স্পোর্টস ডেস্ক: বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা এমনকি নিউজিল্যান্ডেও অন্তত একজন করে বিশ্বমানের লেগস্পিনার আছেন। প্রায় সব ফরম্যাটেই তাদের স্কোয়াডে অন্যতম সেরা অস্ত্র হিসেবে অন্তত একজন লেগস্পিনার থাকবেনই।
অপরদিকে দক্ষিণ এশিয়া তো লেগস্পিনারদের বিচরণক্ষেত্র। মানে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের তো অনেকগুলো বিশ্বমানের লেগস্পিনার আছেন। সাবেক লেগিদের মাঝেও অনেক কিংবদন্তি লেগস্পিনার আছেন। তাদের কাউকে দায়িত্ব না দিয়ে কেন স্বল্প পরিচিতির ও লো-প্রোফাইল কোচ শাহেদ মেহমুদকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) গেম ডেভেলপমেন্টের লেগস্পিন ট্যালেন্ট হান্ট কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হলো?
সারা দেশে লেগস্পিনার অন্বেষণের পাশাপাশি সেই সব কিশোর, যুবা ও তরুণ লেগিদের গড়ে তোলার চ্যালেঞ্জিং মিশন পরিচালনা ও পরিচর্যার সামর্থ্য কি এই পাকিস্তানির আছে? খেলোয়াড়ী জীবনে যার সেরা সময় কেটেছে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট; যিনি খোদ নিজ দেশ পাকিস্তানেও ততটা পরিচিত নন, তিনি কি বাংলাদেশের তৃণমূল পর্যায়ে লেগস্পিনার খুঁজে বের করা এবং তাদের যথাযথভাবে গড়ে তোলার দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবেন?
তার চেয়ে একজন হাই-প্রোফাইল, লেগস্পিনের ওপর উচ্চতর ডিগ্রিধারী এবং খ্যাতিমান ও সফল কোনো ভিনদেশি কোচকে কি আনা যেত না? কী কারণে শাহেদ মেহমুদকে এমন গুরু দায়িত্ব দেওয়া?
তিন দিন আগে ২৬ এপ্রিল বিসিবি পরিচালক ও গেম ডেভেলপমেন্ট প্রধান খালেদ মাহমুদ সুজন লেগস্পিন হান্ট কার্যক্রম নিয়ে কথা বলতে গিয়ে শাহেদ মেহমুদের নাম বলার পর থেকে ক্রিকেটঅনুরাগী ও গণমাথ্যমে এই পাকিস্তানিকে নিয়ে উৎসাহ বেড়েছে। অনেকের মনেই এখন এ প্রশ্ন উঠেছে, শাহেদ মেহমুদ ছাড়া ভারত, পাকিস্তান অথবা শ্রীলঙ্কার জাতীয় দলের কোনো সাবেক লেগিকে কি এই কাজের জন্য বিবেচনায় আনা যেত না?
আসলে যিনি এ উদ্যোগ নিয়েছেন এবং প্রথমবারের মতো তৃণমূল পর্যায় থেকে লেগস্পিনার অন্বেষণ কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন, সেই বিসিবি পরিচালক ও গেম ডেভোলপমেন্ট চেয়ারম্যান সুজনই জাগো নিউজের মুখোমুখি হয়ে সেই কৌতুহলী প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, কেন এই কাজে শাহেদ মেহমুদকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
সুজন বলেন, ‘বড় বড় কোচদের অনেক বেতন দিতে হয়। বড় কোচরা এসে কেউ গ্রামে যাবে না। আমাদের প্রথম পরিকল্পনাই ছিল গ্রামে গ্রামে যেতে হবে। সেখানে অযত্নে, অবহেলায় পড়ে থাকা লেগিদের খুঁজে বের করে আনতে হবে। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল মানেই হলো গ্রামের নিভৃত পল্লী। সেখানে গিয়ে ট্যালেন্ট হান্ট সহজ কাজ না। কোনো ভিনদেশি হাই-প্রোফাইল কোচ গ্রামে-গঞ্জে যাবেন না। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে তরুণদের খুঁজে বের করার কাজ করতে চাইবেন না।
বিসিবির এই পরিচালক বলেন, ‘আমার দীর্ঘ খেলোয়াড়ী ও কোচিং অভিজ্ঞতার কথা জেনেছি, বুঝিও। তাই আমি শাহেদ মেহমুদের কথা ভেবেছি। প্লেয়িং লাইফে আমি তাকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। তার সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ আছে। সে কোথায় কখন কী কাজ করেছে সবই জানি। আমাদের দেশে কাজ করতে আসার আগে শাহেদ মেহমুদ পিসিবির হয়ে কাজ করেছে। সেটাও আমি জানতাম। ওর সঙ্গে নিয়মিতই কথা হতো। যোগাযোগ ছিল।’
সুজন আরও বলেন, ‘সর্বোপরি আমি আর শাহেদ প্রিমিয়ার লিগে এক ক্লাবে খেলেছি। ওর স্বভাব, প্রকৃতি, আচার-আচরণ, কথা-বার্তা এবং মেধা-সামর্থ্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা আছে। আমি মনে করেছি, আমাদের যে বাজেট এবং যেমন কাজের ধরন তার সঙ্গে শাহেদ মেহমুদই মানানসই। তাই তাকে নিয়েছি। তার ওপরই দায়িত্ব দিয়েছি।’
‘আমি তাকে বলেই এনেছি, শাহেদ শোন, তুমি হয়তো ওতো হাই-প্রোফাইল কোচ না। আমরা প্রোফাইল দেখে কাউকে নিলে তোমার দিকে ঝুঁকতাম না নিশ্চয়ই। আমরা চাই গ্রামে-গঞ্জে গিয়ে কাজ করতে হবে।’
সুজন বলেন, ‘এক কথায় যদি বলি তাহলো বলবো, বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে, অজোপাড়া গাঁয়ে তৃণমূল পর্যায়ে লেগস্পিনারদের নিয়ে কাজ করার জন্য বিদেশিদের মধ্যে আমার চোখে শাহেদ মেহমুদই বেস্ট অপশন। তাই তাকে নেওয়া। আমার দৃষ্টিতে এখন পর্যন্ত সে ভালো কাজ করেছে। আমরা তার কাজে সন্তুষ্ট। সামনে যখন ৮০ স্পিনার থেকে শর্টলিস্ট করে আগামী দিনের জন্য তৈরির কাজ শুরু হবে, তখন বোঝা যাবে আসল কাজটা শাহেদ কেমন করে?’
বিজনেস আওয়ার/২৯ এপ্রিল/ রানা