বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: দীর্ঘদিন ধরেই দেশের বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। প্রতিবছর রমজান মাসে পেঁয়াজের চাহিদা থাকে অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। এমন প্রেক্ষাপটে আসন্ন রমজানে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় আসন্ন রমজানে বাজারে সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক রাখতে রোজার আগেই ভারত থেকে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করতে চায় সরকার।
দ্বিপাক্ষিক চুক্তির আওতায় বাংলাদেশে এই পেঁয়াজ রপ্তানি করবে ভারত। চলতি সপ্তাহেই এই পেঁয়াজ আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত অফিসিয়াল কাগজ পাওয়া যেতে পারে। অফিসিয়াল কাগজ পওয়ার ৩ দিনের মধ্যে ভারত থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ আনতে চায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ফলে আগামী সপ্তাহে অর্থাৎ মার্চের প্রথম সপ্তাহে দেশের বাজারে আসতে পারে ভারতীয় পেঁয়াজ।
এ লক্ষ্যে কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলরা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু নিশ্চিত করেছেন রোজার আগেই ভারত থেকে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ বাংলাদেশে এসে পৌঁছাবে।
সম্প্রতি গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসবে না। এটি পুরোপুরি গুজব। ভারত থেকে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ভারত থেকে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আসার বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এরই মধ্যে এই পেঁয়াজ রপ্তানিতে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে ভারত সরকার। তিন থেকে চারদিনের মধ্যে অফিসিয়াল কাগজ চলে আসবে। দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে রোজার আগেই এই পেঁয়াজ দেশে চলে আসবে।
সূত্র আরও জানিয়েছে, সম্প্রতি গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসবে না। এটি পুরোপুরি গুজব। ভারত থেকে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ভারত থেকে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকলেও অফিসিয়াল কাগজ এখনো পাওয়া যায়নি। আশা করা হচ্ছে চলতি সপ্তাহেই অফিসিয়াল কাগজ চলে আসবে। অফিসিয়ালি কাগজ পাওয়ার পর ভারত থেকে পেঁয়াজ আনতে খুব বেশিদিন লাগবে না। তিন থেকে চারদিনের মধ্যে ভারত থেকে পেঁয়াজ আনা সম্ভব।
তিনি বলেন, ভারতের পেঁয়াজ পাওয়া নিয়ে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই। সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। রোজার আগেই ভারতের পেঁয়াজ বাংলাদেশে আসবে। আমরা আশা করছি সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মার্চের প্রথম সপ্তাহেই ভারত থেকে পেঁয়াজ চলে আসবে।
যোগাযোগ করলে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, ‘ভারতের পেঁয়াজ বাংলাদেশে আসবে শতভাগ নিশ্চিত। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে ডকুমেন্টেশন শেষ হয়ে যাবে। রোজার আগেই ইনশাআল্লাহ আমরা ভারত থেকে পেঁয়াজ আনতে পারবো।’
গত আগস্টে ভারতের বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে দেশটির সরকার। এরপর গত অক্টোবরে পেঁয়াজের সর্বনিম্ন রপ্তানিমূল্য নির্ধারণ করা হয় টনপ্রতি ৮০০ মার্কিন ডলার।
তিনি বলেন, ‘ভারত থেকে পেঁয়াজ রোজার আগেই আসবে। ওরা বলেছে কাগজ পেলে তিনদিনের মধ্যে ওরা বর্ডারে পেঁয়াজ পাঠিয়ে দেবে। ওদের কৃষকরা পেঁয়াজের দাম পাচ্ছে না। নাসিকে (ভারতের মহারাষ্ট্রের এলাকা) পেঁয়াজের কেজি ২০ থেকে ২৫ রুপি।’
গত আগস্টে ভারতের বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে দেশটির সরকার। এরপর গত অক্টোবরে পেঁয়াজের সর্বনিম্ন রপ্তানিমূল্য নির্ধারণ করা হয় টনপ্রতি ৮০০ মার্কিন ডলার। কিন্তু এসব পদক্ষেপ খুব বেশি কার্যকর না হওয়ায় গত ৭ ডিসেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার।
চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড বা বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক মহাপরিচালকের কার্যালয়। ভারতের এই নিষেধাজ্ঞার পর বাংলাদেশের বাজারে হু হু করে বাড়ে পেঁয়াজের দাম।
এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু গত ২৪ জানুয়ারি টেলিফোনে ভারতের বাণিজ্য, শিল্প, বস্ত্র ও ভোগ্যপণ্য এবং খাদ্য ও গণবিতরণ বিষয়ক মন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে আলাপ করেন। এ সময় আহসানুল ইসলাম টিটু ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রীকে এক লাখ টন চিনি ও ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ সরবরাহের পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানান।
পেঁয়াজের এই দাম বাড়ার ক্ষেত্রে খুচরা ব্যবসায়ীদের কোনো হাত নেই, লাভও নেই। আমরা পাইকারি বাজার থেকে যে দামে কিনে আনি তার ওপর ভিত্তি করে পেঁয়াজ বিক্রি করি। পাইকারিতে দাম বাড়লে আমরা দাম বাড়াতে বাধ্য।
এরপর ইকোনমিক টাইমসের খবরে বলা হয়, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা সম্পূর্ণ উঠিয়ে নেয়নি। তবে দেশটি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভিত্তিতে সীমিত পরিমাণে পেঁয়াজ রপ্তানি করবে।
ওই খবরে আরও বলা হয়, ঠিক কী পরিমাণে পেঁয়াজ ভারত সরকার রপ্তানি করবে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আর কবে থেকে এই রপ্তানি প্রক্রিয়া শুরু হবে, সে বিষয়েও জানাতে পারেনি ইকোনমিক টাইমস।
এদিকে, গত ২০ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ‘দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা’ বিষয়ক টাক্সফোর্সের সভা শেষে প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু সাংবাদিকদের জনান, ভারত থেকে পেঁয়াজ এবং চিনি আমদানি জন্য যে প্রক্রিয়াগুলো আমরা নিয়েছি, নীতিগতভাবে ভারত সরকার পেঁয়াজের বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে। এখন আমরা অফিসিয়ালি কাগজ পেলে বাংলাদেশে যাতে দ্রুত পেঁয়াজ এসে পৌঁছাতে পারে সে পদক্ষেপ নেবো।
তবে ২২ ফেব্রুয়ারি ইকোনমিক টাইমসের এক খবরে বলা হয়, ভারত চাল রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক তুলছে না এবং বেসরকারিখাতে পেঁয়াজের রপ্তানি বন্ধ থাকবে। ওই খবরে বলা হয়, চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল মোদি সরকার। গত মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) তারা আবার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, সেই সময় এগিয়ে আনার প্রশ্ন নেই, বরং নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ আরও বাড়ানো হতে পারে।
এই সংবাদ আসার পর ভারত বাংলাদেশকে পেঁয়াজ দেবে না- এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। তাতে বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ার পালে আরও হাওয়া লাগে। গত তিন দিনে দেশের বাজারে খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০ টাকার বেড়ে গেছে। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি মুড়ি কাটা পেঁয়াজ ১২০ থেকে ১৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। যা গত ২০ ফেব্রুয়ারি ১০০ থেকে ১১০ টাকা ছিল।
পেঁয়াজের দামের বিষয়ে মালিবাগ হাজীপড়ার ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘বাজারে এখন ভারতের পেঁয়াজ নেই। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার পর আমাদের বাজারে দাম বাড়ে। এক লাফে ৭০ টাকা থেকে পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকা হয়ে যায়। এরপর শুনলাম ভারত পেঁয়াজ দেবে। কিন্তু দুদিন ধরে শুনছি ভারত পেঁয়াজ দেবে না, এতে আবার নতুন করে দাম বেড়েছে। গত দুই দিনে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে গেছে।’
প্রায় একই ধরনের কথা বলেন খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী খায়রুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার পর এক দফা পেঁয়াজের দাম বাড়ে। এরপর শোনা গেলো বাংলাদেশকে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ দেবে ভারত। তাতে দুদিন পেঁয়াজের দাম স্থির থাকে। কিন্তু এখন আবার শুনছি ভারত পেঁয়াজ রপ্তনিতে নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছে। এতে দাম নতুন করে আরও ২০ টাকা বেড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পেঁয়াজের এই দাম বাড়ার ক্ষেত্রে খুচরা ব্যবসায়ীদের কোনো হাত নেই, লাভও নেই। আমরা পাইকারি বাজার থেকে যে দামে কিনে আনি তার ওপর ভিত্তি করে পেঁয়াজ বিক্রি করি। পাইকারিতে দাম বাড়লে আমরা দাম বাড়াতে বাধ্য। আবার পাইকারি বাজার থেকে কম দামে কিনতে পারলে কম দামে বিক্রি করি।’
বিজনেস আওয়ার/বিএইচ