বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার খুনের ঘটনা তদন্ত করছে ভারত এবং বাংলাদেশের পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগ। এই খুনের রহস্য উদঘাটনে বেশ কয়েকদিন ধরেই কলকাতার বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন ও তদন্ত করেছেন ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি গোয়েন্দা প্রতিনিধি দল।
এদিকে বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ৪৭ মিনিটে বাংলাদেশের উদ্দেশে নিউটাউনের একটি পাঁচ তারকা হোটেল থেকে বেরিয়ে যান ডিবিপ্রধান হারুন এবং গোয়েন্দা প্রতিনিধি দলের অন্যান্য সদস্যরা। কলকাতা ছাড়ার আগে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন ডিবিপ্রধান হারুন।
তিনি বলেন, কলকাতায় খুন হওয়া বাংলাদেশের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডে ইতোমধ্যেই এক নারীসহ তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ডিবিপ্রধান হারুন বলেন, আমরা এক্ষেত্রে ওয়াটার থিউরি ব্যবহার করেছি। আমরা সিআইডি পুলিশকে রিকোয়েস্ট করেছি। আসামিদের ব্যবহৃত কমোড, সেপটিক ট্যাঙ্ক চেক করতে বলেছি। সেখান থেকেই মরদেহের অনেক অংশ উদ্ধার হয়েছে। আমরা যে উদ্দেশে এসেছিলাম আমরা কিন্তু একশ ভাগ সফলতা নিয়েই বাংলাদেশে ফিরছি।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে উদ্ধার হওয়া মাংস এমপি আনারের মনে করা হলেও এ ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত হতে ফরেনসিক এবং ডিএনএ টেস্ট জরুরি। আনুষ্ঠানিকভাবে সিআইডিকে চিঠি দিয়ে এসব মাংসের টুকরো বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
উদ্ধারকৃত মাংস এমপি আনারের মরদেহের কি না তা পরীক্ষার জন্য ইতোমধ্যেই সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে (সিএফএসএল) নমুনা পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনে ডিএনএ টেস্টও করা হবে। সেক্ষেত্রে এমপি আনারের কন্যা মুমতারিন ফিরদৌস ডরিনকে কলকাতায় ডাকা হতে পারে। ডিবিপ্রধান বলেন, আমরা সিআইডিকে অনুরোধ জানিয়েছি এই পরীক্ষাগুলো যেন খুব দ্রুততার সঙ্গে করা হয়। ডিএনএ টেস্ট করার জন্য এমপি আনারের কন্যা ডরিন খুব শিগগিরই কলকাতা আসবেন। ভারতে আসার জন্য সম্ভবত তিনি ভিসাও পেয়ে গেছেন।
গত বৃহস্পতিবার কলকাতায় আসে গোয়েন্দা প্রধানের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল। কলকাতা থেকে তারা যান নিউটাউন থানায়। এরপর তদন্তকারী কর্মকর্তাকে (আইও) সঙ্গে নিয়ে তারা কৃষ্ণমাটি বাগজোলা খাল পরিদর্শন করেন। এরপর যথাক্রমে নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনস, সিআইডি ভবন, হাতিশাল খালসহ বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করার পাশাপাশি কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল, সিআইডি এডিজি আর রাজাশেখরণের সঙ্গেও কথা বলেন ডিবিপ্রধান হারুন।
তিনি বলেন, এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে কলকাতা এবং বাংলাদেশে দুটি জায়গায় মামলা হয়েছে। সে কারণেই তদন্ত করতে আমরা কলকাতায় এসেছি এবং সিআইডির প্রতিনিধি দলও তদন্তের স্বার্থে বাংলাদেশে গেছে। আমরা ইতোমধ্যেই মূল ঘাতককে গ্রেফতার করেছি। তারা অনেক কিছুই স্বীকার করেছে। কিভাবে তারা হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেছিল, বাংলাদেশের কোথায় কোথায় তারা বৈঠক করেছে, কলকাতায় এসে কোন কোন বাসায় ছিল, তারা কি কি কাজ করেছিল, এগুলো যাচাই বাছাই করার দরকার ছিল।
গোয়েন্দা প্রধান বলেন, বাংলাদেশের পেনাল কোডের ৩৬২ এবং ৩৬৪ ধারা অনুযায়ী, লাশ বা লাশের টুকরো, খুনির ঘড়ি বা অন্য কোনো অংশ বিশেষ উদ্ধার না হলে মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে একটু সমস্যা হয়। আর সে কারণে আমরা এসেছি। আমাদের মূল কাজটি ছিল বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালানো, কলকাতায় যে আসামি গ্রেফতার হয়েছে তাকে নিয়েই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা, পাশাপাশি যে জায়গায় তারা গিয়েছিল সেসব জায়গায় অভিযান চালানো।
এমপি আনারের লাশ বা লাশের টুকরো যাতে পাওয়া যায় সে কারণেই আমরা এই তদন্ত চালিয়েছে। কারণ একটা মামলার নিষ্পত্তি করতে গেলে সুরত হাল, মেডিকেল রিপোর্ট, ভিসেরা রিপোর্ট, আলামতের দরকার হয়। আমাদের কাজ ছিল আসামিদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য কলকাতা পুলিশের সঙ্গে শেয়ার করা এবং উনাদের কাজে সহযোগিতা করা। আমরা মনে করি, আমরা সহযোগিতা করতে পেরেছি এবং যে উদ্দেশ্যে এসেছিলাম যে একদিকে আলামত সংগ্রহ করা, সিআইডিকে সহযোগিতা ক,রা ডিজিটাল এভিডেন্স নিজে চোখে দেখা, কলকাতায় গ্রেফতার হওয়া জিহাদ হাওলাদার সঙ্গে কথা বলে আমাদের দেশে গ্রেফতার হওয়া আসামিদের বয়ান মিলিয়ে নেওয়া, কোথায় কোথায় গেছে সেগুলোর খোঁজ-খবর নেওয়া এসব ক্ষেত্রে আমরা শতভাগ সফল হয়েছি।
বিজনেস আওয়ার/৩০ মে/ হাসান