ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিএসইসি’র ইতিবাচক উদ্যোগ, সক্রিয় কারসাজি চক্র

  • পোস্ট হয়েছে : ০৫:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৩
  • 57

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারের ক্রেতা নেই। ডিভিডেন্ডে চকম থাকলেও কোম্পানিগুলোর শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। কিন্তু বন্ধ বা উৎপাদনে না থাকা প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ছে অস্বাভাবিকভাবে। লেনদেনেও এগিয়ে অতিদুর্বল এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তালিকাভুক্ত বন্ধ কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগকারীদের স্বাথে চালু করার এবং ওইসব কোম্পনির অনিয়ম ও দুর্নীতিরোধে পর্ষদ পুনর্গঠন করারউদ্যোগ নিয়েছে নিয়েছে। বিএসইসির সেই ইতিবাচক উদ্যোগকে ঘিরেই এখন কারসাজি চক্র সক্রিয়।

তবে বাজার বিশ্লেষকদের কারসাজির এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিএসইসি। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বছরের বছর বন্ধ থাকা কোম্পানি চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং সেসব কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে।

২০২০ সালে শেয়ারবাজার যখন মুমূর্ষু অবস্থায়, তখন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামের নেতৃত্বে দায়িত্ব নেয় বর্তমান কমিশন। পরে অন্যান্য উদ্যোগের পাশাপাশি বন্ধ বা লোকসানি কোম্পানি সচল ও পর্ষদ পুনর্গঠনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এতে সিংহভাগ কোম্পানির ক্ষেত্রে আশাতীত ফলও পাওয়া যায়।

এদিকে, বিএসইসি বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারিং, তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল, মুন্নু ফেব্রিকস, সোনালী পেপার এবং পেপার প্রসেসিং এই পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে ওটিসি মার্কেট থেকে মূল মার্কেটে ফেরায়।

অন্যদিকে, ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ, আলহাজ টেক্সটাইল, ফুয়াং ফুডস, এমারেল্ড অয়েল, অ্যাসোসিয়েটড অক্সিজেন, অগ্নি সিস্টেমস, সিএন্ডএ টেক্সটাইলস, ফ্যামিলিটেক্স, বিডি ওয়েল্ডিং ইলেক্সক্ট্রোডস, ফারইস্ট ফাইনান্স, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, রতনপুর স্টিল রিরোলিং মিলস, ফাস ফাইনান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফার্স্ট ফাইনান্স এবং ইউনাইটেড এয়ারের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার উদ্দেশ্য ছিল মহৎ। কিন্তু কারসাজি চক্র এসব পরিবর্তনকে ইস্যু বানিয়ে শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়াচ্ছে। যা পরে বিনিয়োগকারীদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে কেটে পড়ছে।

তাঁরা বলছেন, এই কারসাজি চক্র মালিকপক্ষের সঙ্গে বসে ডিভিডেন্ট সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়। নামকাওয়াস্তে ডিভিডেন্ড দিয়ে তারা ক্যাটাগরি পরিবর্তন করে। আবার সুবিধামতো আর্থিক প্রতিবেদনও প্রকাশ করার ব্যবস্থা নেয়। কারসাজি চক্র ওই শেয়ারগুলো নিজেদের হাতে নিয়ে নেয়। তারপর তারা বাজারে বিভিন্ন ধরনের খবর ছড়ায়। এতে বিনিয়োগকারীরা ওই শেয়ারের প্রতি আকৃষ্ট হয়। তখন ওই শেয়ারগুলো তাদের হাতে তুলে দেয়। চড়া দামে যারা শেয়ারগুলোতে বিনিয়োগ করে, তারা আর সেখান থেকে বের হতে পারে না।

এছাড়াও বাজারে আরও অনেক কোম্পানির মলিকানা পরিবর্তনের গুজব ছড়িয়ে শেয়ারের দাম বাড়ানোসহ নানা কারসাজি চলছে। যেমন, ২০০৩ সাল থেকে বন্ধ ওটিসির কোম্পানি রাঙ্গামাটি ফুডস। ডিএসইর তদন্তে দেখা গেছে, একটি গ্রুপ কোম্পানিটি মাত্র ১ কোটি টাকায় কিনে নেয়। পরে ডিএসইর এসএমই বোর্ডে তালিকাভুক্ত হতে কোম্পানির পক্ষে কোনো অর্থ না নিয়েই প্রায় ৪২ কোটি টাকার নতুন শেয়ার ইস্যু করে। এই জাতিয়াতি ধরা পড়ার পর এসএমই বোর্ডে ফেরার আবেদন বাতিল করেছে ডিএসই।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, আবার কিছু কিছু কোম্পানি নামকাওয়াস্তে উৎপাদনে আসছে। তারপর ফলাও করে উৎপাদনের খবর প্রচার করে কারসাজির মাধ্যমে নিজেদের আখের গোচাচ্ছে। অন্যদিকে বিনিয়োগকারীদেরও সর্বশ্বান্ত করছে।

তাঁরা বলছেন, বন্ধ কোম্পানি উৎপাদনে আসলে শেয়ার হোল্ডাররা উপকৃত হতো। কিন্তু এখন যেটা হচ্ছে, নামকাওয়াস্তে তারা ১-২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে, সেই শেয়ার ৪০-৫০ কোটি টাকা বিক্রি করে দিচ্ছে।

তবে একথা সত্য, বিএসইসির উদ্যোগের ফলে বেশিরভাগ বন্ধ কোম্পানি উৎপাদনে ফিরেছে। লাভের মুখও দেখেছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোও ভালো করার পর্যায়ে রয়েছে।

এই বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম একটি ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে বলেন, বিএসইসি ইতোমধ্যে ৩০-৩৫টি প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ করেছে। এর মধ্যে ১৫-২০টি উৎপাদনে চলে এসেছে, বাকিগুলোও আসার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। যেগুলোর উৎপাদন শুরু হয়েছে সেগুলো বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড দিতেও শুরু করেছে। কোম্পানিগুলোর প্রচুর লোকসান ছিল। সেগুলোও কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছে।

বিজনেস আওয়ার/ ৬ ডিসেম্বর/ বিএইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

বিএসইসি’র ইতিবাচক উদ্যোগ, সক্রিয় কারসাজি চক্র

পোস্ট হয়েছে : ০৫:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৩

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারের ক্রেতা নেই। ডিভিডেন্ডে চকম থাকলেও কোম্পানিগুলোর শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। কিন্তু বন্ধ বা উৎপাদনে না থাকা প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ছে অস্বাভাবিকভাবে। লেনদেনেও এগিয়ে অতিদুর্বল এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তালিকাভুক্ত বন্ধ কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগকারীদের স্বাথে চালু করার এবং ওইসব কোম্পনির অনিয়ম ও দুর্নীতিরোধে পর্ষদ পুনর্গঠন করারউদ্যোগ নিয়েছে নিয়েছে। বিএসইসির সেই ইতিবাচক উদ্যোগকে ঘিরেই এখন কারসাজি চক্র সক্রিয়।

তবে বাজার বিশ্লেষকদের কারসাজির এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিএসইসি। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বছরের বছর বন্ধ থাকা কোম্পানি চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং সেসব কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে।

২০২০ সালে শেয়ারবাজার যখন মুমূর্ষু অবস্থায়, তখন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামের নেতৃত্বে দায়িত্ব নেয় বর্তমান কমিশন। পরে অন্যান্য উদ্যোগের পাশাপাশি বন্ধ বা লোকসানি কোম্পানি সচল ও পর্ষদ পুনর্গঠনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এতে সিংহভাগ কোম্পানির ক্ষেত্রে আশাতীত ফলও পাওয়া যায়।

এদিকে, বিএসইসি বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারিং, তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল, মুন্নু ফেব্রিকস, সোনালী পেপার এবং পেপার প্রসেসিং এই পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে ওটিসি মার্কেট থেকে মূল মার্কেটে ফেরায়।

অন্যদিকে, ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ, আলহাজ টেক্সটাইল, ফুয়াং ফুডস, এমারেল্ড অয়েল, অ্যাসোসিয়েটড অক্সিজেন, অগ্নি সিস্টেমস, সিএন্ডএ টেক্সটাইলস, ফ্যামিলিটেক্স, বিডি ওয়েল্ডিং ইলেক্সক্ট্রোডস, ফারইস্ট ফাইনান্স, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, রতনপুর স্টিল রিরোলিং মিলস, ফাস ফাইনান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফার্স্ট ফাইনান্স এবং ইউনাইটেড এয়ারের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার উদ্দেশ্য ছিল মহৎ। কিন্তু কারসাজি চক্র এসব পরিবর্তনকে ইস্যু বানিয়ে শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়াচ্ছে। যা পরে বিনিয়োগকারীদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে কেটে পড়ছে।

তাঁরা বলছেন, এই কারসাজি চক্র মালিকপক্ষের সঙ্গে বসে ডিভিডেন্ট সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়। নামকাওয়াস্তে ডিভিডেন্ড দিয়ে তারা ক্যাটাগরি পরিবর্তন করে। আবার সুবিধামতো আর্থিক প্রতিবেদনও প্রকাশ করার ব্যবস্থা নেয়। কারসাজি চক্র ওই শেয়ারগুলো নিজেদের হাতে নিয়ে নেয়। তারপর তারা বাজারে বিভিন্ন ধরনের খবর ছড়ায়। এতে বিনিয়োগকারীরা ওই শেয়ারের প্রতি আকৃষ্ট হয়। তখন ওই শেয়ারগুলো তাদের হাতে তুলে দেয়। চড়া দামে যারা শেয়ারগুলোতে বিনিয়োগ করে, তারা আর সেখান থেকে বের হতে পারে না।

এছাড়াও বাজারে আরও অনেক কোম্পানির মলিকানা পরিবর্তনের গুজব ছড়িয়ে শেয়ারের দাম বাড়ানোসহ নানা কারসাজি চলছে। যেমন, ২০০৩ সাল থেকে বন্ধ ওটিসির কোম্পানি রাঙ্গামাটি ফুডস। ডিএসইর তদন্তে দেখা গেছে, একটি গ্রুপ কোম্পানিটি মাত্র ১ কোটি টাকায় কিনে নেয়। পরে ডিএসইর এসএমই বোর্ডে তালিকাভুক্ত হতে কোম্পানির পক্ষে কোনো অর্থ না নিয়েই প্রায় ৪২ কোটি টাকার নতুন শেয়ার ইস্যু করে। এই জাতিয়াতি ধরা পড়ার পর এসএমই বোর্ডে ফেরার আবেদন বাতিল করেছে ডিএসই।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, আবার কিছু কিছু কোম্পানি নামকাওয়াস্তে উৎপাদনে আসছে। তারপর ফলাও করে উৎপাদনের খবর প্রচার করে কারসাজির মাধ্যমে নিজেদের আখের গোচাচ্ছে। অন্যদিকে বিনিয়োগকারীদেরও সর্বশ্বান্ত করছে।

তাঁরা বলছেন, বন্ধ কোম্পানি উৎপাদনে আসলে শেয়ার হোল্ডাররা উপকৃত হতো। কিন্তু এখন যেটা হচ্ছে, নামকাওয়াস্তে তারা ১-২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে, সেই শেয়ার ৪০-৫০ কোটি টাকা বিক্রি করে দিচ্ছে।

তবে একথা সত্য, বিএসইসির উদ্যোগের ফলে বেশিরভাগ বন্ধ কোম্পানি উৎপাদনে ফিরেছে। লাভের মুখও দেখেছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোও ভালো করার পর্যায়ে রয়েছে।

এই বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম একটি ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে বলেন, বিএসইসি ইতোমধ্যে ৩০-৩৫টি প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ করেছে। এর মধ্যে ১৫-২০টি উৎপাদনে চলে এসেছে, বাকিগুলোও আসার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। যেগুলোর উৎপাদন শুরু হয়েছে সেগুলো বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড দিতেও শুরু করেছে। কোম্পানিগুলোর প্রচুর লোকসান ছিল। সেগুলোও কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছে।

বিজনেস আওয়ার/ ৬ ডিসেম্বর/ বিএইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: