বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: এ দেশে গরিব মানুষের সেবা করা জন্য অনেক লোক, অনেক প্রতিষ্ঠান আছে; কিন্তু করোনাকালে খেটে খাওয়া মানুষের পাশে সরকার এবং আওয়ামী লীগ ছাড়া কেউ ছিল না। বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (৩ আগস্ট) দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবনে তার সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে এখন অনেক ভালো ভালো মিডিয়া আছে। যে যার মতো আপন মনের মাধুরি মিশিয়ে বলেই যাচ্ছে, কিন্তু তাদের মাঠে মানুষের পাশে দেখা যায়নি। তারা কেউ আবার বিচার করে; আওয়ামী লীগ কতটুকু করলো, কতটুকু করলো না, কিন্তু তারা আয়নাতে নিজেদের চেহারা দেখে না।
তিনি বলেন, এই দেশে গরিব মানুষের সেবা করার অনেক লোক, অনেক রকমের প্রতিষ্ঠান, অনেক কার্যক্রম আমরা দেখি। কিন্তু করোনাকালীন তো তাদের কোনও কার্যক্রম আমরা দেখিনি। তখন সবাই ঘরে, তখন মানুষের পাশে আর কেউ নেই। মানুষের পাশে আওয়ামী লীগ আছে। কারণ আওয়ামী লীগ জনগণের সংগঠন, আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য সব থেকে বেশি কাজ করে।
শেখ হাসিনা বলেন, এই বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতির জন্যই জাতির পিতা স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। সেই স্বাধীনতার সুফলটা যেন প্রত্যেক মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছায়। আমরা যেন দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে পারি, জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারি, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা মানুষের পাশে আছি, থাকবো।
সরকার প্রধান বলেন, আমি দেশবাসীকে এইটুকু বলতে চাই যে, জনগণের সংগঠন হচ্ছে আওয়ামী লীগ, আর আওয়ামী লীগ জনগণের পাশে আছে এবং সেটা এবারও এই দুর্যোগ করোনা মহামারির সময় প্রমাণ হয়েছে। সরকারের পাশাপাশি সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বলেই মানুষকে দুরবস্থায় পড়তে হয়নি।
তিনি বলেন, করোনাকালে যেখানে বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধি কমেছে, তারপরও আমরা কিন্তু ৫ দশমিক ৬ এর কাছাকাছি অর্জন করতে পেরেছি। হয়তো আমরা আরও বেশি করতে পারবো। অর্থ্যাৎ একদিকে দুর্যোগ মোকাবিলা, অপরদিকে আমাদের দেশের অর্থনীতি সচল করা, মানুষের পাশে দাঁড়ানো, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে তাদের উন্নত জীবন দেওয়া—এই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
সরকার প্রধান বলেন, নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এবং ভূমিহীন, যারা নিঃস্ব হয়ে গেছে তাদের সাহায্য করার জন্য আমরা বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রেখেছি। মুজিববর্ষে আমাদের ঘোষণা, গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষের আমরা ঘরবাড়ি তৈরি করে দেবো। বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ব্যাপকভাবে চলছে। সরকারের পক্ষ থেকেও আমরা একই কর্মসূচি নিয়েছি।
উপস্থিত নেতাদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, মাঠ পর্যায়ের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলবেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছিলেন এই জনগণকে একটা উন্নত জীবন দিতে, সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। মুজিববর্ষে সেটাই আমাদের বড় অঙ্গীকার।
তিনি বলেন, করোনার কারণে সাংগঠনিক কাযর্ক্রম খুব বেশি চালাতে না পারলেও সাংগঠনিক কার্যক্রমগুলো অব্যাহত রাখতে হবে। যেসব জায়গায় সম্মেলন হয়েছে সেগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, সাংগঠনিক শক্তিটা হচ্ছে সবচেয়ে বড়। আওয়ামী লীগের যে তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক শক্তি আছে, এই করোনা মোকাবিলার সময় তারা যখন মাঠে নেমেছে, তখনি সেটা প্রমাণিত হয়েছে। আজকে যে কারণে আমাদের প্রায় ৫২২ জন নেতাকর্মী মৃত্যুবরণ করেছে। এই যে এতো বড় স্যাক্রিফাইস, বোধ হয় আর কোনও দল করেনি।
প্রবাসীদের জন্য প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় কাজ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক দেশেই তো এখন কাজ বন্ধ। ফলে এসব দেশে আমাদের যারা কাজ করেন, তাদের ফিরিয়ে আনতে হয়েছে। প্রয়োজনে কিন্তু বিশেষ প্লেন পাঠিয়ে হলেও তাদের আনা হয়েছে। কারণ তারা আমাদের সন্তান। তাদের ভালোমন্দ তো আমাদের দেখতে হবে। তাদেরও আমরা প্রণোদনা দিচ্ছি।
করোনা সংক্রমণের সময় মানুষ যেন চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত না হয়, সেটি নিশ্চিত করার জন্য সরকার সবকিছু করেছে বলে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, এই করোনাভাইরাস আমাদের এখানে আক্রমণ করলে আমাদের কী পরিমাণ মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে, তার মধ্যে কত জনকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দিতে হতে পারে, কত জনকে কোয়ারেনটাইনে রাখতে হতে পারে— সব বিষয় নিয়ে আমরা হিসাব করেছি।
তিনি বলেন, আমি দেখেছি যখনই যাকে বলেছি, কেউ এতটুকু পিছুপা হয়নি। মানে সব ধরনের সহযোগিতা নিয়ে মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার মনে হয় একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল বলেই মানুষ এই সহযোগিতাটা পেয়েছে। এখানে যদি অন্য কেউ থাকত কত যে মানুষ মারা যেত, কত যে দুরাবস্থা হতো— ভাষায় বলা যায় না।
বিজনেস আওয়ার/০৩ অক্টোবর, ২০২০/এ