ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১২ বছর বয়সে কী হয়েছিল, অভিনেত্রী চূর্ণী গাঙ্গুলীর

  • পোস্ট হয়েছে : ০৫:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
  • 112

বিনোদন ডেস্ক : কিছুদিন আগেও ‘মিটু’ বিতর্ক জমেছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বাংলা থিয়েটারের জগতে যৌন হয়রানির ঘটনা নিয়ে হৈচৈ বেশ। টলিপাড়ায় এর মধ্যেই অভিনেত্রী চূর্ণী গাঙ্গুলী জানালেন শৈশবে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন তিনি! নারীর প্রতি যৌন নিগ্রহ নিয়ে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে নিজের সঙ্গে ঘটা হাড় হিম করা ঘটনার কথা এদিনে প্রকাশ্যে আনলেন নন্দিত পরিচালক ও অভিনেতা কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী।ফেসবুক পোস্টে চূর্ণী লেখেন, ‘আজ প্রায় ছয় বছর আগের একটি খুব ব্যক্তিগত ইনস্টাগ্রাম পোস্ট মনে করছি।

তাতে লেখা ছিল, আমি হয়তো তরুণ ছিলাম, কিন্তু আমি ভুলে যাইনি। #MeToo’ ….’। এরপরই মেয়েবেলায় তাঁর সঙ্গে ঘটা ন্যক্কারজনক ঘটনার কথা ফেসবুকে ভাগ করে নেন চূর্ণী।অভিনেত্রী লেখেন, ‘আমার ভেতরে লম্বা সময় ধরে এই কান্না জমে আছে, শিশু নির্যাতনের শিকার আমি, নীরব থেকেছি।

একজন তার বেড়ে ওঠা বছরগুলোতে চুপ থেকেছে, কারণ সে প্রকাশ্যে এই সত্যিটা বলতে পারেনি।সেই অপরাধী স্বাভাবিকভাবেই শাস্তি পায়নি। তবে আমি আজ বিশ্বাস করতে চাই, কর্মফল সে ভুগবেই। কিন্তু আমি এখনো তার কাছ থেকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।

অন্তত এটা সে করতে পারে। আমাকে যে ট্রমার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, সারা জীবনের ক্ষত, যা আমাকে সহ্য করতে হয়েছে, তার জন্য ক্ষমা তো চাওয়াই উচিত। আমি তার নাম নিতে পারব না এই ভেবে- সে হয়তো আরাম করছে। এবং ঠিক এটাই তাকে মাত্র ১২ বছর বয়সী এক কিশোরীর থেকে সুবিধা নিতে বাধ্য করেছে। যে তাঁর সারল্যের জেরে তখনো পৃথিবীটাকে চিনে উঠতে পারেনি।

অতীতের সেই যন্ত্রণাদায়ক স্মৃতি হাতড়ে অভিনেত্রী আরো লেখেন, ‘আমার মনে আছে আমি বিভ্রান্ত ছিলাম, এবং পুরোপুরি অবিশ্বাসের মধ্যে ছিলাম। আমার মনে আছে, যখন আমি পারতাম ঘর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে যেতাম… গলা শুকনো এবং একটি ভারী হৃদয় নিয়ে, সাহায্য চাওয়ার মতো কেউ ছিল না। আমি বিধ্বস্ত থাকতাম এবং ভয়ে কাঁপতাম, কারণ আমার নিষ্পাপ মন তাঁকে বিশ্বাস করেছিল।’

তিনি লেখেন, ‘আজকের এই পোস্টটি আমার স্বাক্ষর হতে দিন। শুধু থিয়েটারে নিরাপদ স্থানের জন্য নয়, বরং সমাজে বড় আকারে, প্রতিটি ঘরে, প্রতিটি ক্ষেত্রে নিরাপদ স্থানের জন্য। পারলে আপনার গল্প শেয়ার করুন, যখন পারেন। তাহলেই এ ধরনের গুরুতর অপব্যবহারগুলো প্রতিরোধ করা যেতে পারে। এটি নিরাময়ের দিকে প্রথম পদক্ষেপও। আজ আমি যেভাবে এই ঘটনা শেয়ার করে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেছি। আমার কথা শোনার জন্য ধন্যবাদ’।

তবে আজও নিজের ওপর ঘটা অত্যাচার ভোলেননি চূর্ণী, অপেক্ষায় রয়েছেন অপরাধীর ক্ষমাপ্রার্থনার। আজও সে সমাজে বুক চিতিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তিনি লেখেন, ‘আমার মনে হয়, তার যৌন বিকৃত স্বভাব পরিবর্তিত হয়েছে। তার অঙ্গভঙ্গি এবং ভালোমানুষির অভিনয় আজও আমাকে ক্রুদ্ধ করে তোলে।’

এই পোস্ট সেই সেই নির্যাতনকারীর কাছেও পৌঁছবে- বিশ্বাস তাঁর। চূর্ণীর আশা সেই মানুষরূপী পশু নিশ্চয়ই বুঝবে, তিনি ছোট থাকতে পারেন, তবে কোনো কিছু ভোলেননি।

তিনি জানান, পরিচালক ও অভিনেতা তার স্বামী কৌশিক গাঙ্গুলীর কোনো কিছুই গোপন রাখেননি চূর্ণী। এত দিনে সমাজের সামনে এই কঠিন সত্যিটা তুলে ধরার পর স্ত্রীর সাহসিকতাকে কুর্নিশ কৌশিকের। তিনি লেখেন, ‘আমাদের পরিবারের অফুরান আদর, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা তোমার জন্য রইল চিরকাল। তোমার কঠিন ব্যথার স্মৃতির ভার লাঘব হোক আমাদের আস্থায়, আলিঙ্গনে। এত বছর গুমরে থাকা বাষ্প তোমার মনের যে ক্ষতি করেছে, তার বিচার কিন্তু ঠিক হচ্ছে অন্য আঙ্গিকে, অন্য চেহারায়! আমি নিজে চোখে সেই দোষীর তিলে তিলে ক্ষয় দেখছি! একদিন পুড়ে ছাই হয়ে যাবে সেই হাত ! তত দিন সভ্যতা আর দায়িত্বের জোব্বায় আমার ঘৃণাকে ঢেকে সামলে রাখলা

বিজনেস আওয়ার/২৬ এপ্রিল/ রানা

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

১২ বছর বয়সে কী হয়েছিল, অভিনেত্রী চূর্ণী গাঙ্গুলীর

পোস্ট হয়েছে : ০৫:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

বিনোদন ডেস্ক : কিছুদিন আগেও ‘মিটু’ বিতর্ক জমেছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বাংলা থিয়েটারের জগতে যৌন হয়রানির ঘটনা নিয়ে হৈচৈ বেশ। টলিপাড়ায় এর মধ্যেই অভিনেত্রী চূর্ণী গাঙ্গুলী জানালেন শৈশবে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন তিনি! নারীর প্রতি যৌন নিগ্রহ নিয়ে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে নিজের সঙ্গে ঘটা হাড় হিম করা ঘটনার কথা এদিনে প্রকাশ্যে আনলেন নন্দিত পরিচালক ও অভিনেতা কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী।ফেসবুক পোস্টে চূর্ণী লেখেন, ‘আজ প্রায় ছয় বছর আগের একটি খুব ব্যক্তিগত ইনস্টাগ্রাম পোস্ট মনে করছি।

তাতে লেখা ছিল, আমি হয়তো তরুণ ছিলাম, কিন্তু আমি ভুলে যাইনি। #MeToo’ ….’। এরপরই মেয়েবেলায় তাঁর সঙ্গে ঘটা ন্যক্কারজনক ঘটনার কথা ফেসবুকে ভাগ করে নেন চূর্ণী।অভিনেত্রী লেখেন, ‘আমার ভেতরে লম্বা সময় ধরে এই কান্না জমে আছে, শিশু নির্যাতনের শিকার আমি, নীরব থেকেছি।

একজন তার বেড়ে ওঠা বছরগুলোতে চুপ থেকেছে, কারণ সে প্রকাশ্যে এই সত্যিটা বলতে পারেনি।সেই অপরাধী স্বাভাবিকভাবেই শাস্তি পায়নি। তবে আমি আজ বিশ্বাস করতে চাই, কর্মফল সে ভুগবেই। কিন্তু আমি এখনো তার কাছ থেকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।

অন্তত এটা সে করতে পারে। আমাকে যে ট্রমার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, সারা জীবনের ক্ষত, যা আমাকে সহ্য করতে হয়েছে, তার জন্য ক্ষমা তো চাওয়াই উচিত। আমি তার নাম নিতে পারব না এই ভেবে- সে হয়তো আরাম করছে। এবং ঠিক এটাই তাকে মাত্র ১২ বছর বয়সী এক কিশোরীর থেকে সুবিধা নিতে বাধ্য করেছে। যে তাঁর সারল্যের জেরে তখনো পৃথিবীটাকে চিনে উঠতে পারেনি।

অতীতের সেই যন্ত্রণাদায়ক স্মৃতি হাতড়ে অভিনেত্রী আরো লেখেন, ‘আমার মনে আছে আমি বিভ্রান্ত ছিলাম, এবং পুরোপুরি অবিশ্বাসের মধ্যে ছিলাম। আমার মনে আছে, যখন আমি পারতাম ঘর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে যেতাম… গলা শুকনো এবং একটি ভারী হৃদয় নিয়ে, সাহায্য চাওয়ার মতো কেউ ছিল না। আমি বিধ্বস্ত থাকতাম এবং ভয়ে কাঁপতাম, কারণ আমার নিষ্পাপ মন তাঁকে বিশ্বাস করেছিল।’

তিনি লেখেন, ‘আজকের এই পোস্টটি আমার স্বাক্ষর হতে দিন। শুধু থিয়েটারে নিরাপদ স্থানের জন্য নয়, বরং সমাজে বড় আকারে, প্রতিটি ঘরে, প্রতিটি ক্ষেত্রে নিরাপদ স্থানের জন্য। পারলে আপনার গল্প শেয়ার করুন, যখন পারেন। তাহলেই এ ধরনের গুরুতর অপব্যবহারগুলো প্রতিরোধ করা যেতে পারে। এটি নিরাময়ের দিকে প্রথম পদক্ষেপও। আজ আমি যেভাবে এই ঘটনা শেয়ার করে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেছি। আমার কথা শোনার জন্য ধন্যবাদ’।

তবে আজও নিজের ওপর ঘটা অত্যাচার ভোলেননি চূর্ণী, অপেক্ষায় রয়েছেন অপরাধীর ক্ষমাপ্রার্থনার। আজও সে সমাজে বুক চিতিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তিনি লেখেন, ‘আমার মনে হয়, তার যৌন বিকৃত স্বভাব পরিবর্তিত হয়েছে। তার অঙ্গভঙ্গি এবং ভালোমানুষির অভিনয় আজও আমাকে ক্রুদ্ধ করে তোলে।’

এই পোস্ট সেই সেই নির্যাতনকারীর কাছেও পৌঁছবে- বিশ্বাস তাঁর। চূর্ণীর আশা সেই মানুষরূপী পশু নিশ্চয়ই বুঝবে, তিনি ছোট থাকতে পারেন, তবে কোনো কিছু ভোলেননি।

তিনি জানান, পরিচালক ও অভিনেতা তার স্বামী কৌশিক গাঙ্গুলীর কোনো কিছুই গোপন রাখেননি চূর্ণী। এত দিনে সমাজের সামনে এই কঠিন সত্যিটা তুলে ধরার পর স্ত্রীর সাহসিকতাকে কুর্নিশ কৌশিকের। তিনি লেখেন, ‘আমাদের পরিবারের অফুরান আদর, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা তোমার জন্য রইল চিরকাল। তোমার কঠিন ব্যথার স্মৃতির ভার লাঘব হোক আমাদের আস্থায়, আলিঙ্গনে। এত বছর গুমরে থাকা বাষ্প তোমার মনের যে ক্ষতি করেছে, তার বিচার কিন্তু ঠিক হচ্ছে অন্য আঙ্গিকে, অন্য চেহারায়! আমি নিজে চোখে সেই দোষীর তিলে তিলে ক্ষয় দেখছি! একদিন পুড়ে ছাই হয়ে যাবে সেই হাত ! তত দিন সভ্যতা আর দায়িত্বের জোব্বায় আমার ঘৃণাকে ঢেকে সামলে রাখলা

বিজনেস আওয়ার/২৬ এপ্রিল/ রানা

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: