আন্তর্জাতিক ডেস্ক: শুক্রবার মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নিয়েছেন মহম্মদ মুইজু। বরাবরই চিনপন্থী হিসাবে পরিচিত তিনি। শপথ গ্রহণের একদিন পর আনুষ্ঠানিকভাবে এই দ্বীপ দেশ থেকে নিজেদের সৈন্য প্রত্যাহার করে নিতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মালদ্বীপের নতুন এই প্রেসিডেন্ট।
এদিকে মালদ্বীপের এই ঘোষণার পরই ভারত সরকারের পরবর্তী পরিকল্পনা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। এমনকি এই বিষয়ে সমাধানসূত্র খুঁজতে মালদ্বীপের সঙ্গে আলোচনাও শুরু করেছে ভারত।
বেশ কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে রোববার (১৯ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতকে মালদ্বীপ থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে শনিবার মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুর কার্যালয় ঘোষণা করার পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, এই সমস্যার সমাধানসূত্র খুঁজতে উভয় দেশের সরকারের মধ্যে আলোচনা চলছে।
এর আগে শনিবার নিজ কার্যালয়ে ভারতের ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রী কিরেন রিজিজুর সঙ্গে বৈঠকে করেন মালদ্বীপের নতুন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু। বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মালদ্বীপ থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নিতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ভারতীয় ওই মন্ত্রী গত শুক্রবার মুইজ্জুর শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন। অবশ্য সৈন্য প্রত্যাহার করে নিতে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ভারতের প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে আহ্বান জানালেও এখনও পর্যন্ত নয়াদিল্লি এ বিষয়ে নীরব রয়েছে। এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিংবা সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারকদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপ দেশটিতে ভারতের প্রায় ৭০ জন সৈন্য রয়েছেন। এছাড়াও দেশটিতে ভারতীয় কিছু রাডার এবং নজরদারি বিমানও রয়েছে। এছাড়া ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ দেশটির বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে টহল দিতেও সাহায্য করে থাকে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে মোহাম্মদ মুইজ্জুর নির্বাচনী প্রচারণার অন্যতম প্রধান প্রতিশ্রুতি ছিল এই দ্বীপপুঞ্জ থেকে বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আর তাই গত শুক্রবার শপথ নেওয়ার পরপরই জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রথম ভাষণে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
সেই ভাষণে ভারতের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘মালদ্বীপে কোনও বিদেশি সেনা থাকবে না।’
ভারতীয় সরকারের বেশ কয়েকটি সূত্র বলছে, ভারতের ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রী রিজিজু শনিবার মোহাম্মদ মুইজ্জুর সঙ্গে সাক্ষাতকালে প্রেসিডেন্ট মালদ্বীপে উপস্থিত ভারতীয় সামরিক কর্মীদের সরিয়ে নেওয়া এবং এখানে ভারতীয় বিমানের টহলের বিষয়টি উত্থাপন করেন।
সূত্রগুলো জানায়, প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু মালদ্বীপের নাগরিকদের চিকিৎসার জন্য এই ভারতীয় হেলিকপ্টার ও বিমানের অবদানের কথা স্বীকার করেছেন। প্রত্যন্ত দ্বীপে অবস্থানরত আন্তর্জাতিক পর্যটকদের এ বিষয়ে আস্থার ইস্যুতেও তারা একমত হয়েছেন।
আর তাই এই বিষয়ে আলোচনা করে সমাধান সূত্র খোঁজা হবে বলে দুই দেশের পক্ষ থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে এনডিটিভি দাবি করেছে।
উল্লেখ্য, এক মাসেরও বেশি সময় আগে অনুষ্ঠিত মালদ্বীপের নির্বাচনে কট্টর ভারতবিরোধী অবস্থান নিয়ে দেশটির ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম সোলিহকে পরাজিত করেন মোহাম্মদ মুইজ্জু। তার নির্বাচনী প্রচারণার মূল প্রতিশ্রুতিই ছিল ভারত মহাসাগরীয় এই দ্বীপ দেশটিতে অবস্থানরত ভারতীয় সৈন্যদের প্রত্যাহারে নয়াদিল্লিকে বাধ্য করা।
এমনকি মালদ্বীপের সর্বশেষ এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিরোধীদের প্রচারণার প্রধান স্লোগান হয়ে উঠেছিল ‘ইন্ডিয়া আউট’। আর এই স্লোগানের মাধ্যমে নয়াদিল্লির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের অভিযোগে সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট সোলিহকে কোণঠাসা করার চেষ্টাও করেন বিরোধীরা।
বিজনেস আওয়ার/এএইচএ