বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: সড়ক ও রেল যোগাযোগ সহজ হওয়ায় যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বেড়েছে বহুগুণ। সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পণ্য পরিবহনের ভোগান্তিও।
তবে এই সংকট কাটাতে তৈরি হচ্ছে অত্যাধুনিক ট্রাক টার্মিনাল। সংশ্লিষ্টদের আশা, সেটি চালু হলে বদলে যাবে স্থলবন্দরের চিত্র।
বন্দর কর্মকর্তারা বলছেন, ২৪ একর জমির ওপর ২৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হচ্ছে বৃহত্তম কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল। নির্মাণ শেষ হলে এখানে একসঙ্গে এক হাজার ২০০ ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক দাঁড়াতে পারবে। যা দুই দেশের বাণিজ্যে আরও গতি আনবে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসএসআর’র জিএম মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন বলেন, কার্গো ভেহিকেল ট্রাক টার্মিনালের নির্মাণকাজ ২০২৪ সালের জুন নাগাদ শেষ হবে। তখন বদলে যাবে বন্দরের চিত্র।
ঢাকার এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি এই টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু করে।
বেনাপোল কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, বেনাপোল স্থলবন্দর বর্তমানে ১২৭ একর জমির ওপর নির্মিত। এখানে ৫০টি শেড ও ইয়ার্ড রয়েছে। এসব শেড ও ইয়ার্ডে পণ্য ধারণক্ষমতা মাত্র ৫০ হাজার টন। কিন্তু বর্তমানে বন্দরটিতে এক লাখ টনের বেশি পণ্য রয়েছে।
“এর মধ্যে প্রতিদিন ভারত থেকে প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়। ফলে জায়গা সঙ্কটে অনেক পণ্য রাখা হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে।”
এ ছাড়া ভারতীয় ট্রাকগুলো পণ্য নিয়ে দিনের পর দিন বসে থাকে বন্দরে। জায়গা না থাকায় আনলোড করতে পারছে না। উন্নয়ন কাজ শেষ হলে এ সমস্যা অনেকটা কেটে যাবে বলে মনে করেন সাজেদুর রহমান।
ইন্দো-বাংলা চেম্বার অব কমার্স সাব-কমিটির পরিচালক মতিয়ার রহমান বলেন, “বেনাপোল বন্দরে জায়গা সঙ্কট দীর্ঘদিনের। আমরা বারবার জায়গা বাড়ানোর দাবি করেছিলাম। অবশেষে সরকার কথা শুনছেন। এর মধ্যে বেনাপোল বন্দর সম্প্রসারণে নতুন জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
“কয়েকটি আধুনিক পণ্যাগার নির্মাণ করা হয়েছে। স্টাফ ডরমিটোরি ভবন এবং পণ্য পরিমাপের দুটি স্কেল স্থাপন করা হয়েছে। সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। নিরাপত্তা বাড়াতে উঁচু প্রাচীরও নির্মাণ করা হয়েছে।”
বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে সড়ক ও রেল যোগাযোগ সহজ হয়েছে। এ বন্দর দিয়ে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বাণিজ্য ও যাত্রী চলাচলও বহুগুণ বেড়েছে।
কিন্তু বেনাপোল স্থলবন্দরে দীর্ঘদিন ধরে অনুন্নত পুরানো অবকাঠামো ও বন্দর অভ্যন্তরে জায়গার অভাবে রাজস্ব আয় এবং আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধিতে নানা প্রতিবন্ধকতা চলছে। তবে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য আরও সহজ করতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প চলমান আছে।
বেনাপোল বন্দরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) রেজাউল করিম বলেন, গেল ১৫ বছরে বন্দর আধুনিকায়নে সরকারি ও বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ৬৮৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। সরকার আন্তরিক হওয়ায় এ উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে এসব অবকাঠামোগত উন্নয়ন অধিকাংশ শেষ হয়েছে, কিছু চলমান আছে।
এসব উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে ২৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে কার্গো ভেহিকেল ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ ছাড়াও রয়েছে ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪১ একর জমি অধিগ্রহণ, ১৯৩ কোটি টাকায় আন্তর্জাতিক বাস ও প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল নির্মাণ।
এ ছাড়া ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্দরের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা, ৩৯ কোটি টাকার সুউচ্চ দেয়াল, ৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে স্টাফ ডরমিটোরি ভবন এবং এক কোটি ৬২ লাখ টাকায় পণ্য পরিমাপের দুইটি স্কেল রয়েছে।
নতুন নতুন অবকাঠামো নির্মাণে বেনাপোল বন্দরের সক্ষমতা আরও বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ২৪ একর জমির ওপর নির্মাণাধীন ভেহিকেল ট্রাক টার্মিনালের কাজ আগামী জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। টার্মিনালটি চালু হলে বেনাপোল বন্দরে কোনো যানজট থাকবে না।
এসব অবকাঠামো ও অটোমেশন সুবিধায় এরই মধ্যে বন্দরে রাজস্ব ও আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে গতি বেড়েছে বলেও জানান তিনি।
বন্দরের পরিসংখ্যান মতে, ২০১১-১২ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দরে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা। একই সময়ে আমদানির পরিমাণ ১২ লাখ টন থেকে বেড়ে হয়েছে ২০ লাখ ৩৫ হাজার ৪৯৯ টন।
বন্দরের প্রকল্প পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাসান আলী জানান, বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। এসব কাজ শেষ হলে বন্দরের সক্ষমতা ও রাজস্ব আয় দুটোই বাড়বে। বন্দরের চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য আরও সহজ করবে।
বিজনেস আওয়ার/১৫ মার্চ/ এ আর