ঢাকা , শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আবরার হত্যার এক বছর আজ

  • পোস্ট হয়েছে : ১১:০৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর ২০২০
  • 59

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার এক বছর আজ। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার জেরে ২০১৯ সালের (৬ অক্টোবর) বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী পিটিয়ে হত্যা করে। হত্যার পরের দিন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ ১৯ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। এরপর ছাত্রলীগের ২৫ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করে ডিবি পুলিশ।

তিনজনকে পলাতক দেখিয়ে গত ১৫ সেপ্টেম্বর চার্জশিটভুক্ত ২৫ আসামির বিরুদ্ধেই অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এই মামলার বিচার শুরু হয়। পলাতক তিন আসামি হলেন- মাহমুদুল জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ।

পলাতক তিন আসামিকে দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় এনে দ্রুত মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ করার দাবি জানিয়ে নিহত আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, আমার ছেলে হত্যার এক বছর হয়েছে। এখনো পলাতক তিন আসামি। আমি তাদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানাই। আমি এ হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার চাই। মামলাটির বিচার কার্যক্রম যেন দ্রুত শেষ হয় এটা আমার দাবি।

আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার বিচার হচ্ছে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে। আগামী ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত এই মামলার ধারাবাহিক সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য আছে। রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট প্রসিকিউশন প্যানেল গঠন করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি এহসানুল হক সমাজী বলেন, মামলাটির বিচার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। আশা করছি দ্রুত বিচার আইনের বিধান অনুযায়ী যে সময়ের মধ্যে বিচার শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে তার মধ্যেই এই মামলার বিচার শেষ হবে। তবে এক্ষেত্রে আসামিপক্ষেরও সহযোগিতা প্রয়োজন।

আর আসামিপক্ষের এক আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম চলছে। আসামিরা দোষী না নির্দোষ তা রায়ে প্রমাণিত হবে।

উল্লেখ্য, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার জেরে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ডেকে নেয় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দোতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরদিন ৭ অক্টোবর দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আবরারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।

ওই ঘটনায় নিহতের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান। মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ৬০ জনকে।

অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে এজাহারনামীয় ১৯ জন এবং তদন্তে প্রাপ্ত এজাহারবহির্ভূত ছয়জন রয়েছেন। এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৬ জন এবং এজাহারবহির্ভূত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আটজন।

আবরার হত্যায় অভিযুক্ত যারা: বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার, সাহিত্য সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন , উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশারফ সকাল, সদস্য মুনতাসির আল জেমি, সদস্য মুজাহিদুর রহমান, সদস্য হোসেন মোহাম্মদ তোহা, সদস্য এহতেশামুল রাব্বি তানিম, শামীম বিল্লাহ, মাজেদুল ইসলাম, আকাশ হোসেন, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মাহমুদুল জিসান, মোয়াজ আবু হোরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত), মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম, ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মুজতবা রাফিদ এবং মাহামুদ সেতু।

গ্রেফতার আসামিদের ম‌ধ্যে ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত ও এস এম মাহমুদ সেতু ছাড়া বাকি সবাই এজাহারভুক্ত আসামি।

মামলার আট আসামি আদালতে স্বীকা‌রো‌ক্তিমূলক জবানব‌ন্দি দেন। তারা হলেন- ইফতি মোশাররফ সকাল, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, অনিক সরকার, মুজাহিদুর রহমান, মেহেদি হাসান রবিন, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মনিরুজ্জামান মনির ও এএসএম নাজমুস সাদাত।

বিজনেস আওয়ার/০৬ অক্টোবর, ২০২০/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

আবরার হত্যার এক বছর আজ

পোস্ট হয়েছে : ১১:০৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর ২০২০

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার এক বছর আজ। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার জেরে ২০১৯ সালের (৬ অক্টোবর) বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী পিটিয়ে হত্যা করে। হত্যার পরের দিন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ ১৯ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। এরপর ছাত্রলীগের ২৫ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করে ডিবি পুলিশ।

তিনজনকে পলাতক দেখিয়ে গত ১৫ সেপ্টেম্বর চার্জশিটভুক্ত ২৫ আসামির বিরুদ্ধেই অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এই মামলার বিচার শুরু হয়। পলাতক তিন আসামি হলেন- মাহমুদুল জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ।

পলাতক তিন আসামিকে দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় এনে দ্রুত মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ করার দাবি জানিয়ে নিহত আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, আমার ছেলে হত্যার এক বছর হয়েছে। এখনো পলাতক তিন আসামি। আমি তাদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানাই। আমি এ হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার চাই। মামলাটির বিচার কার্যক্রম যেন দ্রুত শেষ হয় এটা আমার দাবি।

আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার বিচার হচ্ছে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে। আগামী ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত এই মামলার ধারাবাহিক সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য আছে। রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট প্রসিকিউশন প্যানেল গঠন করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি এহসানুল হক সমাজী বলেন, মামলাটির বিচার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। আশা করছি দ্রুত বিচার আইনের বিধান অনুযায়ী যে সময়ের মধ্যে বিচার শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে তার মধ্যেই এই মামলার বিচার শেষ হবে। তবে এক্ষেত্রে আসামিপক্ষেরও সহযোগিতা প্রয়োজন।

আর আসামিপক্ষের এক আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম চলছে। আসামিরা দোষী না নির্দোষ তা রায়ে প্রমাণিত হবে।

উল্লেখ্য, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার জেরে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ডেকে নেয় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দোতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরদিন ৭ অক্টোবর দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আবরারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।

ওই ঘটনায় নিহতের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান। মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ৬০ জনকে।

অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে এজাহারনামীয় ১৯ জন এবং তদন্তে প্রাপ্ত এজাহারবহির্ভূত ছয়জন রয়েছেন। এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৬ জন এবং এজাহারবহির্ভূত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আটজন।

আবরার হত্যায় অভিযুক্ত যারা: বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার, সাহিত্য সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন , উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশারফ সকাল, সদস্য মুনতাসির আল জেমি, সদস্য মুজাহিদুর রহমান, সদস্য হোসেন মোহাম্মদ তোহা, সদস্য এহতেশামুল রাব্বি তানিম, শামীম বিল্লাহ, মাজেদুল ইসলাম, আকাশ হোসেন, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মাহমুদুল জিসান, মোয়াজ আবু হোরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত), মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম, ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মুজতবা রাফিদ এবং মাহামুদ সেতু।

গ্রেফতার আসামিদের ম‌ধ্যে ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত ও এস এম মাহমুদ সেতু ছাড়া বাকি সবাই এজাহারভুক্ত আসামি।

মামলার আট আসামি আদালতে স্বীকা‌রো‌ক্তিমূলক জবানব‌ন্দি দেন। তারা হলেন- ইফতি মোশাররফ সকাল, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, অনিক সরকার, মুজাহিদুর রহমান, মেহেদি হাসান রবিন, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মনিরুজ্জামান মনির ও এএসএম নাজমুস সাদাত।

বিজনেস আওয়ার/০৬ অক্টোবর, ২০২০/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: