বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: লক্ষ্যমাত্রার পুরন হলো না রপ্তানিতে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ১১ কোটি ডলার। কিন্তু, এ সময় রপ্তানি আয় হয়েছে ২ হাজার ৭৫৪ কোটি ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ কম।
সদ্য সমাপ্ত ডিসেম্বরে রপ্তানি আয় হয়েছে ৫৩০ কোটি ডলার। আলোচ্য সময়ে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৬২ কোটি ডলার। ডিসেম্বরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কম হয়েছে ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে রপ্তানি আয় হয়েছিল ৫৩৬ কোটি ডলার।
রপ্তানি আয়ের বড় খাত তৈরী পোশাক শিল্প। এ খাতেও রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তৈরী পোশাকে রপ্তানি আয় হয়েছে ২ হাজার ৩৩৯ কোটি ডলার। এ সময়ে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৫৩৮ কোটি ডলার। আলোচ্য সময়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি ৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ পিছিয়ে পড়েছে। আলোচ্য সময়ে নিট পোশাকের রপ্তানি ৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেড়েছে। তবে, ওভেন পোশাক রপ্তানি কমেছে ৪ দশমিক ১২ শতাংশ। মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো’র (ইপিবি) প্রকাশিত হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেল বলেছেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি চাপে পড়েছে। বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির কারণে পোশাকের চাহিদা কমে গেছে। এ কারণে আমাদের দেশে আগের মতো ক্রয়াদেশ আসেনি। এছাড়া, পোশাকের দাম কম ছিল। সব মিলিয়ে রপ্তানি আয় কমেছে।
ইপিবি’র তথ্য পর্যালোচনায় জানা গেছে, রপ্তানি আয় চলতি অর্থবছরের অক্টোবর, নভেম্বরের পর ডিসেম্বর মাসেও কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাস পণ্য রপ্তানি বেড়েছিল কিন্তু, এর পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে কমছে। গত অক্টোবরে রপ্তানি আয় কমে ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ। পরের মাস নভেম্বরে কমেছে ৬ শতাংশ। সর্বশেষ বিগত মাসে অর্থাৎ ডিসেম্বরে রপ্তানি আয় কমেছে ১ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। ডিসেম্বর মাসে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৫৩০ কোটি ডলারের, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ কম এবং গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ কম।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে তৈরি পোশাক ছাড়া অধিকাংশ পণ্যের রপ্তানি কমেছে। এর মধ্যে আছে হিমায়িত খাদ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, চমড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, প্রকৌশল পণ্য ইত্যাদি। এর আগে চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে ৪৫৯ কোটি, আগস্টে ৪৭৮ কোটি এবং সেপ্টেম্বরে ৪৩১ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়।
২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল। ওই সময় প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার ২০০ কোটি ডলার। ইপিবির তথ্য অনুসারে, ডিসেম্বর শেষে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পণ্য রপ্তানি সাড়ে ৮ শতাংশের বেশি পিছিয়ে আছে।
ছয় মাসে তৈরি পোশাকের বাইরে রপ্তানি তালিকার শীর্ষে থাকা পণ্যের রপ্তানি কমেছে। গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ে পাট ও পাটপণ্যের রপ্তানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ১০ দশমিক ২৪ শতাংশ। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কম হয়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ। এছাড়া, হোম টেক্সটাইলের রপ্তানি কমেছে ৩৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ। আরও অনেক পণ্যের রপ্তানিই কমার প্রবণতার মধ্যে আছে। অবশ্য কৃষিপণ্যের রপ্তানি চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ২ দশমিক ২৮ শতাংশ বেড়েছে এবং প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানি ১৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেড়েছে।
দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উৎসের কয়েকটি খাত আছে। এর মধ্যে অন্যতম রপ্তানি ও প্রবাসী আয় এবং বৈদেশিক ঋণ, বিনিয়োগ বা অনুদান। প্রবাসী আয় ও রপ্তানি বাড়লে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভ বাড়ে, যা আন্তর্জাতিক লেনদেনে দেশের সক্ষমতা বাড়ায়।
বিজনেস আওয়ার/২জানুয়ারি/বিএইচ