ঢাকা , রবিবার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিজের বাড়িতেই ভোটকেন্দ্র তবুও ভোট দিতে হয় পোস্ট বক্সে

  • পোস্ট হয়েছে : ০৩:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই ২০২৪
  • 17

বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: যুক্তরাজ্যের নর্দাম্পটনশায়ারের উইনউইকে বাস করেন ৮০ বছর বয়সী থমাস জুন। দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে তার বাড়িটি দেশটির সাধারণ নির্বাচনের সময় ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই কথা শুনলে যে কারও হয়তো মনে হতে পারে যে থমাস জুনকে তাহলে হয়তো ভোট দিতে আর বাইরে যেতে হয় না। নিজের বাড়িতে ভোটকেন্দ্র থাকলে কারও কি আর বাইরে গিয়ে ভোট দেওয়ার প্রয়োজন আছে? কিন্তু এক্ষেত্রে তার কপাল খারাপই বলা চলে।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের ভিন্নধর্মী ভোটকেন্দ্রগুলোর মধ্যে এটি একটি। ভেভেন্ট্রি নির্বাচনী এলাকায় থমাসের বাড়িটি উইনউইকের ভোটকেন্দ্র হিসেবে প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

ভোটাররা হলওয়েতে একটি ভাসমান সিঁড়ির নিচে গিয়ে তাদের মূল্যবান ভোট প্রদান করেন। আসলে থমাস জুন যেখানে বসবাস করছেন সেটি একটি ওল্ড স্কুল। চার্চ রোডে অবস্থিত ওই ওল্ড স্কুল হাউজেই তিনি ৫৪ বছর ধরে বসবাস করছেন। ওই স্কুলই ভোটকেন্দ্র হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে।

তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে ওই ভোটকেন্দ্রে তিনি ভোট দিতে পারেন না। তাকে প্রায় ৩০০ গজ হেঁটে গ্রামের একটি পোস্ট বক্সে তার ভোট মেইল করে পাঠাতে হয়। তিনি জানিয়েছেন, অনেক বছর আগে তিনি একবার পোস্টাল ভোট দিয়েছিলেন।

থমাস জুন বলেন, একটি স্থানীয় কাউন্সিলে ভোটকেন্দ্রের ক্লার্ক হিসাবে কাজ করতেন তিনি এবং নির্বাচনের দিনে সব কাজ শেষ করে তার পক্ষে নিজের এলাকায় গিয়ে ভোট দেওয়াটা কঠিন হয়ে পড়েছিল। সে কারণে তিনি পোস্ট বক্সেই ভোট দিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, এটা শুনতে অদ্ভূত লাগতে পারে। কিন্তু আমি পোস্টাল ভোটের মাধ্যমেই ভোট দিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আমার বাড়িতেই ভোটকেন্দ্র থাকার পরেও আমার মনে পড়ে না যে আমি কখনো এখানে ভোট দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, আমি ইতোমধ্যেই আমার ভোট দিয়ে ফেলেছি এবং আমি জানি যে, অনেকেই হয়তো এটা নিয়ে হাসাহাসি করছে।

বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে দেশটির সাধারণ নির্বাচনের ভোট শুরু হয়েছে। ১৯৪৫ সালের পর যুক্তরাজ্যে প্রথম বারের মতো জুলাই মাসে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ভোট চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত। এবারের নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি ও বিরোধী লেবার পার্টির মধ্যে।

ইতোমধ্যেই বিভিন্ন জরিপের পূর্বাভাস বলছে, নির্বাচনে রেকর্ড ব্যবধানে জয় পেতে যাচ্ছে লেবার পার্টি। অর্থাৎ ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির ১৪ বছরের ক্ষমতার দুর্গ ভেঙে দিতে যাচ্ছে লেবার পার্টি।

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে মোট আসন ৬৫০টি। সার্ভেশনসের সেন্ট্রাল সিনারিওর তথ্য অনুযায়ী, লেবার পার্টি ৪৮৪ আসনে জয় পেতে পারে। যা দলটির সাবেক নেতা টনি ব্লেয়ারের আমলের ৪১৮টি আসনে জয়ের থেকেও বেশি।

এক দশকের বেশি সময় ধরে যুক্তরাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে কনজারভেটিভ পার্টি। পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলটি মাত্র ৬৪ আসনে জয় পেতে পারে। যা হতে পারে দলটি প্রতিষ্ঠার পর সর্বনিম্ন আসনে জয়। ১৮৩৪ সালে কনজারভেটিভ দলের জন্ম হয়। তাছাড়া ডানপস্থি রিফর্ম ইউকে পার্টি জিততে পারে ৭ আসনে।

এদিকে নর্থ ইয়োর্কশায়ারে ভোট দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক এবং তার স্ত্রী অক্ষতা মূর্তি। ভোট শুরুর প্রায় আধা ঘণ্টা আগে নর্থালেরটনের একটি ভিলেজ হলের একটি পোলিং স্টেশনে তাদের ভোট দিতে দেখা গেছে।

এবারের ভোটে ৪৪ বছরের ঋষি সুনাক কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ২০২২ সালে যখন তিনি প্রধানমন্ত্রী হন তখন তার বয়স ছিল ৪২। আধুনিক সময়ে ব্রিটেনের সবচেয়ে কম বয়সের প্রধানমন্ত্রী সুনাক। অন্যদিকে লেবার পার্টির নেতৃত্বে রয়েছেন স্যার কিয়ের স্টারমার। তার বয়স ৬১ বছর।

বিজনেস আওয়ার/০৪ জুলাই/হাসান

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

নিজের বাড়িতেই ভোটকেন্দ্র তবুও ভোট দিতে হয় পোস্ট বক্সে

পোস্ট হয়েছে : ০৩:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই ২০২৪

বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: যুক্তরাজ্যের নর্দাম্পটনশায়ারের উইনউইকে বাস করেন ৮০ বছর বয়সী থমাস জুন। দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে তার বাড়িটি দেশটির সাধারণ নির্বাচনের সময় ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই কথা শুনলে যে কারও হয়তো মনে হতে পারে যে থমাস জুনকে তাহলে হয়তো ভোট দিতে আর বাইরে যেতে হয় না। নিজের বাড়িতে ভোটকেন্দ্র থাকলে কারও কি আর বাইরে গিয়ে ভোট দেওয়ার প্রয়োজন আছে? কিন্তু এক্ষেত্রে তার কপাল খারাপই বলা চলে।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের ভিন্নধর্মী ভোটকেন্দ্রগুলোর মধ্যে এটি একটি। ভেভেন্ট্রি নির্বাচনী এলাকায় থমাসের বাড়িটি উইনউইকের ভোটকেন্দ্র হিসেবে প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

ভোটাররা হলওয়েতে একটি ভাসমান সিঁড়ির নিচে গিয়ে তাদের মূল্যবান ভোট প্রদান করেন। আসলে থমাস জুন যেখানে বসবাস করছেন সেটি একটি ওল্ড স্কুল। চার্চ রোডে অবস্থিত ওই ওল্ড স্কুল হাউজেই তিনি ৫৪ বছর ধরে বসবাস করছেন। ওই স্কুলই ভোটকেন্দ্র হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে।

তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে ওই ভোটকেন্দ্রে তিনি ভোট দিতে পারেন না। তাকে প্রায় ৩০০ গজ হেঁটে গ্রামের একটি পোস্ট বক্সে তার ভোট মেইল করে পাঠাতে হয়। তিনি জানিয়েছেন, অনেক বছর আগে তিনি একবার পোস্টাল ভোট দিয়েছিলেন।

থমাস জুন বলেন, একটি স্থানীয় কাউন্সিলে ভোটকেন্দ্রের ক্লার্ক হিসাবে কাজ করতেন তিনি এবং নির্বাচনের দিনে সব কাজ শেষ করে তার পক্ষে নিজের এলাকায় গিয়ে ভোট দেওয়াটা কঠিন হয়ে পড়েছিল। সে কারণে তিনি পোস্ট বক্সেই ভোট দিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, এটা শুনতে অদ্ভূত লাগতে পারে। কিন্তু আমি পোস্টাল ভোটের মাধ্যমেই ভোট দিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আমার বাড়িতেই ভোটকেন্দ্র থাকার পরেও আমার মনে পড়ে না যে আমি কখনো এখানে ভোট দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, আমি ইতোমধ্যেই আমার ভোট দিয়ে ফেলেছি এবং আমি জানি যে, অনেকেই হয়তো এটা নিয়ে হাসাহাসি করছে।

বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে দেশটির সাধারণ নির্বাচনের ভোট শুরু হয়েছে। ১৯৪৫ সালের পর যুক্তরাজ্যে প্রথম বারের মতো জুলাই মাসে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ভোট চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত। এবারের নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি ও বিরোধী লেবার পার্টির মধ্যে।

ইতোমধ্যেই বিভিন্ন জরিপের পূর্বাভাস বলছে, নির্বাচনে রেকর্ড ব্যবধানে জয় পেতে যাচ্ছে লেবার পার্টি। অর্থাৎ ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির ১৪ বছরের ক্ষমতার দুর্গ ভেঙে দিতে যাচ্ছে লেবার পার্টি।

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে মোট আসন ৬৫০টি। সার্ভেশনসের সেন্ট্রাল সিনারিওর তথ্য অনুযায়ী, লেবার পার্টি ৪৮৪ আসনে জয় পেতে পারে। যা দলটির সাবেক নেতা টনি ব্লেয়ারের আমলের ৪১৮টি আসনে জয়ের থেকেও বেশি।

এক দশকের বেশি সময় ধরে যুক্তরাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে কনজারভেটিভ পার্টি। পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলটি মাত্র ৬৪ আসনে জয় পেতে পারে। যা হতে পারে দলটি প্রতিষ্ঠার পর সর্বনিম্ন আসনে জয়। ১৮৩৪ সালে কনজারভেটিভ দলের জন্ম হয়। তাছাড়া ডানপস্থি রিফর্ম ইউকে পার্টি জিততে পারে ৭ আসনে।

এদিকে নর্থ ইয়োর্কশায়ারে ভোট দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক এবং তার স্ত্রী অক্ষতা মূর্তি। ভোট শুরুর প্রায় আধা ঘণ্টা আগে নর্থালেরটনের একটি ভিলেজ হলের একটি পোলিং স্টেশনে তাদের ভোট দিতে দেখা গেছে।

এবারের ভোটে ৪৪ বছরের ঋষি সুনাক কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ২০২২ সালে যখন তিনি প্রধানমন্ত্রী হন তখন তার বয়স ছিল ৪২। আধুনিক সময়ে ব্রিটেনের সবচেয়ে কম বয়সের প্রধানমন্ত্রী সুনাক। অন্যদিকে লেবার পার্টির নেতৃত্বে রয়েছেন স্যার কিয়ের স্টারমার। তার বয়স ৬১ বছর।

বিজনেস আওয়ার/০৪ জুলাই/হাসান

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: