শেয়ারবাজার থেকে টাকা সংগ্রহের অপেক্ষায় থাকা মোবাইল অপারেটর কোম্পানি রবি আজিয়াটার ২০১৯ সালে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে মাত্র ৪ পয়সা। আর শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ (এনএভিপিএস) রয়েছে ১২.৬৪ টাকার। এই অবস্থার মধ্য দিয়ে কোম্পানিটি শেয়ারবাজার থেকে বড় অর্থ সংগ্রহের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে।
শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের জন্য রবির আবেদন করা নিরীক্ষত খসড়া প্রসপেক্টাস থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি রবি আজিয়াটার শেয়ারবাজারে আসার কথা ঘোষনা দেয় মূল মালিক মালয়েশিয়ার কোম্পানি আজিয়াটা মালয়েশিয়া। এরপর ২ মার্চ বিএসইসিতে কোম্পানিটির পক্ষে ইস্যু ম্যানেজার আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টস আইপিও’র জন্য আবেদন করেছে।
জানা গেছে, অভিহিত মূল্যে অর্থাৎ প্রতিটি ১০ টাকায় ৫২ কোটি ৩৭ লাখ ৯৩ হাজার ৩৩৪টি শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ৫২৩ কোটি ৭৯ লাখ ৩৩ হাজার ৩৪০ টাকা সংগ্রহ করবে রবি। নতুন শেয়ারের মধ্যে ৩৮৭ কোটি ৭৪ লাখ ২৪ হাজার টাকার শেয়ার আইপিওতে ইস্যু করা করা হবে বিনিয়োগকারিদের জন্য। বাকি ১৩৬ কোটি ৫ লাখ ৯ হাজার ৩৪০ টাকার শেয়ার ইস্যু করা হবে কোম্পানির কর্মচারী ও পরিচালকদের জন্য।
খসড়া প্রসপেক্টাস অনুযায়ি, রবির ২০১৯ সালে টার্নওভার হয়েছে ৭ হাজার ৪৮১ কোটি ১৭ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। এই টার্নওভার থেকে সব ব্যয় শেষে নিট মুনাফা হয়েছে ১৬ কোটি ৯০ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। যা শেয়ারপ্রতি হিসেবে মাত্র ৪ পয়সা।
এ বিষয়ে রবি আজিয়াটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বিজনেস আওয়ারকে বলেন, ২০১৯ সালে অতিরিক্ত কর আরোপের কারনে ৯৫ শতাংশ সঞ্চিতি গঠন করতে হয়েছে। ওই বছরে টার্নওভার ট্যাক্স ০.৭৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ শতাংশ করায় এমনটি করতে হয়েছে। আমরা আইপিও’র শর্ত হিসেবে এই টার্নওভার ট্যাক্স কমিয়ে অন্যান্যদের সমান করার কথা বলেছি।
এদিকে রবির কর সঞ্চিতি পুরোটা বাদ দিলেও ২০১৯ সালে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয় ৮০ পয়সা। দেখা গেছে, কোম্পানিটির ২০১৯ সালে করপূর্ব মুনাফা হয়েছিল ৩৭৮ কোটি ৯০ লাখ ৭ হাজার টাকা। যা শেয়ারপ্রতি হিসেবে হয় ৮০ পয়সা। আর স্বাভাবিক কর হার ৪৫ শতাংশ (টার্নওভার ট্যাক্স ছাড়াই) বিবেচনায় মুনাফা হয় ২০৮ কোটি ৩৯ লাখ ৫৩ হাজার টাকা বা ইপিএস ৪৪ পয়সা। আর তালিকাভুক্ত গ্রামীণফোনের ন্যায় ৪০ শতাংশ কর হার বিবেচনায় মুনাফা হয় ২২৭ কোটি ৩৪ লাখ ৪ হাজার টাকা বা ইপিএস ৪৮ পয়সা।
এর আগে ২০১৮ সালে রবির ইপিএস হয়েছিল ৪৬ পয়সা। তবে ২০১৭ সালে শেয়ারপ্রতি ২ পয়সা ও ২০১৬ সালে ১ টাকা ৮৮ পয়সা লোকসান হয়েছিল।
কোম্পানিটির বর্তমানে ৪ হাজার ৭১৪ কোটি ১৪ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন রয়েছে। এই মূলধনের কোম্পানিটির নিট সম্পদ রয়েছে ৫ হাজার ৯৫৮ কোটি ৮৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকার। এ হিসাবে কোম্পানিটিতে শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ (এনএভিপিএস) দাড়িঁয়েছে ১২.৬৪ টাকায়।
এর আগে ২০০৯ সালে শেয়ারবাজারে একমাত্র মোবাইল অপারেটর কোম্পানি হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়া গ্রামীণফোনের বর্তমানে পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১ হাজার ৩৫০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এই মূলধনের কোম্পানিটির ২০১৯ সালে শেয়ারপ্রতি ২৫.৫৬ টাকা হিসাবে নিট মুনাফা হয়েছে ৩ হাজার ৪৫১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। আর শেয়ারপ্রতি সম্পদ রয়েছে ২৮.৪০ টাকা।
শেয়ারবাজারে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি পরিশোধিত মূলধন রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংকের। এ ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ২ হাজার ৯২০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। তবে রবি তালিকাভুক্ত হলে সর্বোচ্চ পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানি হবে। এ কোম্পানির বর্তমানের ৪ হাজার ৭১৪ কোটি ১৪ লাখ টাকাসহ আইপিও পরবর্তীতে বেড়ে দাঁড়াবে ৫ হাজার ২৩৭ কোটি ৯৩ লাখ ৩৩ হাজার ৩৫০ টাকা। যা হবে গ্রামীণফোনের প্রায় ৪ গুণ।
উল্লেখ্য, রবি আজিয়াটা ১৯৯৫ সালের ২২ অক্টোবর গঠিত হয় এবং একইদিনে ব্যবসা শুরু করে।
বিজনেস আওয়ার/৩০ মে, ২০২০/আরএ
One thought on “শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে চাওয়া রবির ইপিএস ৪ পয়সা”