ঢাকা , মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আর্থিক বিপর্যয়ে আইসিবি

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিনের অস্থিরতা, দুর্বল বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত এবং নীতিগত ব্যর্থতার ফলে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আর্থিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। সম্প্রতি পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্তের পর এসব ব্যাংকে থাকা আইসিবির প্রায় ১৪০ কোটি টাকার বিনিয়োগ কার্যত শূন্যে নেমে এসেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্তের পর বাংলাদেশ ব্যাংক এসব ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ‘শূন্য’ ঘোষণা করে। এর ফলে ওই ব্যাংকগুলোতে আইসিবির নিজস্ব প্রায় ১২০ কোটি টাকা এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় ২০ কোটি টাকাসহ মোট ১৪০ কোটি টাকার শেয়ার এখন কার্যত মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি লোকসান হয়েছে এক্সিম ব্যাংকে, যেখানে আইসিবির বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল প্রায় ৮০ কোটি টাকা।

আইসিবির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শেয়ারের দর ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকলেও বোর্ড পর্যায় থেকে লোকসান দিয়ে হলেও শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ফলে সময়মতো ঝুঁকি কমানোর সুযোগ হারিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে এই বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সর্বশেষ বোর্ড সভায় দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, বাজার পরিস্থিতি এত দ্রুত অবনতি ঘটেছে যে পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্ট কমিটির পক্ষে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন ছিল।

একসময় দেশের অন্যতম লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত আইসিবি ২০২৪–২৫ অর্থবছরে ১ হাজার ২১৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা লোকসান করেছে, যা প্রতিষ্ঠানটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ এবং প্রথমবারের মতো লোকসান। এই বিপুল আর্থিক ক্ষতির কারণে ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর এবারই প্রথম শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ডিভিডেন্ড না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র ও বিশ্লেষকদের মতে, আইসিবির এই ভঙ্গুর অবস্থার পেছনে একাধিক কারণ কাজ করছে। দুর্বল নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের কারণে প্রায় ৯২০ কোটি টাকা এফডিআর হিসেবে আটকে রয়েছে। একই সঙ্গে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের বিপরীতে প্রায় ৯৪১ কোটি টাকা সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে। পাশাপাশি আগের অর্থবছরের তুলনায় আইসিবির পরিচালন আয় ২১ শতাংশ কমে ৭১৩ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। ডিভিডেন্ড আয় ও ক্যাপিটাল গেইনও উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিনের তারল্য সংকট ও অস্থিরতার মধ্যে আইসিবির এই অবস্থা বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। আইসিবির কর্মকর্তারা বলছেন, বাড়তি প্রভিশনিং এবং উচ্চ সুদ ব্যয়ই মূলত এই বড় লোকসানের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিজনেস আওয়ার/ ৩০ ডিসেম্বর / আনিচ

ট্যাগস

ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আর্থিক বিপর্যয়ে আইসিবি

আপডেট সময় ৩ ঘন্টা আগে

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিনের অস্থিরতা, দুর্বল বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত এবং নীতিগত ব্যর্থতার ফলে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আর্থিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। সম্প্রতি পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্তের পর এসব ব্যাংকে থাকা আইসিবির প্রায় ১৪০ কোটি টাকার বিনিয়োগ কার্যত শূন্যে নেমে এসেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্তের পর বাংলাদেশ ব্যাংক এসব ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ‘শূন্য’ ঘোষণা করে। এর ফলে ওই ব্যাংকগুলোতে আইসিবির নিজস্ব প্রায় ১২০ কোটি টাকা এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় ২০ কোটি টাকাসহ মোট ১৪০ কোটি টাকার শেয়ার এখন কার্যত মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি লোকসান হয়েছে এক্সিম ব্যাংকে, যেখানে আইসিবির বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল প্রায় ৮০ কোটি টাকা।

আইসিবির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শেয়ারের দর ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকলেও বোর্ড পর্যায় থেকে লোকসান দিয়ে হলেও শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ফলে সময়মতো ঝুঁকি কমানোর সুযোগ হারিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে এই বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সর্বশেষ বোর্ড সভায় দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, বাজার পরিস্থিতি এত দ্রুত অবনতি ঘটেছে যে পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্ট কমিটির পক্ষে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন ছিল।

একসময় দেশের অন্যতম লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত আইসিবি ২০২৪–২৫ অর্থবছরে ১ হাজার ২১৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা লোকসান করেছে, যা প্রতিষ্ঠানটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ এবং প্রথমবারের মতো লোকসান। এই বিপুল আর্থিক ক্ষতির কারণে ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর এবারই প্রথম শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ডিভিডেন্ড না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র ও বিশ্লেষকদের মতে, আইসিবির এই ভঙ্গুর অবস্থার পেছনে একাধিক কারণ কাজ করছে। দুর্বল নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের কারণে প্রায় ৯২০ কোটি টাকা এফডিআর হিসেবে আটকে রয়েছে। একই সঙ্গে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের বিপরীতে প্রায় ৯৪১ কোটি টাকা সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে। পাশাপাশি আগের অর্থবছরের তুলনায় আইসিবির পরিচালন আয় ২১ শতাংশ কমে ৭১৩ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। ডিভিডেন্ড আয় ও ক্যাপিটাল গেইনও উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিনের তারল্য সংকট ও অস্থিরতার মধ্যে আইসিবির এই অবস্থা বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। আইসিবির কর্মকর্তারা বলছেন, বাড়তি প্রভিশনিং এবং উচ্চ সুদ ব্যয়ই মূলত এই বড় লোকসানের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিজনেস আওয়ার/ ৩০ ডিসেম্বর / আনিচ