স্পোর্টস ডেস্ক: তার নিয়মিত ও প্রধান একাদশের প্রায় ৯০ ভাগই নেই। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ৩ ম্যাচের দলে ঢুকে গেছেন খালেদ মাহমুদ সুজনের ১০ শিষ্য (লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয়, আফিফ হোসেন ধ্রুব, জাকের আলী অনিক, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, সাইফউদ্দিন, তানজিম সাকিব ও তানভির ইসলাম)।
এমন পরিস্থিতিতে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের বিপক্ষে মঙ্গলবার সুপার লিগের তিন নম্বর ম্যাচ। জিতলেই চ্যাম্পিয়ন; কিন্তু দলের শক্তি কমতে কমতে তিন ভাগের এক ভাগে এসে দাঁড়িয়েছে। এমন অবস্থায় যে কোনো কোচের খেই হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ার কথা।
কী করে ১১ জন সাজাবেন? তা নিয়ে ছিল কোচের রাজ্যের চিন্তা। তবুও রক্ষা, জাতীয় দলের ৩ ক্রিকেটার আফিফ, তানজিম সাকিব ও তানভির ইসলামকে শেষ মুহূর্তে পাওয়া গেছে। তারপরও ১১ জন ঠিক করা সহজ ছিল না।
কারণ ৩ পেসার তাসকিন, শরিফুল ও সাইফউদ্দীনকে ছাড়া পেস বোলিং লাইনআপ সাজানোও সহজ ছিল না। তানজিম সাকিব ছাড়া অপর পেসারও ছিল না। যাও ছিলেন খালেদ আহমেদ। তিনি আহত। ইনজুরির শিকার ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়ও। সব মিলিয়ে তীরে এসে তরি ডোবার মত অবস্থা আবাহনী শিবিরের।
যে কোনো কোচ হলে চিন্তায় মুষড়ে পড়তেন, ভেঙ্গে পড়তেন; কিন্তু আবাহনী কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন সেই সকাল থেকেই একদম নির্ভার। বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে আবাহনী আর শেখ জামাল ম্যাচ শুরুর আধঘণ্টা পর হেঁটে ৩০০ গজ দুরে ৩ নম্বর মাঠে মোহামেডান আর শাইন পুকুর ম্যাচ দেখতে চলে গেলেন।
সেখানে শাইন পুকুর টেন্টে বসে কয়েকজন সিনিয়র সংবাদকর্মীর সঙ্গে বসে অন্তত আধঘণ্টা কথা বললেন। প্রচন্ড গরমে পানি এবং ফলমূল খেলেন। কথাবার্তা, আচার-আচরণ ও শারীরিক অভিব্যক্তি দেখে বোঝার উপায়ই ছিল না, পাশের মাঠে তার দল খেলছে এবং ওই ম্যাচের ফলের ওপর এবারের লিগে আবাহনীর শিরোপা নির্ভর করছিল।
বরং তিনি যে দলের উপদেষ্টা, সেই শাইনপুকুরের ফিল্ডারদের করুণ দশা দেখে উল্টো দলটির ফিল্ডিং কোচ ফয়সাল হোসেন ডিকেন্সকে হেঁড়ে গলায় বকাঝকা করলেন কিছুক্ষণ, ‘কিরে ডিকেন্স তুই না ফিল্ডিং কোচ? তোর ফিল্ডারদের এ কি করুণ অবস্থা!’
গল্পের সেটাই শেষ নয়। ম্যাচে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের সৈকত আলী, সাকিব ও জিয়াউর রহমানের ব্যাটিং দেখেও ড্রেসিংরুমে মন খারাপ করে বসে থাকেননি। বরং শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের ইনিংসের মাঝামাঝি এক সাংবাদিককে আস্থার সাথে বলে দিলেন, ‘ওরা (শেখ জামাল ব্যাটাররা) ভাল খেলছে। ৩০০ করবে। করুক। আমরাও করবো।’
কি করে করবে? আপনার দলের ব্যাটিং শক্তির অর্ধেকটাইতো নেই? তারপরও সুজনের চোখে মুখে মিললো আশার ঝিলিক। বোঝাই গেল শত প্রতিকূলতার মাঝেও বিশ্বাস হারাননি। আস্থা ও আত্মবিশ্বাস ছিল পুরোপুরি। আর তাই মাঠে প্রতিপক্ষের চেয়ে শ্রেয়তর ক্রিকেট উপহার দিয়েই খালেদ মাহমুদ সুজনের দল আবাহনী হলো আবারও চ্যাম্পিয়ন।
শুধু এবার নয়, আগেরবারও তার প্রশিক্ষণেই শেষ হাসি হেসেছিল আবাহনী। তার আগেও সুজনের কোচিংয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আকাশ-হলুদ শিবির। একবার দু’বার নয়। শেষ ৪ লিগে ৩ বার লিগ ট্রফি জেতা সুজন কোচ হিসেবে গত ১১ বছরে নিয়ে ৮ বার আবাহনীকে চ্যাম্পিয়ন করালেন। মাঝে ২০১৪-২০১৫ প্রিমিয়ার লিগে প্রাইম ব্যাংকও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল সুজনের কোচিংয়ে।
এমন সাহসী কোচের কপালেই জোটে সাফল্য! খেলা শেষে সাংবাদিকের প্রশ্ন, ‘আপনার সাহসী, বিচক্ষণ আর কার্যকর রণকৌশল-এর ফসল এই সাফল্য। আপনি কি তাই মনে করেন?
নিজের প্রশংসাসূচক প্রশ্ন শুনেও ভাবলেশহীন আবাহনী কোচ সুজন। সোজা সাপটা উত্তর দিলেন, ‘না না, আমি নিজের কৃতিত্ব দাবি করছি না। সেটা করার যৌক্তিক কারণ আছে কি?’
সাংবাদিকের পাল্টা প্রশ্ন, কিন্তু আপনিইতো সব ছক কষে দিয়েছেন। এতগুলো ন্যাশনাল প্লেয়ার নেই, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের আপন ছোট ভাই মুনসহ ২ জন নবীন ক্রিকেটার (আরেকজন হলেন পেসার ফাহাদ) দিয়ে দল সাজানো এবং নিজ দলের প্রতি আস্থা রেখে সাফল্যের বন্দরে পৌঁছে যাওয়ার পিছনে তো আপনার অবদানই বেশি।
আবারো সুজনের বিনয়ী জবাব, ‘আরে না, না। আমি যত প্ল্যান, প্রোগ্রামই করি না কেন, মাঠে সব লক্ষ্য পরিকল্পনার বাস্তব রুপ দিয়েছে ক্রিকেটাররা। সব কৃতিত্ব তাদের। তাই আমি মনে করি এ শিরোপা বিজয়ের রূপকার ক্রিকেটাররা। কৃতিত্বটাও ক্রিকেটারদের। কাজেই প্রশংসা তাদেরই পাওনা।’
বিজনেস আওয়ার/৩০ এপ্রিল/ রানা