ঢাকা , শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাবা সাবেক যুগ্ম সচিব, মেয়ে ‘অভিজাত চোর’

  • পোস্ট হয়েছে : ০৩:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ মার্চ ২০২৪
  • 113

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: জুবাইদা সুলতানা (৪৪)। বাবা অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব। পারিবারিক পরিচয় ব্যবহার না করে রাজধানীর অভিজাত পাড়ার বিভিন্ন হোটেল, ক্লাবে ভুয়া পরিচয় দিয়ে সেমিনার ও নানা অনুষ্ঠানে রেজিস্ট্রেশন ও অংশগ্রহণ করতেন। চুরি করাই ছিল তার মূল উদ্দেশ্য।

শনিবার (১৬ মার্চ) দুপুরে মিন্টু রোডে নিজ কার্যালয়ে ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ জুবাইদা সুলতানার প্রসঙ্গে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, জুবাইদা অভিজাত চোর। তার টার্গেট চাকরিজীবী নারী ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়া নারী শিক্ষার্থীরা। তিনি ঢাকা ক্লাব, গুলশান ক্লাব, রেডিসন এবং সোনারগাঁও এর মতো অভিজাত হোটেলে যেতেন মূলত চুরি করতে। গত ৩ মার্চ ঢাকা ক্লাবে গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজি বিষয়ক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে চিকিৎসক ডা. ফারহানা হক অংশ নেন। সেখানে জুবাইদা সুলতানাও ছিলেন। তিনি ডা. ফারহানা হকের মোবাইল, ব্যাগ ও গহনা চুরি করেন। ডা. ফারহানা হকের জিনিসপত্র বিক্রি করে দিলেও তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর নিজের মোবাইলে হস্তান্তর করে জুবাইদা। এরপর জুবাইদা নিজেই ডা. ফারহানা সাজেন।

এ বিষয়ে গত ১২ মার্চ রমনা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। মামলা দায়ের পর থেকে ছায়া তদন্ত শুরু করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

হারুন অর রশীদ আরও বলেন, তদন্তের এক পর্যায়ে শুক্রবার (১৫ মার্চ) তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে মহিলাদের ১৬টি হ্যান্ডব্যাগ, ৪টি মোবাইল, ৫টি বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড, অলঙ্কার, বিভিন্ন সুপার শপের কার্ড, ৪টি পেনড্রাইভ জব্দ করা হয়।

জুবাইদা সুলতানা গত ১২ বছর ধরে রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত ক্লাব ও হোটেলে চুরি করছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৮ শত মোবাইল ছাড়াও ল্যাপটপ ও দামি ভ্যানিটি ব্যাগ চুরি করেছেন তিনি। জুবাইদা বিভিন্ন পাঁচ-তারকা হোটেলে ও রেস্টুরেন্টে পেশাজীবি বিভিন্ন সংগঠনের সভা-সিম্পোজিয়াম, সেমিনারে পারিবারিক কোনো পরিচয়ে রেজিস্ট্রেশন করতেন না। একেক সময় ভিন্ন ভিন্ন নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করে অংশগ্রহণ করতেন। এরপর সুযোগ বুঝে চুরি করে সটকে পড়তেন। চোরাই জিনিস ব্যবহার করে যাপন করতেন অভিলাষী জীবন।

তিনি আরও বলেন, জুবাইদার বাবা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব। তার বোন গ্রামীণ ফোনের বড় কর্মকর্তা। তার এসব খারাপ অভ্যাসের জন্য তাকে পরিবার থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। জুবাইদা বিয়ে করেছেন দুটি। তার বর্তমান স্বামীর তিনি চতুর্থ স্ত্রী। তার স্বামী বর্তমানে সৌদি প্রবাসী। তার স্বামী সৌদিতে থাকলেও জুবাইদার চুরি করা জিনিসপত্র বিক্রি করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতেন।

কারো সহায়তা ছাড়া গত ১২ বছর ধরে একাধারে চুরি করা সম্ভব না। অভিজাত পাড়ায় এ ধরনের চুরি বড় ধরনের ব্যবসা। চোরের নামে ইনভাইটেশন, রেজিস্ট্রেশন কারা করে দিচ্ছে? বলেন পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

বিজনেস আওয়ার/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

বাবা সাবেক যুগ্ম সচিব, মেয়ে ‘অভিজাত চোর’

পোস্ট হয়েছে : ০৩:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ মার্চ ২০২৪

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: জুবাইদা সুলতানা (৪৪)। বাবা অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব। পারিবারিক পরিচয় ব্যবহার না করে রাজধানীর অভিজাত পাড়ার বিভিন্ন হোটেল, ক্লাবে ভুয়া পরিচয় দিয়ে সেমিনার ও নানা অনুষ্ঠানে রেজিস্ট্রেশন ও অংশগ্রহণ করতেন। চুরি করাই ছিল তার মূল উদ্দেশ্য।

শনিবার (১৬ মার্চ) দুপুরে মিন্টু রোডে নিজ কার্যালয়ে ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ জুবাইদা সুলতানার প্রসঙ্গে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, জুবাইদা অভিজাত চোর। তার টার্গেট চাকরিজীবী নারী ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়া নারী শিক্ষার্থীরা। তিনি ঢাকা ক্লাব, গুলশান ক্লাব, রেডিসন এবং সোনারগাঁও এর মতো অভিজাত হোটেলে যেতেন মূলত চুরি করতে। গত ৩ মার্চ ঢাকা ক্লাবে গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজি বিষয়ক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে চিকিৎসক ডা. ফারহানা হক অংশ নেন। সেখানে জুবাইদা সুলতানাও ছিলেন। তিনি ডা. ফারহানা হকের মোবাইল, ব্যাগ ও গহনা চুরি করেন। ডা. ফারহানা হকের জিনিসপত্র বিক্রি করে দিলেও তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর নিজের মোবাইলে হস্তান্তর করে জুবাইদা। এরপর জুবাইদা নিজেই ডা. ফারহানা সাজেন।

এ বিষয়ে গত ১২ মার্চ রমনা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। মামলা দায়ের পর থেকে ছায়া তদন্ত শুরু করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

হারুন অর রশীদ আরও বলেন, তদন্তের এক পর্যায়ে শুক্রবার (১৫ মার্চ) তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে মহিলাদের ১৬টি হ্যান্ডব্যাগ, ৪টি মোবাইল, ৫টি বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড, অলঙ্কার, বিভিন্ন সুপার শপের কার্ড, ৪টি পেনড্রাইভ জব্দ করা হয়।

জুবাইদা সুলতানা গত ১২ বছর ধরে রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত ক্লাব ও হোটেলে চুরি করছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৮ শত মোবাইল ছাড়াও ল্যাপটপ ও দামি ভ্যানিটি ব্যাগ চুরি করেছেন তিনি। জুবাইদা বিভিন্ন পাঁচ-তারকা হোটেলে ও রেস্টুরেন্টে পেশাজীবি বিভিন্ন সংগঠনের সভা-সিম্পোজিয়াম, সেমিনারে পারিবারিক কোনো পরিচয়ে রেজিস্ট্রেশন করতেন না। একেক সময় ভিন্ন ভিন্ন নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করে অংশগ্রহণ করতেন। এরপর সুযোগ বুঝে চুরি করে সটকে পড়তেন। চোরাই জিনিস ব্যবহার করে যাপন করতেন অভিলাষী জীবন।

তিনি আরও বলেন, জুবাইদার বাবা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব। তার বোন গ্রামীণ ফোনের বড় কর্মকর্তা। তার এসব খারাপ অভ্যাসের জন্য তাকে পরিবার থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। জুবাইদা বিয়ে করেছেন দুটি। তার বর্তমান স্বামীর তিনি চতুর্থ স্ত্রী। তার স্বামী বর্তমানে সৌদি প্রবাসী। তার স্বামী সৌদিতে থাকলেও জুবাইদার চুরি করা জিনিসপত্র বিক্রি করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতেন।

কারো সহায়তা ছাড়া গত ১২ বছর ধরে একাধারে চুরি করা সম্ভব না। অভিজাত পাড়ায় এ ধরনের চুরি বড় ধরনের ব্যবসা। চোরের নামে ইনভাইটেশন, রেজিস্ট্রেশন কারা করে দিচ্ছে? বলেন পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

বিজনেস আওয়ার/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: