বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত মাসে সংক্ষিপ্ত সফরে পরপর দু’বার ভারতে গিয়েছিলেন। প্রথমটি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর টানা তৃতীয় মেয়াদে অভিষেক উপলক্ষে, আর দ্বিতীয়টি ছিল পূর্বঘোষিত আনুষ্ঠানিক সফর। শেখ হাসিনার উভয় সফরের রাজনৈতিক গুরুত্ব থাকলেও দ্বিতীয়টি ছিল বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।
ওই সফরেই বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বহুল প্রত্যাশিত গঙ্গা পানিচুক্তির নবায়নসহ প্রায় ১০টি সমঝোতা হয়। পাশাপাশি সিদ্ধান্ত হয়, ‘তিস্তা নদীর সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা’ প্রকল্পে যুক্ত হবে ভারত। এ জন্য বাংলাদেশে একটি ‘টেকনিক্যাল টিম’ পাঠানোরও ঘোষণা দিয়েছে নয়াদিল্লি।
ভারত সফরের দু’সপ্তাহের মাথায় আগামী ৮ জুলাই চীনে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেসময় দু’পক্ষের মধ্যে ৫০০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে চুক্তি বা সমঝোতা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেখানে উঠে আসতে পারে তিস্তা প্রকল্পের কথাও।
এই বিষয়টি নিয়েই বিশেষভাবে চিন্তিত ভারত। নয়াদিল্লি চায় না, তাদের আরও একটি সীমান্তের কাছে চীনের কোনো ধরনের উপস্থিতি থাকুক।
শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক শেষে নরেন্দ্র মোদী নিজেই জানিয়েছিলেন, তিস্তা প্রকল্প নিয়ে আলোচনার জন্য শিগগির বাংলাদেশে আসবে ভারতের একটি টেকনিক্যাল টিম।
তিনি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ৫৪ অভিন্ন নদী রয়েছে। আমরা বন্যা ব্যবস্থাপনা, আগাম সতর্কতা, পানীয় জল প্রকল্পে সহযোগিতা করছি। আমরা ১৯৯৬ সালের গঙ্গা পানিচুক্তি নবায়নের জন্য টেকনিক্যাল পর্যায়ে আলোচনা শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিস্তা নিয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশে ভারতের প্রতিনিধি দল পাঠানোর সিদ্ধান্তটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, এই প্রকল্পে প্রায় ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে আগ্রহী চীন। এ নিয়ে জোরালো আপত্তি রয়েছে দিল্লির।
ভারতীয় সংবামাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্ষাকালের উদ্বৃত্ত পানি ধরে রাখার জন্য তিস্তায় কোনো জলাধারের প্রয়োজন রয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করবে ভারতের প্রতিনিধি দল। চীন এই জলাধার নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
দীর্ঘদিনের বিরোধ
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পানিসম্পদ বণ্টনের সঙ্গে জড়িত একটি জটিল সমস্যার নাম তিস্তা।
পূর্ব হিমালয়ে উৎপত্তি হওয়া নদীটি সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রংপুর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
২০১১ সালে তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের আমলে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে একটি সমঝোতা হয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর আপত্তিতে চুক্তিটি আজও আলোর মুখ দেখেনি।
২০২০ সালে প্রথমবার তিস্তার সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে আগ্রহ দেখায় চীন। গত বছরের ডিসেম্বরে ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত এই প্রকল্পে আবারও তাদের আগ্রহের কথা জানান।
শোনা যায়, আগের চেয়ে অনেক কম খরচেই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য নতুন করে প্রস্তাব দিয়েছে বেইজিং।
সতর্ক ভারত
তিস্তা ইস্যুর সংবেদনশীলতা এবং এই প্রকল্পে চীন জড়িত হওয়ার সম্ভাবনায় উদ্ভূত ভূ-রাজনৈতিক উদ্বেগে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে ভারত।
হাসিনা-মোদী বৈঠকের পর ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রা বলেছিলেন, অভিন্ন পানিসম্পদের ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল বিষয়। তিনি জানান, ভারতের টেকনিক্যাল টিম তিস্তার পানি পুনরুদ্ধার প্রকল্পের মূল্যায়ন করবে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের মতে, এটি ভারতের পক্ষ থেকে একটি স্পষ্ট সংকেত যে, বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তঃসীমান্ত নদী ব্যবস্থাপনায় বেইজিংয়ের জড়িত হওয়ার প্রয়োজন নেই।
এ অবস্থায় আগামী সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরে যেসব চুক্তি হতে পারে, সেগুলোর দিকে সন্দেহাতীতভাবেই সতর্ক দৃষ্টি থাকবে ভারতের।
তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা, টাইমস অব ইন্ডিয়া, মানি কন্ট্রোল
বিজনেস আওয়ার/০৪ জুলাই/হাসান