে। ১৪ ম্যাচে একটি হাফ সেঞ্চুরিসহ ২৪.৩৫ গড়ে ৩৪১ রান করা সৌম্য সরকার পাঁচ নম্বরে।
(৩) সর্বোচ্চ রানের ইনিংস : বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ২০১৫ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যামিল্টনে ১২৩ বলে ১২টি চার ও ৩টি ছক্কায় অপরাজিত ১২৮ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। পরের দুটি সর্বোচ্চ রানের ইনিংস সাকিব আল হাসানের। ২০১৯ বিশ্বকাপে টনটনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১২৪* ও কার্ডিফে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১২১ রান করেন। তৃতীয় সর্বোচ্চ ইনিংসটি মুশফিকুর রহিমের। ২০১৯ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নটিংহ্যামে ১০২ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন তিনি। তামিম ইকবাল ৯৫ ও লিটন কুমার দাস ৯৪ রান করে চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে আছেন।
(৪) সর্বোচ্চ সেঞ্চুরি : ১৯৯৯ বিশ্বকাপ থেকে খেলে আসছে বাংলাদেশ। ছয়টি বিশ্বকাপে খেলা দেশটির মাত্র ৩ জন ব্যাটসম্যান এখন পর্যন্ত বিশ্ব আসরটিতে সেঞ্চুরির স্বাদ পেয়েছেন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও সাকিব আল হাসান ২টি করে সেঞ্চুরি করেছেন। একটি সেঞ্চুরি করেছেন মুশফিকুর রহিম।
(৫) সর্বোচ্চ হাফ সেঞ্চুরি : বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে বেশিরভাগ রেকর্ড সাকিব আল হাসানের দখলে। রান, উইকেট ও সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মতো সর্বোচ্চ হাফ সেঞ্চুরিও তিনি করেছেন, বিশ্বকাপে ১০টি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬টি হাফ সেঞ্চুরির মালিক মুশফিকুর রহিম। ৪টি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন তামিম ইকবাল। এ ছাড়া ২টি করে হাফ সেঞ্চুরি আছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, ইমরুল কায়েস, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ও মোহাম্মদ আশরাফুলের।
(৬) সর্বোচ্চ ব্যাটিং গড় : বিশ্বকাপে অন্তত চারটি ম্যাচ খেলা বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যাটিং গড় মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর। বিসিবির প্রধান নির্বাচক হিসেবে দায়িত্বরত সাবেক এই ব্যাটসম্যানের গড় ৭০.০০। ৪ ম্যাচে দুই হাফ সেঞ্চুরিতে ১৪০ রান করেছেন তিনি। ১৫ বা তার চেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যাটিং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। ৫১.৩৩ গড়ে রান করেছেন তিনি। লিটন কুমার দাস ৪৬.০০ ও সাকিব আল হাসান ৪৫.৮৪ গড় নিয়ে যথাক্রমে তিন ও চার নম্বরে।
(৭) সর্বোচ্চ ছক্কা : বিশ্বকাপে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ছক্কা ১১টি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০টি ছক্কা মেরেছেন মুশফিকুর রহিম। সাকিব আল হাসান ৮টি ছক্কার মালিক। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা পেসার মাশরাফি বিন মুর্তজা ৭টি ছক্কা মেরে চার নম্বরে। লিটন কুমার দাস ও সাব্বির রহমান ৫টি করে ছক্কা মেরেছেন।
(৮) সর্বোচ্চ চার : সবচেয়ে বেশি ১০৭টি চার মেরেছেন সাকিব আল হাসান। তামিম ইকবাল মেরেছেন ৮৩টি চার। ৭১টি চার মারা মুশফিকুর রহিম তিন নম্বরে। সৌম্য সরকার ৪৭ ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৪৬টি চার মেরেছেন।
(৯) সর্বোচ্চ বল খেলা ব্যাটসম্যান : বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বল খেলেছেন সাকিব আল হাসান। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ১ হাজার ৩৯৩টি বল খেলেছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১ হাজার ১০৪ বল খেলেছেন মুশফিকুর রহিম। তামিম ইকবাল ৯৮২ ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৭৫৫ বল মোকাবিলা করেছেন। বিশ্বকাপে ১৬ ম্যাচ খেলা মোহাম্মদ আশরাফুল খেলেছেন ৪০০ বল।
(১০) সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি : রানের মতো উইকেট শিকারেও সবার চেয়ে এগিয়ে সাকিব আল হাসান। তিন ফরম্যাটেই বাংলাদেশের অধিনায়কত্ব পাওয়া বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার ২৯ ম্যাচে ৩৪ উইকেট নিয়েছেন। দুই নম্বরে থাকা সাবেক বাঁহাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক ১৫ ম্যাচে নিয়েছেন ২০ উইকেট। পেসারদের মধ্যে সর্বাচ্চ উইকেটের মালিক মুস্তাফিজুর রহমান, ৮ ম্যাচে তার শিকার ২০ উইকেট। ২৪ ম্যাচে ১৯ উইকেট নিয়ে মাশরাফি চারে এবং ১৪ ম্যাচে ১৪ উইকেট পাওয়া রুবেল হোসেন পাঁচ নম্বরে।
(১১) সেরা বোলিং : রান ও উইকেটের মতো ইনিংস সেরা বোলিংয়ের মালিকও সাকিব আল হাসান। ২০১৯ বিশ্বকাপে সাউদাম্পটনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১০ ওভারে ২৯ রান খরচায় ৫টি উইকেট নেন তিনি। যা কেবল বাংলাদেশের পক্ষেই নয়, বিশ্বকাপের ইতিহাসেই বাঁহাতি স্পিনারদের মতো সেরা বোলিং। পরের দুটি সেরা বোলিং মুস্তাফিজুর রহমানের। ২০১৯ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ৫৯ রানে ৫ উইকেট এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭৫ রানে ৫ উইকেট পান তিনি। ২০১১ বিশ্বকাপে ৮ ওভারে ২১ রানে ৪ উইকেট নেওয়া শফিউল ইসলাম চার নম্বরে। ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতকে হারানোর পথে নেতৃত্ব দেওয়া মাশরাফি বিন মুর্তজা ৩৮ রানে নেন ৪ উইকেট, সাবেক এই অধিনায়ক সেরা বোলিংয়ের তালিকার পাঁচ নম্বরে।
(১২) সর্বোচ্চ ওভার করা বোলার : বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে সাকিব আল হাসান সর্বোচ্চ ২৩৮.৫ ওভার বোলিং করেছেন, ১ হাজার ২২২ রান খরচায় তার শিকার ৩৪ উইকেট। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৮৭.২ ওভার বোলিং করেছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। দুই স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক ১২১.৪ ও মোহাম্মদ রফিক ১১৬.১ ওভার বোলিং করেছেন। পঞ্চম সর্বোচ্চ ১০৭.১ ওভার বোলিং করেছেন পেসার রুবেল হোসেন।
বিজনেস আওয়ার/০৭ অক্টোবর, ২০২৩/এএইচএ