বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: বাংলাদেশের সফল রপ্তানিকারকবৃন্দের অবদানের স্বীকৃতি প্রদান, রপ্তানি বৃদ্ধিতে উৎসাহিতকরণ এবং বহিঃবাণিজ্য সম্প্রসারণ ও সুসংহতকরণের লক্ষ্যে বানিজ্য মন্ত্রনালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর উদ্দ্যোগে অন্যান্য বছরের ন্যায় ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জাতীয় রপ্তানি ট্রফি প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ট্রফি প্রদান করেন মাননীয় বাণিজ্য মন্ত্রী জনাব টিপু মুনশি, এমপি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জনাব তপন কান্তি ঘোষ-এর সভাপতিত্বে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই-এর সভাপতি জনাব মাহবুবুল আলম বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
বুধবার (৮ নভেম্বর) ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস-চেয়ারম্যান জনাব এ.এইচ.এম. আহসান স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন।
জাতীয় রপ্তানি ট্রফি নীতিমালা-২০১৩ অনুযায়ী ট্রফি নির্বাচনের জন্য মোট ৩২টি খাতের রপ্তানিকারকদের মধ্য হতে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে প্রাপ্ত ২৪৫টি আবেদন বাছাইয়ের পর যোগ্য আবেদন ও খাতের সংখ্যা দাঁড়ায় যথাক্রমে ২১৬ ও ২৮টি। উক্ত অর্থবছরে জাহাজ রপ্তানি খাতে কোন আবেদন পাওয়া যায়নি। চূড়ান্ত যাচাইয়ান্তে হিমায়িত খাদ্য, চামড়া (ক্রাস্ট/ফিনিশড্) ও চা খাত হতে কোন যোগ্য আবেদনকারী না থাকায় এ খাত ৩টি বাদ পড়ে। ফলে ২৮টি খাত হতে নীতিমালা অনুযায়ী চূড়ান্তভাবে মনোনীত ৭৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৮টি স্বর্ণ, ২৫টি রৌপ্য এবং ১৯টি ব্রোঞ্জ ট্রফি প্রদান করা হয়। এছাড়াও সকল খাতের মধ্য হতে সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রপ্তানি ট্রফি শিরোনামে ১টি বিশেষ ট্রফি (স্বর্ণ) প্রদান করা হয়। জাতীয় রপ্তানি ট্রফি প্রাপক নির্ধারণে
নীতিমালা অনুসারে রপ্তানি আয়, আয়গত প্রবৃদ্ধি, নতুন পণ্যের সংযোজন, নতুন বাজারে প্রবেশ, কমপ্লায়েন্স প্রতিপালন অবস্থা ইত্যাদি মূল্যায়নপূর্বক আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি বাণিজ্যে অবদান নিরূপণ করা হয়। এসব কার্যাদি সম্পাদিত হয়ে থাকে দু’টো কমিটির মাধ্যমে (প্রাথমিক বাছাই কমিটি ও চূড়ান্ত বাছাই কমিটি)। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ২২৩.৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য (তৈরী পোশাক) রপ্তানি এবং অন্যান্য সূচকে সক্ষমতা অর্জিত হওয়ায় পণ্য খাত নির্বিশেষে সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান রিফাত গার্মেন্টস লিমিটেড “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রপ্তানি ট্রফি (স্বর্ণ)” লাভ করে।
উল্লেখ্য, প্রতিটি খাত হতে ৩টি প্রতিষ্ঠানকে যথাক্রমে ১টি স্বর্ণ, ১টি রৌপ্য ও ১টি ব্রোঞ্জ ট্রফি প্রদান করা হয়। তবে সকল খাতে যথেষ্ট সংখ্যক যোগ্য আবেদন না থাকায় রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ ক্যাটেগরিতে ট্রফি প্রাপকের সংখ্যা কিছুটা কম হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রপ্তানি ট্রফিতে ব্যবহৃত স্বর্ণের মেডেলে ২ ভরি (২৩.৩২ গ্রাম) স্বর্ণ রয়েছে এবং অন্যান্য ট্রফির প্রতিটিতে ১০ গ্রাম করে যথাক্রমে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ ধাতুর মেডাল রয়েছে। বরাবরের মত
ট্রফিসমূহের মধ্যে স্বর্ণ ও রৌপ্য ট্রফিতে ব্যবহৃত ধাতুর বিশুদ্ধতা পরীক্ষা করা হয় পরমাণু শক্তি কেন্দ্র, ঢাকা এর মাধ্যমে।
বিশ্বব্যপী অতিমারী করোনার প্রভাব থাকা স্বত্বেও সরকারের নানাবিধ সহায়তা (প্রণোদনা প্যাকেজ), রপ্তানিকারকদের উদ্যোগ ও পরিশ্রম এবং জাতীয় রপ্তানি ট্রফির মত উৎসাহমূলক কর্মসূচীর ফলশ্রুতিতে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে পণ্য ও সেবা খাতে মোট রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৪৫.৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যার মধ্যে পণ্য রপ্তানি ৩৮.৭৬ বিলিয়ন ডলার এবং সেবা রপ্তানি ৬.৬১ বিলিয়ন। এ বছর উল্লেখযোগ্য রপ্তানি আয় অর্জিত হয় নিটওয়্যার (১৬.৯৬ বিলিয়ন ডলার), ওভেন পোশাক (১৪.৫০ বিলিয়ন ডলার), হোম টেক্সটাইল (১.১৩ বিলিয়ন ডলার), চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য (৯৪২ মিলিয়ন ডলার), কৃষিজাত পণ্য (১.০৩ বিলিয়নডলার), পাট ও পাটজাত দ্রব্য (১.০৬ বিলিয়ন ডলার), প্রকৌশল দ্রব্যাদি (৫২৯ মিলিয়ন ডলার) এবং হিমায়িত ও জীবন্ত মাছ (৪৭৭মিলিয়ন ডলার) খাত হতে। উল্লেখ্য, গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে পণ্য ও সেবা খাতে মোট রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৬৩.০৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যার মধ্যে পণ্য রপ্তানি ৫৫.৫৬ বিলিয়ন ডলার এবং সেবা রপ্তানি ৭.৫১ বিলিয়ন। বিভিন্ন সেক্টরে সরকারের নানা ধরনের সময়োচিত সহায়তা এবং নানামুখী পদক্ষেপের বাস্তবায়ন দেশের রপ্তানি প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
প্রতিযোগিতাপূর্ণ ও পরিবর্তনশীল বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের পণ্য-সামগ্রীর বিপণন, আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদানুযায়ী পণ্যের গুণগত মানোন্নয়ন, টেকসই উন্নয়নের উপায় অন্বেষণ, নতুন নতুন পণ্য উদ্ভাবন, পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণ, আমদানিকারকদের নিকট সময়মত পণ্য উপস্থাপন, বাজারে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ়করণ এবং সর্বোপরি বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নে রপ্তানিকারকগণের অক্লান্ত পরিশ্রম ও তাদের পারফর্মেন্স-এর স্বীকৃতি হচ্ছে এই জাতীয় রপ্তানি ট্রফি।
দেশের কৃতি ব্যবসায়ীবৃন্দ সরকারি পর্যায়ের এ স্বীকৃতির মাধ্যমে আরও উজ্জীবিত হবেন এবং অধিক পণ্য ও সেবা রপ্তানিতে নিজেদেরকে নিয়োজিত করবেন মর্মে আশা করা যায়। রপ্তানি বহুমুখীকরণের জন্য উচ্চমূল্যের পণ্য উৎপাদন, মান নিশ্চিতকরণ, বহুমুখী পণ্যের উদ্ভাবন ও বিদেশী গন্তব্যে বাজারজাতকরণ এখন সময়ের দাবি। এক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর পৃষ্ঠপোষকতায় নতুন বাজার অন্বেষণ ও বাজার গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিজনেস আওয়ার/এএইচএ