স্পোর্টস ডেস্ক: এমিলিয়ানো মার্টিনেজ যেন টাইব্রেকার কিং। প্রায় প্রতি ম্যাচেই টাইব্রেকারে সাক্ষাৎ যমদূত হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছেন তিনি প্রতিপক্ষের ফুটবলারদের সামনে। কোপা আমেরিকার প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে ইকুয়েডরের খেলোয়াড়দের জন্যও সেটি হলেন তিনি। শেষ সময়ে ইকুয়েডর গোল করে সমতায় ফিরলেও টাইব্রেকারে মার্টিনেজ বীরত্বে ৪-২ ব্যবধানে জিতলো আর্জেন্টিনা।
নির্ধারিত সময়ের ৯০ মিনিটের খেলা ১-১ সমতায় থাকে। ইনজুরির কারণে শঙ্কা থাকলেও আর্জেন্টিনার একাদশে ফেরেন মেসি। ম্যাচে দারুণ খেললেও টাইব্রেকারের প্রথম শট নিতে গিয়ে মিস করেন তিনি। পোস্টের ওপর দিয়ে বল পাঠিয়ে দেন বাইরে। কিন্তু অসাধারণ বীরত্বে অ্যাঞ্জেল মেনা ও অ্যালান মিন্দার শট ফিরিয়ে দেন মার্টিনেজ।
মেসি মিস করলেও আর্জেন্টিনার হয়ে পরের শটগুলো ঠিকই ইকুয়েডরের জাল খুঁজে নেয়। হুলিয়ান আলভারেজ, অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার, গঞ্জালো মন্টিয়েল ও নিকোলাস ওতামেন্দির শট ইকুয়েডরের জালে জড়ায়। ফলে জন ইয়েবোয়াহ ও জর্দি কাইসেদোর শট আর্জেন্টিনার জালে জড়ালেও পরাজয় এড়াতে যথেষ্ট ছিল না।
অথচ, জিততে পারতো ইকুয়েডরই। ১-০ গোলে পিছিয়ে থেকে ৬২ মিনিটে পেনাল্টি পেয়েছিল ইকুয়েডর। এনার ভ্যালেন্সিয়া স্পট কিক নিতে গিয়ে সাইডবারে মেরে দেন। যার ফলে গোলবঞ্চিত হয় তারা এবং সমতায় ফিরতে পারেনি। ৯০+১ মিনিটে দুর্দান্ত হেডে গোল করে সমতায় ফেরে ইকুয়েডর।
এই ম্যাচের দলে জায়গা হারান ডি মারিয়া। তবে ম্যাচে আর্জেন্টিনার হয়ে একমাত্র গোলটি করেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে খেলা ডিফেন্ডার লিসান্দ্রো মার্টিনেজ। বল দখলে আর্জেন্টিনা এগিয়ে থাকলেও গোলের সুযোগ বেশি তৈরি করে ইকুয়েডরই। তাদের একজন ভালো ফিনিশার থাকলে প্রথমার্ধে অন্তত দুই গোলে পিছিয়ে থাকতো আর্জেন্টিনা।
ম্যাচের ছয় মিনিটের মাথায় আর্জেন্টিনার ডিফেন্সের ভুলে বল পেয়ে যান কাইসেদো। ডি-বক্সের সামান্য ভেতর থেকে নেওয়া দুর্বল শট সহজেই তালুবন্দি করেন এমি মার্টিনেজ।
ম্যাচের ১৫ মিনিটের মাথায় আবারও সুযোগ পায় ইকুয়েডর। এবার দারুণ আক্রমণ করে ডান দিক দিয়ে তারা। কিন্তু বল নিয়ে ভেতরে ঢুকে একজন ডিফেন্ডারকে কাটালেও গোলরক্ষক মার্টিনেজকে পরাস্ত করতে পারেননি পায়েজ।
১৭ মিনিটে এনার ভ্যালেন্সিয়ার ক্রস থেকে প্রেসিয়েদোর দুর্বল শট গোলবারের ওপর দিয়ে চলে যায়। ম্যাচের ২৬ মিনিটে প্রথম গোলের সুযোগ তৈরি করে আর্জেন্টিনা। মলিনার দারুণ ক্রস থেকে খালি জায়গায় হেড করার সুযোগ পেয়েও বল বাইরে মারেন এনজো ফার্নান্দেজ।
৩৩ মিনিটে মেসির দারুণ ডিফেন্স চেরা পাস থেকে এনজো ফার্নান্দেজ ডি-বক্সের ভেতর বল টেনে নিয়ে গেলেও তার শট ব্লক করে দেয় ইকুয়েডরের ডিফেন্ডাররা। কর্নার পায় আর্জেন্টিনা। সেই কর্নার থেকেই অবশেষে গোল পায় আর্জেন্টিনা।
মেসির কর্নার থেকে ম্যাক অ্যালিস্টার হেড করলে বল যায় ডিফেন্ডার লিসান্দ্রো মার্টিনেজের কাছে। ভেসে আসা বলে মার্টিনেজ দারুণ হেডে বল জালে জড়ালে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় আলবিসেলেস্তারা।
ম্যাচের ৪৩ মিনিটে বাঁ-পাশ থেকে আক্রমণে এনজো ফার্নান্দেজ দারুণ বল ক্রস করলেও তাতে পা ছোঁয়াতে পারেনি আর্জেন্টিনার কেউ। ম্যাচে আর কোনো গোল না হলে প্রথমার্ধে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে ৫৪ মিনিটে এমি মার্টিনেজের কিক থেকে বল ডি বক্সের ভেতর বল পেয়েও লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেন লাওতারো। ম্যাচে ৫৯ মিনিটে কর্নার থেকে ডি বিক্সের ভেতর হেড দিতে গিয়ে রড্রিগো ডি পলের হাতে বল লাগলে রেফারি পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন।
স্পট কিক থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকলেও স্পট কিক থেকে বল গোলবারে মারেন তিনি। সমতায় ফিরতে ব্যর্থ হলো ইকুয়েডর। ম্যাচের ৬৮ মিনিটে প্রথম গোলমুখে শট নেন লিওনেল মেসি। তার ডান পায়ের শট সোজা গোলরক্ষক বরাবর গেলে সেটি তিনি ভালোভাবেই রুখে দেন।
ম্যাচে যখন আর্জেন্টিনা জয়ের সুবাস পাচ্ছিল তখনই ম্যাচের ৯২ মিনিটে ইকুয়েডরের কেভিন রদ্রিগেজ গোল করে ইকুয়েডরকে সমতায় ফেরান। কোপায় কোনো অতিরিক্ত সময়ের নিয়ম না থাকায় ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে।
টাইব্রেকারে আবারও সেই এমিলিয়ানো মার্টিনেজ বীরত্বে ম্যাচ জিতলো আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনার হয়ে প্রথম পেনাল্টি মিস করেন মেসি। কিন্তু এমি মার্টিনেজ টানা দুটি পেনাল্টি রুখে দিয়ে আর্জেন্টিনাকে ম্যাচে ফেরান। শেষ পেনাল্টিতে নিকোলাস ওতামেন্দি আর্জেন্টিনার হয়ে গোল করে দলকে সেমিফাইনালে তোলেন।
বিজনেস আওয়ার/০৫জুলাই/ রানা