বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: ফরিদপুরে পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ৮ লাখ টাকার বিনিময়ে কনস্টেবল পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রতারণার অভিযোগে তিন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে ফরিদপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
গতকাল শুক্রবার (১৬ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত ফরিদপুরের নগরকান্দা ও সালথা উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- নগরকান্দা উপজেলার কাইচাইল ইউনিয়নের সুতারকান্দা গ্রামের মিরান মোল্লা (৫৫), পুড়াপাড়া ইউনিয়নের পুড়াপাড়া গ্রামের আক্কাচ মোল্লা (৪৫) ও সালথা উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের পুরুরা গ্রামের বিল্লাল মাতুব্বর (৬২)।
শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর আড়াইটার দিকে নিজ কার্যালয়ের লবিতে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম।
পুলিশ সুপার বলেন, পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগের জন্য গতকাল শুক্রবার ফরিদপুর পুলিশ লাইন্সে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা শেষে চাকরি প্রার্থী ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ইউনিয়নের পশ্চিম আলগী গ্রামের গোপাল বিশ্বাসের মেয়ে দীপা রাজবংশী (১৯) চাকরি না পেয়ে বিমর্ষ হয়ে পড়েন। পরে তিনি জানান চাকরি পাওয়ার জন্য কয়েকজন প্রতারককে আট লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে তিনি প্রতারিত হয়েছেন। এ ঘটনায় তার মা সাধনা বিশ্বাস বাদী হয়ে গ্রেফতার হওয়া তিন ব্যক্তিসহ আরও ২-৩ জনকে আসামি করে শুক্রবার সন্ধ্যায় ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।
মামলায় ওই নারী উল্লেখ করেন, তিনি একজন গৃহিণী। তার স্বামী কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাদের মেয়ে দীপা রাজবংশী এসএসসি পাস করে বর্তমানে বাড়িতে অবস্থান করছে। বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে নিয়োগের সংবাদ দেখে তার মেয়ে দীপা রাজবংশী বাংলাদেশ পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে গত ১৮ জানুয়ারি আবেদন করে। এরপর তাদের বাড়ির পাশে আসামি মিরান মোল্লার আত্মীয়রা বিষয়টি জানতে পারেন। পরে ২৯ জানুয়ারি সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে আসামি মিরান মোল্লা ও বিল্লাল মাতুব্বর সাধনার বাড়িতে এসে জানায় তাদের চেনা জানা আক্কাছ মোল্লা পুলিশের বড় কর্মকর্তা। আক্কাছ সুপারিশ করলেই তার মেয়ে দীপার পুলিশে চাকরি হয়ে যাবে।
মামলার এজাহারে সাধনা বিশ্বাস উল্লেখ করেন, গত ৪ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টার দিকে আমি ও আমার স্বামী মেয়েকে নিয়ে ফরিদপুর শহরের নীলটুলি মহল্লায় অবস্থিত একটি প্রাইভেট ক্লিনিকের তিন তলায় তাদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলতে গেলে চাকরি পেতে আট লাখ টাকা লাগবে বলে জানায়। তখন প্রতারক চক্র আমাদের সরলতার সুযোগ নিয়ে নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে আমার মেয়ের স্বাক্ষর নেয় এবং আমার স্বামীর কাছ থেকে স্বাক্ষরিত একটি চেক নেয়। তবে আমার মেয়ের চাকরি না হওয়ায় তাদের কাছে আমার মেয়ের স্বাক্ষরিত স্ট্যাম্প ও স্বামীর স্বাক্ষরিত চেক ফেরত চাইলে তারা তা ফেরত না দিয়ে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি দেখায়।
পুলিশ সুপার মোর্শেদ আলম জানান, এই অভিযোগ পাওয়ার পরই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। আমরা বলতে চাই পুলিশে নিয়োগ হবে যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে। এখানে প্রভাব বিস্তারের কোনো সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত ওই তিন ব্যক্তির কাছ থেকে দীপা রাজবংশীসহ আরও দুইজন কনস্টেবল পদে চাকরি প্রার্থীর আবেদন ফরম, বিভিন্ন ব্যাংকের ১৪টি ফাঁকা চেক, ১০০ টাকা মূল্যের সাতটি ও ৫০ টাকা মূল্যের একটিসহ মোট আটটি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প জব্দ করা হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফরিদপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক মোহাম্মদ হান্নান মিয়া বলেন, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আক্কাছ মোল্লার নামে দ্রুত বিচার আইন, মারামারিসহ মোট আটটি মামলা রয়েছে। শনিবার বিকেলে তাদের আদালতে হাজির করা হবে। আদালতে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি না দিলে পরবর্তীতে তাদের রিমান্ড চাওয়া হবে।
বিজনেস আওয়ার/এএইচএ