ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দূষণ কমাবে প্লাস্টিকখেকো ব্যাকটেরিয়া

  • পোস্ট হয়েছে : ০৮:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ জুন ২০২৪
  • 111

বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: আজকাল মোবাইল ফোনের কাভার থেকে শুরু করে বিছানার ফোম, নিত্যব্যবহার্য প্রায় সব কিছুতেই পলিউরেথেন ব্যবহৃত হয়। এটি পুনর্ব্যবহার (রিসাইকেল) করা কঠিন এবং ভাগাড়ে গিয়ে জমা হয়। ফলে বাড়তে থাকে পরিবেশ দূষণ। কিন্তু আশার কথা হলো, এ সমস্যার জন্য অনেকটা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির মতো দারুণ এক সমাধান বের করেছেন গবেষকরা।

তারা এক ধরনের ‘সেলফ-ডাইজেস্টিং প্লাস্টিক’ আবিষ্কার করেন, যা ভাগাড়ে পড়লে নিজেই নিজেকে ধ্বংস করতে শুরু করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া সান দিয়েগোর গবেষক হান সল কিম বলেন, এই আবিষ্কারের মাধ্যমে আমরা প্রকৃতিতে প্লাস্টিক দূষণ কমাতে পারি।

পলিউরেথেন থেকে তৈরি পণ্য। ছবি: সংগৃহীতগবেষণাগারে তৈরি বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক। ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি পিয়ার-রিভিউড জার্নাল ন্যাচার কমিউনিকেশনে প্রকাশিত হয়েছে তাদের গবেষণা প্রতিবেদনটি।

জানা যায়, প্লাস্টিকখেকো ব্যাকটেরিয়ার স্পোর যোগ করে গবেষকরা এমন একটি প্লাস্টিক তৈরি করেছেন, যা নিজে নিজেই ধ্বংস হবে। প্লাস্টিকের ব্যবহার উপযোগী সময়জুড়ে স্পোরগুলো সুপ্ত থাকবে। কিন্তু আবর্জনার কম্পোস্টে থাকা উপাদানের সংস্পর্শে এলেই সেগুলো আবার জীবিত হয়ে উঠবে এবং প্লাস্টিকের বস্তুটি হজম করতে শুরু করবে।

পাশাপাশি, এই ব্যাকটেরিয়ার স্পোরগুলো প্লাস্টিকের দৃঢ়তাও বাড়িয়ে দেবে বলে আশা করছেন গবেষকরা।

প্রকল্পের সহ-গবেষক জন পোকরস্কি বলেন, আমাদের প্রক্রিয়াটি প্লাস্টিকের উপকরণগুলো আরও কঠিন করে তোলে। এটি তার ব্যবহার উপযোগী জীবনকাল আরও বাড়িয়ে দেয়। এরপর যখন সময় শেষ হয়, তখন আমরা এটি পরিবেশ থেকে নির্মূল করতে পারি, তা সে যেভাবেই ফেলা হোক না কেন।

তিনি জানান, ‘সেলফ-ডাইজেস্টিং’ প্লাস্টিক নিয়ে এখনো পরীক্ষাগারেই কাজ চলছে। তবে কয়েক বছরের মধ্যেই এটি বাইরের জগতে পা রাখতে পারে।

প্লাস্টিকের সঙ্গে যুক্ত করা ব্যাকটেরিয়াটি হলো ব্যাসিলাস সাবটিলিস। এটি ফুড অ্যাডিক্টিভ এবং প্রোবায়োটিক হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

উল্লেখ্য, প্লাস্টিক তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করতে ব্যাকটেরিয়ার স্পোরগুলোকে জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ারড হতে হবে।

যদিও প্রচলিত প্লাস্টিকের বায়োডিগ্রেডেবল ধারণার সঙ্গে সবাই একমত নন। সবার আগে প্লাস্টিক ব্যবহারের পরিমাণ কমানোই সর্বোত্তম বলে বিশ্বাস করেন কিছু বিজ্ঞানী।

পোর্টসমাউথ ইউনিভার্সিটির রেভল্যুশন প্লাস্টিকস ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক স্টিভ ফ্লেচার বলেন, প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো আইনি বাধ্যবাধকতার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক উৎপাদন কমাতে একমত হওয়া।

তিনি বলেন, এ ধরনের সম্ভাব্য সমাধানগুলো এমন ধারণা দিতে পারে যে, প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে আমাদের কম চিন্তা করলেও চলবে। কারণ পরিবেশে ছড়ানো প্লাস্টিকগুলো দ্রুত ও নিরাপদে ধ্বংস হয়ে যাবে। অথচ বেশিরভাগ প্লাস্টিকের ক্ষেত্রেই তেমনটি ঘটবে না। তাই, এদিকে খেয়াল রাখা দরকার।

সূত্র: বিবিসি

বিজনেস আওয়ার/০৫ জুন/ হাসান

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

দূষণ কমাবে প্লাস্টিকখেকো ব্যাকটেরিয়া

পোস্ট হয়েছে : ০৮:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ জুন ২০২৪

বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: আজকাল মোবাইল ফোনের কাভার থেকে শুরু করে বিছানার ফোম, নিত্যব্যবহার্য প্রায় সব কিছুতেই পলিউরেথেন ব্যবহৃত হয়। এটি পুনর্ব্যবহার (রিসাইকেল) করা কঠিন এবং ভাগাড়ে গিয়ে জমা হয়। ফলে বাড়তে থাকে পরিবেশ দূষণ। কিন্তু আশার কথা হলো, এ সমস্যার জন্য অনেকটা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির মতো দারুণ এক সমাধান বের করেছেন গবেষকরা।

তারা এক ধরনের ‘সেলফ-ডাইজেস্টিং প্লাস্টিক’ আবিষ্কার করেন, যা ভাগাড়ে পড়লে নিজেই নিজেকে ধ্বংস করতে শুরু করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া সান দিয়েগোর গবেষক হান সল কিম বলেন, এই আবিষ্কারের মাধ্যমে আমরা প্রকৃতিতে প্লাস্টিক দূষণ কমাতে পারি।

পলিউরেথেন থেকে তৈরি পণ্য। ছবি: সংগৃহীতগবেষণাগারে তৈরি বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক। ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি পিয়ার-রিভিউড জার্নাল ন্যাচার কমিউনিকেশনে প্রকাশিত হয়েছে তাদের গবেষণা প্রতিবেদনটি।

জানা যায়, প্লাস্টিকখেকো ব্যাকটেরিয়ার স্পোর যোগ করে গবেষকরা এমন একটি প্লাস্টিক তৈরি করেছেন, যা নিজে নিজেই ধ্বংস হবে। প্লাস্টিকের ব্যবহার উপযোগী সময়জুড়ে স্পোরগুলো সুপ্ত থাকবে। কিন্তু আবর্জনার কম্পোস্টে থাকা উপাদানের সংস্পর্শে এলেই সেগুলো আবার জীবিত হয়ে উঠবে এবং প্লাস্টিকের বস্তুটি হজম করতে শুরু করবে।

পাশাপাশি, এই ব্যাকটেরিয়ার স্পোরগুলো প্লাস্টিকের দৃঢ়তাও বাড়িয়ে দেবে বলে আশা করছেন গবেষকরা।

প্রকল্পের সহ-গবেষক জন পোকরস্কি বলেন, আমাদের প্রক্রিয়াটি প্লাস্টিকের উপকরণগুলো আরও কঠিন করে তোলে। এটি তার ব্যবহার উপযোগী জীবনকাল আরও বাড়িয়ে দেয়। এরপর যখন সময় শেষ হয়, তখন আমরা এটি পরিবেশ থেকে নির্মূল করতে পারি, তা সে যেভাবেই ফেলা হোক না কেন।

তিনি জানান, ‘সেলফ-ডাইজেস্টিং’ প্লাস্টিক নিয়ে এখনো পরীক্ষাগারেই কাজ চলছে। তবে কয়েক বছরের মধ্যেই এটি বাইরের জগতে পা রাখতে পারে।

প্লাস্টিকের সঙ্গে যুক্ত করা ব্যাকটেরিয়াটি হলো ব্যাসিলাস সাবটিলিস। এটি ফুড অ্যাডিক্টিভ এবং প্রোবায়োটিক হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

উল্লেখ্য, প্লাস্টিক তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করতে ব্যাকটেরিয়ার স্পোরগুলোকে জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ারড হতে হবে।

যদিও প্রচলিত প্লাস্টিকের বায়োডিগ্রেডেবল ধারণার সঙ্গে সবাই একমত নন। সবার আগে প্লাস্টিক ব্যবহারের পরিমাণ কমানোই সর্বোত্তম বলে বিশ্বাস করেন কিছু বিজ্ঞানী।

পোর্টসমাউথ ইউনিভার্সিটির রেভল্যুশন প্লাস্টিকস ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক স্টিভ ফ্লেচার বলেন, প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো আইনি বাধ্যবাধকতার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক উৎপাদন কমাতে একমত হওয়া।

তিনি বলেন, এ ধরনের সম্ভাব্য সমাধানগুলো এমন ধারণা দিতে পারে যে, প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে আমাদের কম চিন্তা করলেও চলবে। কারণ পরিবেশে ছড়ানো প্লাস্টিকগুলো দ্রুত ও নিরাপদে ধ্বংস হয়ে যাবে। অথচ বেশিরভাগ প্লাস্টিকের ক্ষেত্রেই তেমনটি ঘটবে না। তাই, এদিকে খেয়াল রাখা দরকার।

সূত্র: বিবিসি

বিজনেস আওয়ার/০৫ জুন/ হাসান

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: