ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শেয়ারবাজারে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের সুবিধা-অসুবিধা

  • পোস্ট হয়েছে : ১১:২৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৪
  • 58

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর ইতিবাচক ধারায় ফিরছে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার। নির্বাচনের পর লেনদেন হওয়া আট কার্যদিবসের মধ্যে ছয় কার্যদিবসই শেয়ারবাজারের সূচক বেড়েছে। এই সময়ে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক বেড়েছে প্রায় ১০০ পয়েন্ট।

মূল্যসূচকের পাশাপাশি লেনদেনও বাড়ছে। যেখানে ডিএসইর লেনদেন ৪০০ কোটির ঘরে আটকে ছিল, সেখানে লেনদেন ৮০০ কোটিতে ছুঁয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থাও অনেকটা মজবতু হয়েছে।

দীর্ঘ দিন ধরে শেয়ারবাজারে থাকা ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারকে কেন্দ্র করে নানা রকম আলোচনা-সমালোচনা হলেও গত বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি ) ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করার নির্দেশনা জারি করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ফ্লোর প্রাইস দিয়ে মার্কেট ধরে রাখার বিষয়টি স্থায়ী সমাধান ছিল না। ফ্লোর প্রাইস দেয়া হয়েছিল সঙ্কটপূর্ণ একটি সময় বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দিতে। বিষয়টি তখনকার পরিপ্রেক্ষিতে যৌক্তিক ছিল। তবে বর্তমানে ধাপে ধাপে তুলে নিলে মার্কেটের উপর চাপ কম পড়তো। মার্কেট ধীরে ধীরে সচল হচ্ছে। তারপরও মার্কেটে ডিমান্ড সাইড এখনো দুর্বল; সেদিক থেকে বিবেচনা করলে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করা যেত।

ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে নিলে একটি পক্ষের দাবি ছিল মার্কেট স্বাভাবিক ধারায় ফিরবে। বস্তুত মার্কেট পরিচালিত এবং ব্যালান্স হয় ডিমান্ড আর সাপ্লাই এর উপর নিভর করে। দীর্ঘ সময় ধরে মার্কেটে ডিমান্ড সাইড অনেক দুর্বল। লিকুইডিটি হচ্ছে মার্কেটের ব্লাড। মার্কেট থেকে অনেক বেশি মাত্রায় লিকুইডিটি বের হয়েছিল, যার কারণে ভালো কিংবা দুর্বল নির্বিশেষে সব কোম্পানি ক্রাশ করলো। ফ্লোর উঠিয়ে নিলে এই পক্ষের হয়তো দাবি স্টকগুলো দাম আরো কমলে ডিমান্ড সৃষ্টি হবে, কিন্তু অনেক স্টক ইন্ট্রিন্সিক ভ্যালু থেকে কম মূল্যে থাকা সত্ত্বেও ডিমান্ড সৃষ্টি হয়নি।

এখন প্রশ্ন হতে পারে-আগামী সপ্তাহ মার্কেটের জন্য কতটা চেলেন্জিং? প্রথমত, আমি কিছুটা চ্যালেঞ্জিং মনে করছি। তবে প্যানিক হওয়ার কিছু নেই, মার্কেট নিজ থেকে ব্যালান্স হতে শুরু করবে। ক্রেতাদের জন্য ভালো সময় হতে পারে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা আন্তরিক ও সক্রিয় হলে মার্কেট ঘুরে দাঁড়াতে বেশি সময় লাগবে না। বহুমাত্রিক সঙ্কটের কারণে গত কয়েক বছর ধরে মার্কেট এখন তলানিতে এসে পৌঁছেছে।

দ্বিতীয়ত, খাতভিত্তিক মার্কেট কেমন আচরণ করতে পারে? খাতভিত্তিক বলতে গেলে ব্যাঙ্ক খাত কিছুটা চাপ সৃষ্টি করতে পারে, এখাতে বড় মূলধনী বেশ কিছু কোম্পানি রয়েছে। এছাড়া ফিনান্স, ফুয়েল ও পাওয়ার, টেক্সটাইল এসব খাতের কিছু কিছু স্টকে সেল প্রেসার আসবে। আর ওভারঅল মার্কেট নেতিবাচক থাকলে কম বেশি সব স্টকে এর কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। আবার বলবো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হলে মার্কেট ঘুরে দাঁড়াতে বেশি সময় লাগবে না। মার্কেট স্বল্প সময় কিছুটা পতন হলেও আবার ঘুরে দাঁড়াবে।

আর আগামী সপ্তাহ ফোর্স সেল আর ফেয়ার সেল এর বিষয়টিও তাৎপর্যপূর্ণ। শেয়ারবাজারে কিছুটা ঝুঁকি রয়েছে। যারা বেশি ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা করছেন কিছুটা চাপে থাকবে। তবে এখন ফোর্স সেল এর লিমিট বাড়ানো হয়েছে। আর ফেয়ার সেলের ব্যাপারে আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য্য ধরাটাই উত্তম হবে। তবে এক্ষেত্রে মার্জিনধারী বিনিয়োগকারীদের উপর অত্যধিক চাপ পড়তে পারে।

২০২৪ সালকে অনেক বিশ্লেষক শেয়ারবাজারের জন্য ভালো একটি বছর মনে করছেন। আমিও মনে করি ২০২৪ সাল হবে বিনিয়োগের জন্য চমৎকার একটি বছর। ভালো মানের অনেক শেয়ার এখন ইন্ট্রিন্সিক ভ্যালু থেকে কম মূল্যে আছে। দীর্ঘ মেয়াদে ভালোমানের স্টকগুলোতে বিনিয়োগের জন্য ভালো সময়। স্টক ডিভিডেন্ড এর পাশাপাশি ক্যাপিটাল গেইন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । এছাড়া দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোম্পানিটির আর্থিক অবস্থান, ব্যবস্যার মডেল, রেপুটেশন, ডিভিডেন্ড প্রদানের ধারাবাহিকতা, কোম্পানিটির গ্রোথ আছে কিনা, এসব বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বিজনেস আওয়ার/বিএইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

শেয়ারবাজারে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের সুবিধা-অসুবিধা

পোস্ট হয়েছে : ১১:২৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৪

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর ইতিবাচক ধারায় ফিরছে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার। নির্বাচনের পর লেনদেন হওয়া আট কার্যদিবসের মধ্যে ছয় কার্যদিবসই শেয়ারবাজারের সূচক বেড়েছে। এই সময়ে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক বেড়েছে প্রায় ১০০ পয়েন্ট।

মূল্যসূচকের পাশাপাশি লেনদেনও বাড়ছে। যেখানে ডিএসইর লেনদেন ৪০০ কোটির ঘরে আটকে ছিল, সেখানে লেনদেন ৮০০ কোটিতে ছুঁয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থাও অনেকটা মজবতু হয়েছে।

দীর্ঘ দিন ধরে শেয়ারবাজারে থাকা ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারকে কেন্দ্র করে নানা রকম আলোচনা-সমালোচনা হলেও গত বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি ) ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করার নির্দেশনা জারি করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ফ্লোর প্রাইস দিয়ে মার্কেট ধরে রাখার বিষয়টি স্থায়ী সমাধান ছিল না। ফ্লোর প্রাইস দেয়া হয়েছিল সঙ্কটপূর্ণ একটি সময় বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দিতে। বিষয়টি তখনকার পরিপ্রেক্ষিতে যৌক্তিক ছিল। তবে বর্তমানে ধাপে ধাপে তুলে নিলে মার্কেটের উপর চাপ কম পড়তো। মার্কেট ধীরে ধীরে সচল হচ্ছে। তারপরও মার্কেটে ডিমান্ড সাইড এখনো দুর্বল; সেদিক থেকে বিবেচনা করলে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করা যেত।

ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে নিলে একটি পক্ষের দাবি ছিল মার্কেট স্বাভাবিক ধারায় ফিরবে। বস্তুত মার্কেট পরিচালিত এবং ব্যালান্স হয় ডিমান্ড আর সাপ্লাই এর উপর নিভর করে। দীর্ঘ সময় ধরে মার্কেটে ডিমান্ড সাইড অনেক দুর্বল। লিকুইডিটি হচ্ছে মার্কেটের ব্লাড। মার্কেট থেকে অনেক বেশি মাত্রায় লিকুইডিটি বের হয়েছিল, যার কারণে ভালো কিংবা দুর্বল নির্বিশেষে সব কোম্পানি ক্রাশ করলো। ফ্লোর উঠিয়ে নিলে এই পক্ষের হয়তো দাবি স্টকগুলো দাম আরো কমলে ডিমান্ড সৃষ্টি হবে, কিন্তু অনেক স্টক ইন্ট্রিন্সিক ভ্যালু থেকে কম মূল্যে থাকা সত্ত্বেও ডিমান্ড সৃষ্টি হয়নি।

এখন প্রশ্ন হতে পারে-আগামী সপ্তাহ মার্কেটের জন্য কতটা চেলেন্জিং? প্রথমত, আমি কিছুটা চ্যালেঞ্জিং মনে করছি। তবে প্যানিক হওয়ার কিছু নেই, মার্কেট নিজ থেকে ব্যালান্স হতে শুরু করবে। ক্রেতাদের জন্য ভালো সময় হতে পারে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা আন্তরিক ও সক্রিয় হলে মার্কেট ঘুরে দাঁড়াতে বেশি সময় লাগবে না। বহুমাত্রিক সঙ্কটের কারণে গত কয়েক বছর ধরে মার্কেট এখন তলানিতে এসে পৌঁছেছে।

দ্বিতীয়ত, খাতভিত্তিক মার্কেট কেমন আচরণ করতে পারে? খাতভিত্তিক বলতে গেলে ব্যাঙ্ক খাত কিছুটা চাপ সৃষ্টি করতে পারে, এখাতে বড় মূলধনী বেশ কিছু কোম্পানি রয়েছে। এছাড়া ফিনান্স, ফুয়েল ও পাওয়ার, টেক্সটাইল এসব খাতের কিছু কিছু স্টকে সেল প্রেসার আসবে। আর ওভারঅল মার্কেট নেতিবাচক থাকলে কম বেশি সব স্টকে এর কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। আবার বলবো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হলে মার্কেট ঘুরে দাঁড়াতে বেশি সময় লাগবে না। মার্কেট স্বল্প সময় কিছুটা পতন হলেও আবার ঘুরে দাঁড়াবে।

আর আগামী সপ্তাহ ফোর্স সেল আর ফেয়ার সেল এর বিষয়টিও তাৎপর্যপূর্ণ। শেয়ারবাজারে কিছুটা ঝুঁকি রয়েছে। যারা বেশি ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা করছেন কিছুটা চাপে থাকবে। তবে এখন ফোর্স সেল এর লিমিট বাড়ানো হয়েছে। আর ফেয়ার সেলের ব্যাপারে আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য্য ধরাটাই উত্তম হবে। তবে এক্ষেত্রে মার্জিনধারী বিনিয়োগকারীদের উপর অত্যধিক চাপ পড়তে পারে।

২০২৪ সালকে অনেক বিশ্লেষক শেয়ারবাজারের জন্য ভালো একটি বছর মনে করছেন। আমিও মনে করি ২০২৪ সাল হবে বিনিয়োগের জন্য চমৎকার একটি বছর। ভালো মানের অনেক শেয়ার এখন ইন্ট্রিন্সিক ভ্যালু থেকে কম মূল্যে আছে। দীর্ঘ মেয়াদে ভালোমানের স্টকগুলোতে বিনিয়োগের জন্য ভালো সময়। স্টক ডিভিডেন্ড এর পাশাপাশি ক্যাপিটাল গেইন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । এছাড়া দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোম্পানিটির আর্থিক অবস্থান, ব্যবস্যার মডেল, রেপুটেশন, ডিভিডেন্ড প্রদানের ধারাবাহিকতা, কোম্পানিটির গ্রোথ আছে কিনা, এসব বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বিজনেস আওয়ার/বিএইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: