স্পোর্টস ডেস্ক: গেম ডেভোলপমেন্ট তথা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড হন্যে হয়ে লেগস্পিনার খুঁজে বেড়াচ্ছে। যে কোনোভাবেই হোক লেগস্পিনার খুঁজে বের করার মিশনে ব্যস্ত বিসিবি। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অযত্নে-অবহেলায় পড়ে থাকা কম বয়সী লেগিদের খুজে বের করে তাদেরক সঠিক ও যথাযথ পরিচর্য্যা এবং প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ করে দিতে তৎপর এখন বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগ।
বিসিবি পরিচালক ও গেম ডেভেলপমেন্ট চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ সুজন গতকাল শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, তারা স্পিনার তৈরির কাজে হাত দিয়েছেন। এরই মধ্যে তৃণমূল পর্যায় থেকে কম বয়সী লেগস্পিনার খুঁজে বের করার কাজ শুরু হয়েছে।
এক পাকিস্তানী লেগস্পিন কোচকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি গত ৬ মাস ধরে নীরবে নিভৃতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পড়ে থাকা লেগ স্পিনারদের খুঁজে বের করার কাজ করছেন এবং তার অধীনে এর মধ্যে ৮০ জন স্পিনারকে মনোনীত করা হয়েছে উচ্চতর ও বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের জন্য।যে পাকিস্তানি লেগস্পিন কোচ এই লেগস্পিনার হান্ট কার্যক্রম পরিচালনা করছেন এবং তাদের আগামীর জন্য তৈরির মিশনে নেমে পড়েছেন তিনি কে, তার নাম ধাম কী? শনিবার সংবাদ সম্মেলনে তা জানিয়েছেন খালেদ মাহমুদ সুজন।
তিনি বলেছেন, ‘ডেভেলপমেন্টে শাহেদ মাহমুদ আছে লেগস্পিনার কোচ হিসেবে। আপনারা হয়তো জানেনও না, আমরা জানাইনি, গত আট মাস ধরে উনি আমাদের সঙ্গে আছেন। ইতোমধ্যেই তার হাত ধরে অনেক লেগ স্পিনার খুঁজে বের করেছি আমরা। ৮০ জন খুঁজে বের করেছি।’
‘শাহেদ বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে গিয়েছে। রংপুর, ফরিদপুর,রাজশাহী- ওখানে গিয়ে কাজ করে আমরা ট্যালেন্টগুলোকে বের করেছি। শিগগিরই আমরা ২ ভাগে ভাগ করে ৪০ জন করে ৮০ জনের সঙ্গে ক্যাম্প শুরু করব। ২ ও ৩ মে এই ক্যাম্প শুরু করব। ওখান থেকে আমরা সিলেকশনটাকে আরও ছোট করব, সেখান থেকে ২০ জনে এনে আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অনুশীলনের ব্যবস্থা করব।’
কে এই শাহেদ মেহমুদ? কী তার পরিচয়? কী তার ব্যাকগ্রাউন্ড? বিসিবির অন্যতম শীর্ষকর্তা ও গেম ডেভেলপমেন্ট প্রধান খালেদ মাহমুদ সুজনের ওই বক্তব্যের পর মিডিয়া কর্মী থেকে শুরু করে অনেক ক্রিকেট অনুরাগীও ক্রিকইনফো, ক্রিকবাজ , গুগল এবং উইকিপিডিয়ায় তন্ন তন্ন করে খুঁজেছেন। কিন্তু তেমন কিছু পাননি শাহেদ মেহমুদ সম্পর্কে।
পাবেন কি করে? শাহেদ মেহমুদ কিন্তু কোন হাই প্রোফাইল কোচ নন। তার খেলোয়াড়ি প্রোফাইলও আহামরী কিছু নয়। তিনি কখনো পাকিস্তান জাতীয় দলের হয়ে খেলেননি। টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে কখনোই পাকিস্তান জাতীয় দলে ডাক পাননি শাহেদ মেহমুদ। এমনকি কোচ হিসেবেও তিনি পাকিস্তানের জাতীয় পর্যায়ে কাজ করেননি। জাতীয় দল তো বহুদুরে, পাকিস্তান ‘এ’, পাকিস্তান যুব (অনূর্ধ-১৯) দলের কোচিং প্যানেলেও ছিলেন না কখনো।
খেলোয়াড়ি জীবনে ১৮ বছর বয়সে একবার পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দলে ডাক পেয়েছিলেন। জাগো নিউজের পাঠকরা অবশ্য শনিবারই জেনেছেন, বর্তমানে যিনি বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট-এর সঙ্গে রয়েছেন সেই পাকিস্তানি লেগস্পিন কোচ শাহেদ মেহমুদ খেলোয়াড়ি জীবনে একজন দক্ষ লেগস্পিনার হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছিলেন।
লাহোরে জন্ম ও বেড়ে ওঠা শাহেদ মেহমুদ লেগব্রেকের পাশাপাশি ফ্লিপার ও গুগলিও ছুঁড়তেও ছিলেন সমান পারদর্শী। পাশাপাশি নিচের দিকে হাত খুলে ব্যাটিংটাও বেশ ভালই পারতেন। ঢাকা লিগে তার বেশ কিছু আক্রমণাত্মক ও ঝোড়ো ইনিংস আছে। একই ম্যাচে বিধ্বংসী বোলিংয়ের পাশাপাশি ঝোড়ো ইনিংস খেলে দল জেতানোর বেশ কিছু স্মরণীয় পারফরমেন্স আছে এ পাকিস্তানির।
মোহামেডানের হয়ে বড় ম্যাচে বেশ কয়েকবার পিঞ্চ হিটিং করতে তাকে ওপেনার হিসেবেও খেলানো হয়েছে। হাত খুলে বিগ হিট নিয়ে সেখানে তিনি সফলও হয়েছেন। ৯০ দশকের মাঝামাঝি থেকে বর্তমান শতাব্দীর প্রথম ভাগ ঢাকাই ক্রিকেট তথা বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিচিত মুখ ছিলেন তিনি।
ঢাকা মোহামেডানের হয়ে প্রায় অর্ধযুগ প্রিমিয়ার লিগ খেলেছেন। পাশাপাশি এক বছর ব্রাদার্স ইউনিয়ন আর বিমানের হয়েও এক বছর করে প্রিমিয়ার লিগে অংশ নিয়েছেন। পাশাপাশি ২০০০-২০০১ এবং ২০০১-২০০২ মৌসুমে চট্টগ্রাম বিভাগের হয়ে জাতীয় লিগও খেলেছেন শাহেদ মেহমুদ।কেমন ছিল তার বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সেই দিনগুলো? আজ পড়ন্ত বিকেলে জাগো নিউজের সাথে একান্ত আলাপে সেই গল্পই করেছেন ৪৮ বছর বয়সী শাহেদ মেহমুদ। ঢাকা লিগে কিভাবে খেলতে এসেছিলেন, মনে আছে?
শাহেদ মেহমুদের চটপটে জবাব, ‘হ্যাঁ, খুব মনে আছে। আমি তখন ১৮ বছরের উচ্ছল যুবক। লাহোরে ক্লাব ক্রিকেট খেলি। সেই ক্লাবে আমার সহযোগি ছিলেন নাদিম ইউনুস। তিনিই আমাকে প্রস্তাব দেন ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে মোহামেডানের হয়ে খেলার। আমি ১৯৯৬ সালে প্রথম ঢাকা লিগ খেলতে আসি। টানা ৬ বছর মোহামেডানে খেলি। তারপর এক বছর ব্রাদার্স ইউনিয়ন আর একবছর বিমানের হয়েও ঢাকা লিগে অংশ নেই।’
‘বাংলাদেশের তখনকার একমাত্র ফাস্টক্লাস আসর জাতীয় লিগেও দুবার অংশ নিয়েছি। খেলেছি চট্টগ্রামের হয়ে। তখন নান্নু ভাই আর আকরাম ভাই খেলতেন চট্টগ্রামে। আমার বোলিং পারফরমেন্স ছিল দারুণ। আমি প্রথমবার জাতীয় লিগে চিটাগাংয়ের হয়ে খেলি। সেবার আমি ৬ ম্যাচে ৫৬ উইকেট পাই। যা মনে হয় এখনো রেকর্ড হয়ে আছে। পরেরবারও আমি জাতীয় লিগে ৪৪ উইকেট পাই। দু’বারই চট্টগ্রাম চ্যাম্পিয়ন হয়। এরপর আমি ১০ বছর মাইনর কাউন্টিতে খেলি।’
কোচিং শুরু কবে থেকে? শাহেদ বললেন, ‘আমি ২০১১ সালে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড ও ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমির হয়ে কোচিং শুরু করি। এছাড়া ফয়সলাবাদ ও লাহোর অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচিং প্যানেলেও ছিলাম। আমি কায়েদ-ই আজম ট্রফিতে লাহোর সিটির এবং ফয়সালাবাদ ও লাহোরের সহকারী কোচ হিসেবেও কাজ করেছি।’
বিজনেস আওয়ার/২৮ এপ্রিল/ রানা