ঢাকা , শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভোট চুরি করতে পারবে না, তাই নির্বাচন করছে না: শেখ হাসিনা

  • পোস্ট হয়েছে : ১০:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ জানুয়ারী ২০২৪
  • 102

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার জবাব দিতে পরিবার–পরিজনসহ ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভোট চুরি করার সুযোগ নেই জেনেই বিএনপি নির্বাচনে না এসে নির্বাচন বানচাল করতে চাইছে বলেও এ সময় মন্তব্য করেন তিনি।

সোমবার (১ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর কলাবাগান মাঠে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আ.লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তব্যে এ কথা জানান তিনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধারাবাহিক প্রচার-প্রচারণার অংশ হিসেবে এ জনসভার আয়োজন করা হয়।

বিএনপির নির্বাচন বর্জনের প্রসঙ্গ তুলে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আজকে নির্বাচন বর্জন করছে। বর্জন করা স্বাভাবিক। কারণ, ভোট চুরি করতে পারবে না, তাই নির্বাচন করছে না। তারা তো ভোট চুরি করে অভ্যস্ত। চুরি করা ভোট দিয়েই তো তাদের সৃষ্টি। ক্ষমতা চুরি, ক্ষমতা দখল, ভোট চুরি, এ ছাড়া আর কিছু পারে না। সেজন্য নির্বাচন করবে না। নির্বাচন বানচাল করবে। মানুষের ভোটের অধিকার আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছি। সেই অধিকার কেড়ে নেবে, নির্বাচন বন্ধ করবে, এত সাহস তাদের নেই। তারা পারবে না।

তিনি বলেন, তারা আগুন দিয়ে সাধারণ মানুষ, বাস, ট্রাক, রেল রেললাইন খুলে দিয়ে রেলে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে মানুষ মারে। তাদের লাশ চায়। ট্রেনে আগুন দিয়েছে শিশুসহ মা পুড়ে মারা গেছে। এর আগে, বাবার সামনে ছেলে পুড়ে মারা যাচ্ছে। এরকম দৃশ্য এই বাংলাদেশের ঘটেছে, ওই বিএনপি-জামায়াত অগ্নিসন্ত্রাসীদের কারণে। কাজেই, এদের ব্যাপারে বাংলাদেশের জনগণকে সবসময় সজাগ থাকতে হবে। ওরা এই দেশের সর্বনাশ করতে চায়।

বিএনপি-জামায়াত অগ্নিসন্ত্রাস করে জনগণের ভোট কেড়ে নিতে চায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর জবাব আপনারা দেবেন কীভাবে? প্রত্যেকে পরিবার পরিজন নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাবেন। আপনার ভোট আপনি দেবেন। কেউ যেন ঠেকাতে না পারে। এর মাধ্যমে অগ্নিসন্ত্রাসের জবাব দেবেন। শুধু ভোটই দেবেন না। আপনাদের ভোট আপনি রক্ষা করে বিএনপি-জামায়াতকে উপযুক্ত জবাব দেবেন।

নির্বাচন ঠেকানোর নামে ২০১৩-১৪ সালে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের ক্ষত এখনো অনেক মানুষ বয়ে বেড়াচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাস লঞ্চ, ভূমি অফিস, জ্বালাওপোড়াও, অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ হত্যা করা- এই আছে বিএনপির। তার বেশি কিছু করতে পারেনি। শুধু মানুষ হত্যা করা, এই তারা পারে।

তিনি বলেন, তারেক জিয়া মুচলেকা দিয়ে চলে গিয়েছিল রাজনীতি করবে না বলে। সেখানে বসে যতো ‘চোরা টাকা’ মানিলন্ডারিং করে পাঠিয়েছে…শুনেছি সে নাকি ক্যাসিনো খেলে অর্থাৎ জুয়া খেলে টাকা কামাই করে। সেই টাকা দিয়ে বাংলাদেশের আবারও অরাজকতা অগ্নিসন্ত্রাস এগুলো শুরু করেছে।

বিএনপির নমিনেশন বাণিজ্যের কারণে ২০১৮ সালে তাদের ভরাডুবি হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনে তারা এসেছিল। নির্বাচন হয়ে গেলো বাণিজ্য। ২০১৮ নির্বাচনে তারেক জিয়া দেয় নমিনেশন, এদিকে গুলশান থেকে ফখরুল দেয় নমিনেশন; অন্যদিকে, পল্টন থেকে রিজভী দেয় নমিনেশন। সকালে বলে এ আমাদের প্রার্থী তো বিকেলে বলে আরেকজন। তারেক রহমানের কথাই ছিল, কে কতো টাকা দেবেন, নমিনেশন নেবেন। টাকা দেবেন না নমিনেশন বাদ। এভাবে বিক্রির ফলে নির্বাচন ভেস্তে যায়। আর দোষ দেয় আওয়ামী লীগের ওপর।

আওয়ামী লীগই জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছি। আমাদের নেতাকর্মীরা নির্যাতিত হয়েছে, জেল খেটেছে। আমরাই নির্বাচনের সংস্কার করেছি। নির্বাচন কমিশন এখন আইনের মাধ্যমে গঠিত হয়েছে। আগে প্রধানমন্ত্রীর অফিসের ওপর ন্যস্ত ছিল। আমরা স্বাধীন করে দিয়েছি। নির্বাচন কমিশন যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, সে ব্যবস্থা আ.লীগই করে দিয়েছে।

এ সময় ঢাকা সংসদীয় আসনের নৌকার প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে তিনি তরুণদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার পক্ষে তার প্রথম ভোটটি দেওয়ার আহ্বান জানান।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে আয়ের নতুন নতুন আয়ের পথ খুলে দিতে তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ মানুষের হৃদয় জয় করে তাদের ভোট পায়, ভোট চুরি প্রয়োজন হয় না মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, কিন্তু যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে এবং এটা আমার কথা না, হাইকোর্টের রায় আছে। জিয়াউর রহমান, এরশাদের ক্ষমতা গ্রহণ অবৈধ। তারা ভোট চুরি করা ছাড়া টিকতে পারে না।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজধানীতে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, যানজট নিরসনসহ নাগরিক বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ঢাকায় পানির অভাব ছিল। পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই। ওই যাত্রাবাড়ীতে এর অভাবে বিএনপির এমপি সালাউদ্দিনকে জনতা যে ধাওয়া দিয়েছে, তাতে সেই এমপির নাম হয়ে গেছে দৌড় সালাউদ্দিন। কৃষক সার চাইতে গেলে তাদের গুলি করে, শ্রমিককে মজুরির জন্য গুলি করে। অথচ, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন ৮০০ থেকে এখন ১২ হাজার ৫০০ টাকায় মজুরি বৃদ্ধি করেছে। এ ছাড়া, অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা তো আছেই।

‘ঢাকায় পানি, বিদ্যুৎ সমস্যা দূর করেছি। সারা দেশে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। আজকে ২৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি। ঢাকার যানজট দূর করার জন্য মেট্রোরেল চালু হয়েছে। সারা ঢাকায় মোট ৬০০ মেট্রোরেল আমরা করে দেব। আমরা এক্সপ্রেস ওয়ে করে দিয়েছি। নতুন নতুন ফ্লাইওভার করে দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুততর করেছি।’

এ সময় ঢাকায় অবকাঠামো গত বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে ভবিষ্যতে নান্দনিক ঢাকা গড়তে তার পরিকল্পনার কথা জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বর্জ্য নিষ্কাশনে সরকার অত্যাধুনিক পদক্ষেপ নিচ্ছে, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সেটা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। আধুনিক পয়ঃশোধানাগারও করেছি। ঢাকার চারপাশে ওয়াটার ওয়ে হবে। যেসব ব্রিজ নিজে রয়েছে সেখানে নতুন করে ব্রিজ করে দেওয়া হবে। ঢাকা তারের জঞ্জাল সরিয়ে সব মাটির নিচে চলে যাবে। যাতে ঢাকা সুন্দর দেখায় এবং জঞ্জালমুক্ত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। নিম্নআয়ের মানুষকে ফ্লাট করে দিচ্ছি। আমরা প্রাইমারি থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত বৃত্তি দিচ্ছি। এমনকি, বিদেশে পড়াশোনার জন্যও আমরা বৃত্তি দিচ্ছি।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া একাধিকবার প্রধানমন্ত্রী কিন্তু জনগণের জন্য কিছু করেনি। তবে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে। জিয়া মরে যাওয়ার পর টিভিতে দেখাতো সে নাকি ভাঙা সুটকেস আর ছেঁড়া গেঞ্জি ছাড়া কিছুই রেখে যায়নি। পরবর্তীতে আমরা কী দেখলাম, হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছেন তারা। তাহলে ভাঙা সুটকেস কি জাদুর বাক্স হয়ে গেল? সেখান থেকে টাকা বের হয়। এভাবেই তারা ক্ষমতার জাদু পেয়ে নিজেরা টাকার মালিক হয়েছে, দেশকে কিছু দেয়নি। আসে লুটপাট করে খেতে।

কিছু বুদ্ধিজীবী ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে উল্লেখ করে আ.লীগ সভাপতি বলেন, আমাদের অনেকে বুদ্ধিজীবীরা আছেন তারা মানুষকে নানা কথা বলে তাদের বিভ্রান্তি করে। তার জবাবও আমি দেব। কারণ, তারা মানুষকে মিথ্যা তথ্য বলে বিভ্রান্ত করে। তাদের কাজই বিভ্রান্ত করা। কারণ, গণতন্ত্র থাকলেও নাকি তাদের মূল্য থাকে না। আর যদি অস্বাভাবিক সরকার থাকে ওনাদের মূল্য নাকি বেড়ে যায়। কার কতো মূল্য এখন দাঁড়িপাল্লায় মেপে দেখতে হবে আমাদের, সেটা আমরা দেখতে চাই।

আওয়ামী লীগ আছে বলেই মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকে দারিদ্রের হাহাকার শোনা যায় না, খাদ্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। মাছ, মুরগি, ডিম, তরকারি সবই উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পেরেছি। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে পেরেছি। আজকে বেকার তিন ভাগ। সেটিও থাকবে না ইনশা আল্লাহ। সেভাবেই দেশকে গড়ে তুলছি।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে ও ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি ও হুমায়ুন কবিরের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা-১৩ আসনের নৌকার প্রার্থী অ্যাড. জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের নৌকার প্রার্থী আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী, ঢাকা-১০ আসনের প্রার্থী নায়ক ফেরদৌস আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু প্রমুখ।

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যৌথ আয়োজনে এ নির্বাচনি জনসভা শুরু হওয়ার কথা ছিল বিকাল দুইটায়। কিন্তু বেলা ১২টা থেকেই রাজধানীর ১৫টি নির্বাচনি এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা, নৌকার প্রার্থীরা মিছিল নিয়ে এসে হাজির হতে থাকেন। কেউ কেউ নির্বাচনি শোডাউন করেন। নির্ধারিত সময়ের আগেই জনসভাস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়। কলাবাগান মাঠ পেরিয়ে রাস্তায় ঠাঁই হয়, নৌকার মিছিল নিয়ে আসা নেতাকর্মীদের। নানা রং-বেরঙের পোশাক পরিহিত নেতাকর্মীদের শোডাউন ছিল চোখে পড়ার মতো। বলা যায়, নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগে এবং ইংরেজি বছরের প্রথম দিন রাজধানীতে নির্বাচনি শোডাউন করে সাংগঠনিক শক্তি দেখালো আওয়ামী লীগ।

বিকেল তিনটায় জনসভাস্থলে আসেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় নেতাকর্মীরা জয় বাংলা, শেখ হাসিনার আগমন শুভেচ্ছা স্বাগতম স্লোগানে মুখরিত করেন। মঞ্চে উঠেই জাতীয় পতাকা নিয়ে উপস্থিত জনতাকে শুভেচ্ছা জানান ও অভিবাদনের জবাব দেন শেখ হাসিনা।

এ সময় খ্রিষ্টীয় নতুন বছর (২০২৪ সাল) উপলক্ষে দলের পক্ষে দলীয় সভানেত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের পক্ষে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে বসার পর ‘বিজয় নিশান উড়ছে ঐ, খুশির হাওয়ায় ঐ উড়ছে, বাংলার ঘরে ঘরে, মুক্তির আলোই ঝরছে’সহ তিনটি গান গেয়ে তাকে স্বাগত জানানো হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাত নেড়ে শিল্পীদের উৎসাহ দেন। মঞ্চে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা-নেত্রীর পাশাপাশি চিত্রজগতের অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী উপস্থিত ছিলেন।

বিজনেস আওয়ার/১জানুয়ারি/বিএইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

ভোট চুরি করতে পারবে না, তাই নির্বাচন করছে না: শেখ হাসিনা

পোস্ট হয়েছে : ১০:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ জানুয়ারী ২০২৪

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার জবাব দিতে পরিবার–পরিজনসহ ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভোট চুরি করার সুযোগ নেই জেনেই বিএনপি নির্বাচনে না এসে নির্বাচন বানচাল করতে চাইছে বলেও এ সময় মন্তব্য করেন তিনি।

সোমবার (১ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর কলাবাগান মাঠে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আ.লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তব্যে এ কথা জানান তিনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধারাবাহিক প্রচার-প্রচারণার অংশ হিসেবে এ জনসভার আয়োজন করা হয়।

বিএনপির নির্বাচন বর্জনের প্রসঙ্গ তুলে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আজকে নির্বাচন বর্জন করছে। বর্জন করা স্বাভাবিক। কারণ, ভোট চুরি করতে পারবে না, তাই নির্বাচন করছে না। তারা তো ভোট চুরি করে অভ্যস্ত। চুরি করা ভোট দিয়েই তো তাদের সৃষ্টি। ক্ষমতা চুরি, ক্ষমতা দখল, ভোট চুরি, এ ছাড়া আর কিছু পারে না। সেজন্য নির্বাচন করবে না। নির্বাচন বানচাল করবে। মানুষের ভোটের অধিকার আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছি। সেই অধিকার কেড়ে নেবে, নির্বাচন বন্ধ করবে, এত সাহস তাদের নেই। তারা পারবে না।

তিনি বলেন, তারা আগুন দিয়ে সাধারণ মানুষ, বাস, ট্রাক, রেল রেললাইন খুলে দিয়ে রেলে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে মানুষ মারে। তাদের লাশ চায়। ট্রেনে আগুন দিয়েছে শিশুসহ মা পুড়ে মারা গেছে। এর আগে, বাবার সামনে ছেলে পুড়ে মারা যাচ্ছে। এরকম দৃশ্য এই বাংলাদেশের ঘটেছে, ওই বিএনপি-জামায়াত অগ্নিসন্ত্রাসীদের কারণে। কাজেই, এদের ব্যাপারে বাংলাদেশের জনগণকে সবসময় সজাগ থাকতে হবে। ওরা এই দেশের সর্বনাশ করতে চায়।

বিএনপি-জামায়াত অগ্নিসন্ত্রাস করে জনগণের ভোট কেড়ে নিতে চায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর জবাব আপনারা দেবেন কীভাবে? প্রত্যেকে পরিবার পরিজন নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাবেন। আপনার ভোট আপনি দেবেন। কেউ যেন ঠেকাতে না পারে। এর মাধ্যমে অগ্নিসন্ত্রাসের জবাব দেবেন। শুধু ভোটই দেবেন না। আপনাদের ভোট আপনি রক্ষা করে বিএনপি-জামায়াতকে উপযুক্ত জবাব দেবেন।

নির্বাচন ঠেকানোর নামে ২০১৩-১৪ সালে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের ক্ষত এখনো অনেক মানুষ বয়ে বেড়াচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাস লঞ্চ, ভূমি অফিস, জ্বালাওপোড়াও, অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ হত্যা করা- এই আছে বিএনপির। তার বেশি কিছু করতে পারেনি। শুধু মানুষ হত্যা করা, এই তারা পারে।

তিনি বলেন, তারেক জিয়া মুচলেকা দিয়ে চলে গিয়েছিল রাজনীতি করবে না বলে। সেখানে বসে যতো ‘চোরা টাকা’ মানিলন্ডারিং করে পাঠিয়েছে…শুনেছি সে নাকি ক্যাসিনো খেলে অর্থাৎ জুয়া খেলে টাকা কামাই করে। সেই টাকা দিয়ে বাংলাদেশের আবারও অরাজকতা অগ্নিসন্ত্রাস এগুলো শুরু করেছে।

বিএনপির নমিনেশন বাণিজ্যের কারণে ২০১৮ সালে তাদের ভরাডুবি হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনে তারা এসেছিল। নির্বাচন হয়ে গেলো বাণিজ্য। ২০১৮ নির্বাচনে তারেক জিয়া দেয় নমিনেশন, এদিকে গুলশান থেকে ফখরুল দেয় নমিনেশন; অন্যদিকে, পল্টন থেকে রিজভী দেয় নমিনেশন। সকালে বলে এ আমাদের প্রার্থী তো বিকেলে বলে আরেকজন। তারেক রহমানের কথাই ছিল, কে কতো টাকা দেবেন, নমিনেশন নেবেন। টাকা দেবেন না নমিনেশন বাদ। এভাবে বিক্রির ফলে নির্বাচন ভেস্তে যায়। আর দোষ দেয় আওয়ামী লীগের ওপর।

আওয়ামী লীগই জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছি। আমাদের নেতাকর্মীরা নির্যাতিত হয়েছে, জেল খেটেছে। আমরাই নির্বাচনের সংস্কার করেছি। নির্বাচন কমিশন এখন আইনের মাধ্যমে গঠিত হয়েছে। আগে প্রধানমন্ত্রীর অফিসের ওপর ন্যস্ত ছিল। আমরা স্বাধীন করে দিয়েছি। নির্বাচন কমিশন যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, সে ব্যবস্থা আ.লীগই করে দিয়েছে।

এ সময় ঢাকা সংসদীয় আসনের নৌকার প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে তিনি তরুণদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার পক্ষে তার প্রথম ভোটটি দেওয়ার আহ্বান জানান।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে আয়ের নতুন নতুন আয়ের পথ খুলে দিতে তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ মানুষের হৃদয় জয় করে তাদের ভোট পায়, ভোট চুরি প্রয়োজন হয় না মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, কিন্তু যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে এবং এটা আমার কথা না, হাইকোর্টের রায় আছে। জিয়াউর রহমান, এরশাদের ক্ষমতা গ্রহণ অবৈধ। তারা ভোট চুরি করা ছাড়া টিকতে পারে না।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজধানীতে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, যানজট নিরসনসহ নাগরিক বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ঢাকায় পানির অভাব ছিল। পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই। ওই যাত্রাবাড়ীতে এর অভাবে বিএনপির এমপি সালাউদ্দিনকে জনতা যে ধাওয়া দিয়েছে, তাতে সেই এমপির নাম হয়ে গেছে দৌড় সালাউদ্দিন। কৃষক সার চাইতে গেলে তাদের গুলি করে, শ্রমিককে মজুরির জন্য গুলি করে। অথচ, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন ৮০০ থেকে এখন ১২ হাজার ৫০০ টাকায় মজুরি বৃদ্ধি করেছে। এ ছাড়া, অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা তো আছেই।

‘ঢাকায় পানি, বিদ্যুৎ সমস্যা দূর করেছি। সারা দেশে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। আজকে ২৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি। ঢাকার যানজট দূর করার জন্য মেট্রোরেল চালু হয়েছে। সারা ঢাকায় মোট ৬০০ মেট্রোরেল আমরা করে দেব। আমরা এক্সপ্রেস ওয়ে করে দিয়েছি। নতুন নতুন ফ্লাইওভার করে দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুততর করেছি।’

এ সময় ঢাকায় অবকাঠামো গত বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে ভবিষ্যতে নান্দনিক ঢাকা গড়তে তার পরিকল্পনার কথা জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বর্জ্য নিষ্কাশনে সরকার অত্যাধুনিক পদক্ষেপ নিচ্ছে, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সেটা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। আধুনিক পয়ঃশোধানাগারও করেছি। ঢাকার চারপাশে ওয়াটার ওয়ে হবে। যেসব ব্রিজ নিজে রয়েছে সেখানে নতুন করে ব্রিজ করে দেওয়া হবে। ঢাকা তারের জঞ্জাল সরিয়ে সব মাটির নিচে চলে যাবে। যাতে ঢাকা সুন্দর দেখায় এবং জঞ্জালমুক্ত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। নিম্নআয়ের মানুষকে ফ্লাট করে দিচ্ছি। আমরা প্রাইমারি থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত বৃত্তি দিচ্ছি। এমনকি, বিদেশে পড়াশোনার জন্যও আমরা বৃত্তি দিচ্ছি।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া একাধিকবার প্রধানমন্ত্রী কিন্তু জনগণের জন্য কিছু করেনি। তবে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে। জিয়া মরে যাওয়ার পর টিভিতে দেখাতো সে নাকি ভাঙা সুটকেস আর ছেঁড়া গেঞ্জি ছাড়া কিছুই রেখে যায়নি। পরবর্তীতে আমরা কী দেখলাম, হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছেন তারা। তাহলে ভাঙা সুটকেস কি জাদুর বাক্স হয়ে গেল? সেখান থেকে টাকা বের হয়। এভাবেই তারা ক্ষমতার জাদু পেয়ে নিজেরা টাকার মালিক হয়েছে, দেশকে কিছু দেয়নি। আসে লুটপাট করে খেতে।

কিছু বুদ্ধিজীবী ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে উল্লেখ করে আ.লীগ সভাপতি বলেন, আমাদের অনেকে বুদ্ধিজীবীরা আছেন তারা মানুষকে নানা কথা বলে তাদের বিভ্রান্তি করে। তার জবাবও আমি দেব। কারণ, তারা মানুষকে মিথ্যা তথ্য বলে বিভ্রান্ত করে। তাদের কাজই বিভ্রান্ত করা। কারণ, গণতন্ত্র থাকলেও নাকি তাদের মূল্য থাকে না। আর যদি অস্বাভাবিক সরকার থাকে ওনাদের মূল্য নাকি বেড়ে যায়। কার কতো মূল্য এখন দাঁড়িপাল্লায় মেপে দেখতে হবে আমাদের, সেটা আমরা দেখতে চাই।

আওয়ামী লীগ আছে বলেই মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকে দারিদ্রের হাহাকার শোনা যায় না, খাদ্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। মাছ, মুরগি, ডিম, তরকারি সবই উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পেরেছি। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে পেরেছি। আজকে বেকার তিন ভাগ। সেটিও থাকবে না ইনশা আল্লাহ। সেভাবেই দেশকে গড়ে তুলছি।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে ও ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি ও হুমায়ুন কবিরের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা-১৩ আসনের নৌকার প্রার্থী অ্যাড. জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের নৌকার প্রার্থী আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী, ঢাকা-১০ আসনের প্রার্থী নায়ক ফেরদৌস আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু প্রমুখ।

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যৌথ আয়োজনে এ নির্বাচনি জনসভা শুরু হওয়ার কথা ছিল বিকাল দুইটায়। কিন্তু বেলা ১২টা থেকেই রাজধানীর ১৫টি নির্বাচনি এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা, নৌকার প্রার্থীরা মিছিল নিয়ে এসে হাজির হতে থাকেন। কেউ কেউ নির্বাচনি শোডাউন করেন। নির্ধারিত সময়ের আগেই জনসভাস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়। কলাবাগান মাঠ পেরিয়ে রাস্তায় ঠাঁই হয়, নৌকার মিছিল নিয়ে আসা নেতাকর্মীদের। নানা রং-বেরঙের পোশাক পরিহিত নেতাকর্মীদের শোডাউন ছিল চোখে পড়ার মতো। বলা যায়, নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগে এবং ইংরেজি বছরের প্রথম দিন রাজধানীতে নির্বাচনি শোডাউন করে সাংগঠনিক শক্তি দেখালো আওয়ামী লীগ।

বিকেল তিনটায় জনসভাস্থলে আসেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় নেতাকর্মীরা জয় বাংলা, শেখ হাসিনার আগমন শুভেচ্ছা স্বাগতম স্লোগানে মুখরিত করেন। মঞ্চে উঠেই জাতীয় পতাকা নিয়ে উপস্থিত জনতাকে শুভেচ্ছা জানান ও অভিবাদনের জবাব দেন শেখ হাসিনা।

এ সময় খ্রিষ্টীয় নতুন বছর (২০২৪ সাল) উপলক্ষে দলের পক্ষে দলীয় সভানেত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের পক্ষে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে বসার পর ‘বিজয় নিশান উড়ছে ঐ, খুশির হাওয়ায় ঐ উড়ছে, বাংলার ঘরে ঘরে, মুক্তির আলোই ঝরছে’সহ তিনটি গান গেয়ে তাকে স্বাগত জানানো হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাত নেড়ে শিল্পীদের উৎসাহ দেন। মঞ্চে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা-নেত্রীর পাশাপাশি চিত্রজগতের অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী উপস্থিত ছিলেন।

বিজনেস আওয়ার/১জানুয়ারি/বিএইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: