বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল হাসানের সমর্থককে হত্যার হুমকি দিয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলর সালাউদ্দিন আহম্মেদ। এতে স্থানীয়দের মধ্যে ভীতি এবং ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তারা এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এদিকে, হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত সালাউদ্দিন আহম্মেদ।
ভুক্তভোগী সমর্থক এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা-৫ আসনের ৬৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সালাউদ্দিন আহম্মেদ ঈগল প্রতীকের প্রার্থী মো. কামরুল হাসানের সমর্থক মো. সুজনকে নিজের গরুর খামারে ডেকে নিয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। বিষয়টির দ্রুত সুরাহা না হলে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থির সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কাউন্সিলর সালাউদ্দিন দিনে নৌকার প্রার্থী হারুনুর রশিদ মুন্নার সঙ্গে আছেন দেখালেও রাতে কাজ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সজল মোল্লার পক্ষে। এলাকায় কেউ তার কথার বাইরে গেলেই তাকে হুমকি তিনি।
হত্যার হুমকি পাওয়া সুজন বলেছেন, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে আমাকে ফোন করে ডেমরা থানাধীন রাজাখালী মসজিদ সংলগ্ন গরুর খামারে যেতে বলেন কাউন্সিলর সালাউদ্দিন। এ সময় আমাকে ঈগল প্রতীকের প্রার্থীর সঙ্গে কাজ না করে তার (সালাউদ্দিন) সঙ্গে কাজ করার কথা বলেন। আমি তাহলে কি নৌকার সঙ্গে কাজ করব, জানতে চাইলে তিনি বলেন, নৌকা তোর … মধ্যে ঢুকায় দিবো। আমি যেখানে আছি, সেখানে থাকবি। না হলে নৌকা ও ঈগলের পক্ষে কোনো ধরনের প্রচারণা করবি না। যদি করিস, তাহলে তোর বুকে পাড়া দিয়ে গলায় ছুরি চালিয়ে মাথা আলাদা করে দেবো, ভুড়ি বের করে ফেলব।
সুজন আরও বলেন, দীর্ঘদিন একসঙ্গে রাজনীতি করায় কামরুল হাসান এবং ঈগল প্রতীককে ছাড়তে পারব না, জানালে কাউন্সিলর আমার কাছে চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে আমার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন।
তিনি অভিযোগ করেন, শুক্রবার থানায় এ বিষয়ে অভিযোগ দিলেও তা জিডি আকারে নেয়নি। তবে, আমাকে এবং কাউন্সিলরকে ডেকে নিয়ে কোনোমতে মীমাংসা করে দেন। কিন্তু, এর পর রাতে আমার বাড়ির সামনে কাউন্সিলরের লোকজন ঘোরাফেরা করেছে, আমাকে হুমকি দিয়েছে। আমি আমার পরিবার নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে আছি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাউন্সিলর সালাউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, সুজনকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়নি।
এ সম্পর্কে ডেমরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জহিরুল ইসলাম বলেছেন, তাদের ডাকা হয়েছিল। দুজনের মধ্যে মীমাংসা করে দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে ঈগল প্রতীকের প্রার্থী মো. কামরুল হাসান রিপন বলেছেন, যেখানে জননেত্রী শেখ হাসিনা নিজে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন করতে দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন, সেখানে এভাবে হত্যার হুমকি নির্বাচনে পরিবেশ নষ্ট করবে। এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আনা চ্যালেঞ্জ হতে পারে। আমি দলের নেতাকর্মীদের জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন আয়োজনে সহযোগিতার আহ্বান জানাই।
এ বিষয়ে নৌকার প্রার্থী হারুনুর রশিদ মুন্না বলেছেন, এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি। আমি আওয়ামী লীগের প্রার্থী। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে। আমি কোনো মল্লযুদ্ধ চাই না। এ ধরনের ঘটনা যে-ই ঘটাক, তার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ পদক্ষেপ নেবে বলে আমি মনে করি।
ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের রিটার্নিং অফিসার সাবিরুল ইসলাম বলেছেন, এ ধরনের পরিস্থিতি প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। ম্যাজিস্ট্রেট যাচ্ছেন, তারা যাচ্ছেন। এসবের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
বিজনেস আওয়ার/২৩ডিসেম্বর/বিএইচ