বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের হয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। ভোটে হেরে তিনি এই নির্বাচনকে “কারচুপি” বলে অভিহিত করেছেন।
ইনু বলেন, “আমি জনগণের রায়ে নয়, কারচুপির ভোটে পরাজিত হয়েছি। আশা করি, এটা সবাই তদন্ত করে দেখবেন এবং প্রতিকার করবেন।”
তিনি বলেন, বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত সাংঘর্ষিক কারচুপির ঘটনা ছাড়া সারা দেশে ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। এই মতের সাথে আমি একমত। দ্বিতীয়ত আমি মনে করি যে, বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত যে কারচুপির ঘটনা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে তার ভেতরে দুর্ভাগ্যজনক হলেও কুষ্টিয়া-২ আসন আমার এলাকার অন্তর্ভুক্ত। এখানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মাস্তান বাহিনী ভোটের সাত দিন আগে থেকে যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে সেটাও বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। ভোটের দিন ১৬১ কেন্দ্রের ভেতরে ১৮টি কেন্দ্রে অস্বাভাবিক ভোট লক্ষ্য করা গেছে। যা কারচুপির মাধ্যমে করা হয়েছে। উপর্যুপরি প্রতিবাদ করার পরও, এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের নজরে আনার পরও, কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা কারচুপি বন্ধে পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই আমি মনে করি কুষ্টিয়া-২ আসনে আমি জনগণের ভোটে নয়, কারচুপির ভোটে পরাজিত হয়েছি।
মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা জাসদের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে হাসানুল হক ইনু এসব কথা বলেন।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, যে আক্রমণ হুমকি-ধমকি অত্যাচার শুরু হয়েছে। এটা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। আওয়ামী লীগ বনাম জোটের শরিক দলের সাংঘর্ষিক অবস্থা এলাকায় থাকা উচিত না। এখানে যারা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব তারা বেশিরভাগ নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করেছে।
হাসানুল হক ইনু বলেন, নির্বাচনের ঘটনা নিয়ে জোটের রাজনৈতিক বিষয়ে প্রভাব পড়বে না। জোটের রাজনৈতিক বিষয়ে আমরা সহমত, ঐক্যমতে আছি। জোটের শরিকদের ভেতরে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে বিতর্ক-বিভ্রান্ত সৃষ্টি হয়েছে, সেটা অবশ্যই নিষ্পত্তি করতে হবে। একই সঙ্গে আমাদের জোটের যেসব প্রার্থীর এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী স্বতন্ত্র প্রার্থীর গুন্ডা বাহিনীর আক্রমণ, হুমকি-ধমকি, অত্যাচার শুরু হয়েছে, এটা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। তা না হলে জোটের অভ্যন্তরে সুষ্ঠু পরিবেশ থাকবে না।
তিনি বলেন, অবিলম্বে ঢাকায় জোটের বৈঠক হবে। জোটের প্রার্থীর এলাকাতে যেহেতু আমরা জোটের শরিক সুতরাং এখানে আওয়ামী লীগ বনাম জোটের শরিক দলের সাংঘর্ষিক অবস্থা থাকা উচিত না। এটা নিষ্পত্তি হওয়া উচিত, বন্ধ করে দেওয়া উচিত। সে ব্যাপারে আশা করি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।
হাসানুল হক ইনু বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা জোটের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করেছে, নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করেছে। এটা আমরা নজরে আনবো। এটা তাদের দলীয় বিশৃঙ্খলা, এটা সমাধান করার আহ্বান জানাবো। আমার আসনে আমি সরাসরি বলতে চাই, আওয়ামী লীগের নেতারা এখানে বেশিরভাগ নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করেছে। এখানে কেন্দ্রের দুই-একজন নেতা সরাসরি জড়িত এই মর্মে আমার কাছে অভিযোগ এসেছে।
সংবাদ সম্মেলনে কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মহসিন, মিরপুর উপজেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক আহম্মদ আলীসহ দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর ও ভেড়ামারা) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে টানা তিনবার সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে ২৩ হাজার ভোটে হেরে গেছেন তিনি।
হাসানুল হক ইনুকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিন। স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিন ট্রাক প্রতীকে ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৯৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। হাসানুল হক ইনু নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৯২ হাজার ৪৪৫ ভোট।
বিজনেস আওয়ার/বিএইচ