ঢাকা , বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারে লেনদেন বাড়বে, দরপতন হলে তৈরি হবে ক্রেতা

  • পোস্ট হয়েছে : ১২:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৪
  • 115

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: আজ রোববার থেকে তালিকাভুক্ত ৩৫ কোম্পানির শেয়ার বাদে বাকি সবগুলোর দরের ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন দর সীমা উঠে যাচ্ছে। কার্যকর হচ্ছে স্বাভাবিক সার্কিট ব্রেকার। ২০০ টাকা পর্যন্ত শেয়ারদরের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দিনে ওই সব শেয়ারের দর যেমন সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বাড়তে পারবে, তেমনি ১০ শতাংশ কমেও কেনাবেচা হতে পারবে। এর চেয়ে বেশি দরের শেয়ারের ক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকারের ভিন্ন ভিন্ন হার রয়েছে।

সাধারণ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে বাজারসংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কেউ কেউ মনে করছেন, ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ায় শুরুতে কিছু শেয়ারে দরপতন হবে। হয়তো কিছু শেয়ারে ক্রেতাও মিলবে না। আবার কারও কারও ধারণা, যত শঙ্কা করা হচ্ছে, তত খারাপ অবস্থা হবে না। বরং কোনো শেয়ারের দর বেশি কমলে ওই দরই নতুন বিনিয়োগকারী তৈরি করবে।
তবে সবারই একমত যে, নতুন পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়বে। ফলে লেনদেনের পরিমাণ বাড়বে। যদিও মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে নিতে সম্প্রতি সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অব্যাহত রাখার যে নীতি বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষণা করেছে, তার কারণে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হতে পারে। তারা বলেন, ঋণের সুদের হার বাড়ছে, যা বিনিয়োগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ধাপে ধাপে না করে একবারে সিংহভাগ শেয়ারের ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার ‘ভালো সিদ্ধান্ত’ বলে মনে করেন প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। তিনি সমকালকে বলেন, বিএসইসি ভালো সিদ্ধান্তই নিয়েছে। এর থেকেও ভালো সিদ্ধান্ত হলো ‘স্ট্যান্ডার্ড সার্কিট ব্রেকার’ নীতি অনুসরণ করা।

ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারে বাজারে বিরূপ কোনো পরিস্থিতি হবে কিনা– এমন প্রশ্নে মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, অনেক শেয়ারই ফ্লোর প্রাইসের ওপরে লেনদেন হয়েছে। যেসব শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে ছিল, সেগুলোর মধ্যে সাময়িকভাবে সামান্য কিছু শেয়ারের দর কমতে পারে। কারণ সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো নয়। এর মধ্যে অনেক কোম্পানির মুনাফা কমলেও ফ্লোর প্রাইসের কারণে সেগুলোর শেয়ারদর সমন্বয় হয়নি। এখন হয়তো দর সমন্বয় হবে। কোনো শেয়ারের দর অল্প সময়ে বেশি কমলে, সেগুলোর বাজারদরই নতুন চাহিদা তৈরি করবে। এতে অল্প সময়ের মধ্যে বাজার তার স্বাভাবিক গতি ফিরে পাবে বলে আশা করা যায়।

শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদ সমকালকে বলেন, তিনি শুরু থেকেই শেয়ারদরে ফ্লোর প্রাইস আরোপের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। কারণ, এটি অর্থনীতি ও বাজার ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত। অন্তত শেয়ারবাজারে এমন ধারণা প্রতিষ্ঠা করা একেবারেই ঠিক হয়নি। তাঁর দ্বিতীয় যুক্তি ছিল– তথাকথিত ফ্লোর প্রাইস কাউকে রক্ষা করবে না, বরং মার্জিন ঋণ নিয়ে যাদের বিনিয়োগ ছিল তাদের অনেককে ফকির বানাবে। তাঁর কথাই সত্য হয়েছে। ফলে যখন লেনদেন তলানিতে নামল, কর্মীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হিমশিম খেল, তখন অনেক ব্রোকার ও মার্চেন্ট ব্যাংকার ফ্লোর প্রাইস তোলার দাবি তুলেছেন। শেষ পর্যন্ত বিএসইসি ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করেছে।

ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের ফল কেমন হবে– এমন প্রশ্নে আবু আহমেদ বলেন, এখন চাহিদা ও জোগানই শেয়ারের প্রকৃত দর নির্ধারণ করে দেবে। শুরুর কয়েকদিন হয়তো দরপতন হবে। তবে দরপতনেই নতুন চাহিদা তৈরি করবে। ভালো শেয়ারে যাদের বিনিয়োগ রয়েছে, তারা ধৈর্য ধরে থাকলে পুনরায় দর ফিরে পাবেন। তবে যেসব মন্দ শেয়ারের দর অযৌক্তিকভাবে বহুগুণ হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।

৩৫ শেয়ারের ১৬টি সূচকে নেই : এদিকে সূচকের বড় পতন রোধে যে ৩৫ কোম্পানির শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস বহাল রাখা হয়েছে, তার ১৬টিই প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্সে আজ থেকে থাকছে না। ছয় মাস অন্তর লেনদেনের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে কোন কোন শেয়ার সূচকে থাকবে, তা মূল্যায়ন করা হয়। সর্বশেষ মূল্যায়নে ৮৩টি শেয়ার বাদ পড়েছে। ওই ৮৩টির মধ্যে উল্লেখিত ৩৫ শেয়ারের ১৬টি রয়েছে।

সূচক থেকে বাদ পড়া কোম্পানিগুলো হলো– ইউনাইটেড পাওয়ার, সামিট পাওয়ার, আইডিএলসি, শাহজীবাজার পাওয়ার, ডরিন পাওয়ার, বারাকা পাওয়ার, খুলনা পাওয়ার, শাইনপুকুর সিরামিক, এনভয় টেক্সটাইল, ন্যাশনাল পলিমার, শাশা ডেনিম, ইনডেক্স এগ্রো, কেডিএস এক্সেসরিজ, ন্যাশনাল হাউজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, কাট্টলী টেক্সটাইল এবং সায়হাম কটন।

বিজনেস আওয়ার/বিএইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারে লেনদেন বাড়বে, দরপতন হলে তৈরি হবে ক্রেতা

পোস্ট হয়েছে : ১২:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৪

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: আজ রোববার থেকে তালিকাভুক্ত ৩৫ কোম্পানির শেয়ার বাদে বাকি সবগুলোর দরের ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন দর সীমা উঠে যাচ্ছে। কার্যকর হচ্ছে স্বাভাবিক সার্কিট ব্রেকার। ২০০ টাকা পর্যন্ত শেয়ারদরের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দিনে ওই সব শেয়ারের দর যেমন সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বাড়তে পারবে, তেমনি ১০ শতাংশ কমেও কেনাবেচা হতে পারবে। এর চেয়ে বেশি দরের শেয়ারের ক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকারের ভিন্ন ভিন্ন হার রয়েছে।

সাধারণ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে বাজারসংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কেউ কেউ মনে করছেন, ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ায় শুরুতে কিছু শেয়ারে দরপতন হবে। হয়তো কিছু শেয়ারে ক্রেতাও মিলবে না। আবার কারও কারও ধারণা, যত শঙ্কা করা হচ্ছে, তত খারাপ অবস্থা হবে না। বরং কোনো শেয়ারের দর বেশি কমলে ওই দরই নতুন বিনিয়োগকারী তৈরি করবে।
তবে সবারই একমত যে, নতুন পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়বে। ফলে লেনদেনের পরিমাণ বাড়বে। যদিও মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে নিতে সম্প্রতি সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অব্যাহত রাখার যে নীতি বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষণা করেছে, তার কারণে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হতে পারে। তারা বলেন, ঋণের সুদের হার বাড়ছে, যা বিনিয়োগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ধাপে ধাপে না করে একবারে সিংহভাগ শেয়ারের ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার ‘ভালো সিদ্ধান্ত’ বলে মনে করেন প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। তিনি সমকালকে বলেন, বিএসইসি ভালো সিদ্ধান্তই নিয়েছে। এর থেকেও ভালো সিদ্ধান্ত হলো ‘স্ট্যান্ডার্ড সার্কিট ব্রেকার’ নীতি অনুসরণ করা।

ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারে বাজারে বিরূপ কোনো পরিস্থিতি হবে কিনা– এমন প্রশ্নে মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, অনেক শেয়ারই ফ্লোর প্রাইসের ওপরে লেনদেন হয়েছে। যেসব শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে ছিল, সেগুলোর মধ্যে সাময়িকভাবে সামান্য কিছু শেয়ারের দর কমতে পারে। কারণ সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো নয়। এর মধ্যে অনেক কোম্পানির মুনাফা কমলেও ফ্লোর প্রাইসের কারণে সেগুলোর শেয়ারদর সমন্বয় হয়নি। এখন হয়তো দর সমন্বয় হবে। কোনো শেয়ারের দর অল্প সময়ে বেশি কমলে, সেগুলোর বাজারদরই নতুন চাহিদা তৈরি করবে। এতে অল্প সময়ের মধ্যে বাজার তার স্বাভাবিক গতি ফিরে পাবে বলে আশা করা যায়।

শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদ সমকালকে বলেন, তিনি শুরু থেকেই শেয়ারদরে ফ্লোর প্রাইস আরোপের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। কারণ, এটি অর্থনীতি ও বাজার ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত। অন্তত শেয়ারবাজারে এমন ধারণা প্রতিষ্ঠা করা একেবারেই ঠিক হয়নি। তাঁর দ্বিতীয় যুক্তি ছিল– তথাকথিত ফ্লোর প্রাইস কাউকে রক্ষা করবে না, বরং মার্জিন ঋণ নিয়ে যাদের বিনিয়োগ ছিল তাদের অনেককে ফকির বানাবে। তাঁর কথাই সত্য হয়েছে। ফলে যখন লেনদেন তলানিতে নামল, কর্মীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হিমশিম খেল, তখন অনেক ব্রোকার ও মার্চেন্ট ব্যাংকার ফ্লোর প্রাইস তোলার দাবি তুলেছেন। শেষ পর্যন্ত বিএসইসি ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করেছে।

ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের ফল কেমন হবে– এমন প্রশ্নে আবু আহমেদ বলেন, এখন চাহিদা ও জোগানই শেয়ারের প্রকৃত দর নির্ধারণ করে দেবে। শুরুর কয়েকদিন হয়তো দরপতন হবে। তবে দরপতনেই নতুন চাহিদা তৈরি করবে। ভালো শেয়ারে যাদের বিনিয়োগ রয়েছে, তারা ধৈর্য ধরে থাকলে পুনরায় দর ফিরে পাবেন। তবে যেসব মন্দ শেয়ারের দর অযৌক্তিকভাবে বহুগুণ হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।

৩৫ শেয়ারের ১৬টি সূচকে নেই : এদিকে সূচকের বড় পতন রোধে যে ৩৫ কোম্পানির শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস বহাল রাখা হয়েছে, তার ১৬টিই প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্সে আজ থেকে থাকছে না। ছয় মাস অন্তর লেনদেনের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে কোন কোন শেয়ার সূচকে থাকবে, তা মূল্যায়ন করা হয়। সর্বশেষ মূল্যায়নে ৮৩টি শেয়ার বাদ পড়েছে। ওই ৮৩টির মধ্যে উল্লেখিত ৩৫ শেয়ারের ১৬টি রয়েছে।

সূচক থেকে বাদ পড়া কোম্পানিগুলো হলো– ইউনাইটেড পাওয়ার, সামিট পাওয়ার, আইডিএলসি, শাহজীবাজার পাওয়ার, ডরিন পাওয়ার, বারাকা পাওয়ার, খুলনা পাওয়ার, শাইনপুকুর সিরামিক, এনভয় টেক্সটাইল, ন্যাশনাল পলিমার, শাশা ডেনিম, ইনডেক্স এগ্রো, কেডিএস এক্সেসরিজ, ন্যাশনাল হাউজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, কাট্টলী টেক্সটাইল এবং সায়হাম কটন।

বিজনেস আওয়ার/বিএইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: