ঢাকা , শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুই বছর পর সূচকের সবচেয়ে বড় উত্থান, ৭৭১ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন

  • পোস্ট হয়েছে : ০২:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ জুলাই ২০২৪
  • 71

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: দেশের শেয়ারবাজারে আজ বৃহস্পতিবার সূচকের বড় উত্থান হয়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এদিন ১২৪ পয়েন্ট বা সোয়া ২ শতাংশের বেশি বেড়েছে। গত দুই বছরের মধ্যে এটিই ঢাকার বাজারে এক দিনে সূচকের সর্বোচ্চ উত্থান। এর আগে ২০২২ সালে ৩১ জুলাই এই সূচক ১৫৪ পয়েন্ট বা আড়াই শতাংশ বেড়েছিল।

ঢাকার বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) আজ বড় উত্থান হয়েছে। সিএসইর সার্বিক সূচক ৩০৭ পয়েন্ট বা ২ শতাংশের বেশি বেড়েছে। সূচকের বড় উত্থানের পাশাপাশি লেনদেনও বেড়েছে দুই বাজারে। বাজারে লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সূচকের এ উত্থান হয়েছে। এতে গত কয়েক বছরের ব্যবধানে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছে।

ডিএসইতে আজ মোট ৭৭১ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়, যা আগের দিনের চেয়ে ২৩২ কোটি টাকা বা প্রায় ৪৩ শতাংশ বেশি। শুধু তা–ই নয়, গত প্রায় দেড় মাসের মধ্যেও এটিই সর্বোচ্চ লেনদেন। এর আগে গত ১৩ মে ডিএসইতে সর্বোচ্চ ৯৬৮ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল। চট্টগ্রামের বাজারে লেনদেন হয় প্রায় ২৫ কোটি টাকার, যা আগের দিনের চেয়ে ২০ কোটি টাকা বেশি।

সূচকের বড় উত্থানের ফলে আজ ডিএসইএক্স সূচকটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৯৮ পয়েন্টে। এটিও গত প্রায় দেড় মাসের মধ্যে ডিএসইএক্স সূচকের সর্বোচ্চ অবস্থান। এর আগে সর্বশেষ গত ১৬ মে সূচকটি ছিল ৫ হাজার ৫১৭ পয়েন্টে।

বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চাকরিবিধি সংশোধনের মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদন হয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের বিনিয়োগের সুযোগ তৈরির উদ্যোগের এ খবরেই মূলত শেয়ারবাজারে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারি কর্মচারীদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরির বিষয়টি এখনো সময়সাপেক্ষ। তারপরও বাজারে এর একটি মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব রয়েছে। এর তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়েছে বাজারে। এতে গত দুই দিনে ডিএসইতে সূচক বেড়েছে ১৫৮ পয়েন্ট। এর মধ্যে বড় উত্থান হয়েছে গতকাল।

বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউআইইউ) বাণিজ্য অনুষদের ডিন মোহাম্মদ মুসা বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে টানা দরপতন চলছিল। এই পতনের ফলে বাজার যেখানে নেমে এসেছিল, তার কোনো যৌক্তিক কারণ ছিল না। এ অবস্থায় আমরা আশা করেছিলাম, নির্বাচনের পর বাজার কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু সেটি হয়নি, উল্টো দরপতন অব্যাহত ছিল। এ অবস্থায় বাজার ঘুরে দাঁড়ানোটা সময়ের দাবি ছিল। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মচারীদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরির খবরটি বাজার ঘুরে দাঁড়াতে বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। বাজেটে শেয়ারবাজারে ৫০ লাখ টাকার বেশি মূলধনি মুনাফার ওপর করারোপ করা হয়েছে। সেই নেতিবাচক খবরকে পাস কাটিয়ে সরকারি কর্মচারীদের বিনিয়োগের উদ্যোগের খবরটি বড় ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।’

ঢাকার বাজারে আজ লেনদেন হওয়া ৩৯৬ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৬৫টি বা ৯২ শতাংশেরই দাম বেড়েছে। কমেছে ১৩টির বা সোয়া ৩ শতাংশের আর অপরিবর্তিত ছিল ১৮টির বা সাড়ে ৪ শতাংশের দাম।

ব্রোকারেজ হাউস লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে আজ সূচকের বড় উত্থানের পেছনে যেসব কোম্পানি বড় ভূমিকা রেখেছে, তার মধ্যে অন্যতম ছিল ব্র্যাক ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মা, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, বেস্ট হোল্ডিংস, রেনাটা, গ্রামীণফোন, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট, বীকন ফার্মা ও আইএফআইসি ব্যাংক। এই ১০ কোম্পানির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির কারণেই শুধু সূচক বেড়েছে ৪৩ পয়েন্ট। এর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারের ৫ শতাংশ বা ১ টাকা ৭০ পয়সা মূল্যবৃদ্ধিতে সূচক বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৭ পয়েন্ট।

ব্র্যাক ব্যাংকের পাশাপাশি ব্যাংক খাতের বেশির ভাগ শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি সূচকে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ঢাকার বাজারে আজ লেনদেন হওয়া ৩৬ ব্যাংকের মধ্যে ৩৫টির শেয়ারের দাম বেড়েছে। শুধু ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দাম অপরিবর্তিত ছিল। এটির শেয়ারের দামের ওপর এখনো সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইস আরোপ রয়েছে। এ কারণে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দাম ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে।

বিজনেস আওয়ার/০৬জুলাই / এ এইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

দুই বছর পর সূচকের সবচেয়ে বড় উত্থান, ৭৭১ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন

পোস্ট হয়েছে : ০২:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ জুলাই ২০২৪

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: দেশের শেয়ারবাজারে আজ বৃহস্পতিবার সূচকের বড় উত্থান হয়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এদিন ১২৪ পয়েন্ট বা সোয়া ২ শতাংশের বেশি বেড়েছে। গত দুই বছরের মধ্যে এটিই ঢাকার বাজারে এক দিনে সূচকের সর্বোচ্চ উত্থান। এর আগে ২০২২ সালে ৩১ জুলাই এই সূচক ১৫৪ পয়েন্ট বা আড়াই শতাংশ বেড়েছিল।

ঢাকার বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) আজ বড় উত্থান হয়েছে। সিএসইর সার্বিক সূচক ৩০৭ পয়েন্ট বা ২ শতাংশের বেশি বেড়েছে। সূচকের বড় উত্থানের পাশাপাশি লেনদেনও বেড়েছে দুই বাজারে। বাজারে লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সূচকের এ উত্থান হয়েছে। এতে গত কয়েক বছরের ব্যবধানে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছে।

ডিএসইতে আজ মোট ৭৭১ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়, যা আগের দিনের চেয়ে ২৩২ কোটি টাকা বা প্রায় ৪৩ শতাংশ বেশি। শুধু তা–ই নয়, গত প্রায় দেড় মাসের মধ্যেও এটিই সর্বোচ্চ লেনদেন। এর আগে গত ১৩ মে ডিএসইতে সর্বোচ্চ ৯৬৮ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল। চট্টগ্রামের বাজারে লেনদেন হয় প্রায় ২৫ কোটি টাকার, যা আগের দিনের চেয়ে ২০ কোটি টাকা বেশি।

সূচকের বড় উত্থানের ফলে আজ ডিএসইএক্স সূচকটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৯৮ পয়েন্টে। এটিও গত প্রায় দেড় মাসের মধ্যে ডিএসইএক্স সূচকের সর্বোচ্চ অবস্থান। এর আগে সর্বশেষ গত ১৬ মে সূচকটি ছিল ৫ হাজার ৫১৭ পয়েন্টে।

বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চাকরিবিধি সংশোধনের মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদন হয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের বিনিয়োগের সুযোগ তৈরির উদ্যোগের এ খবরেই মূলত শেয়ারবাজারে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারি কর্মচারীদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরির বিষয়টি এখনো সময়সাপেক্ষ। তারপরও বাজারে এর একটি মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব রয়েছে। এর তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়েছে বাজারে। এতে গত দুই দিনে ডিএসইতে সূচক বেড়েছে ১৫৮ পয়েন্ট। এর মধ্যে বড় উত্থান হয়েছে গতকাল।

বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউআইইউ) বাণিজ্য অনুষদের ডিন মোহাম্মদ মুসা বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে টানা দরপতন চলছিল। এই পতনের ফলে বাজার যেখানে নেমে এসেছিল, তার কোনো যৌক্তিক কারণ ছিল না। এ অবস্থায় আমরা আশা করেছিলাম, নির্বাচনের পর বাজার কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু সেটি হয়নি, উল্টো দরপতন অব্যাহত ছিল। এ অবস্থায় বাজার ঘুরে দাঁড়ানোটা সময়ের দাবি ছিল। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মচারীদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরির খবরটি বাজার ঘুরে দাঁড়াতে বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। বাজেটে শেয়ারবাজারে ৫০ লাখ টাকার বেশি মূলধনি মুনাফার ওপর করারোপ করা হয়েছে। সেই নেতিবাচক খবরকে পাস কাটিয়ে সরকারি কর্মচারীদের বিনিয়োগের উদ্যোগের খবরটি বড় ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।’

ঢাকার বাজারে আজ লেনদেন হওয়া ৩৯৬ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৬৫টি বা ৯২ শতাংশেরই দাম বেড়েছে। কমেছে ১৩টির বা সোয়া ৩ শতাংশের আর অপরিবর্তিত ছিল ১৮টির বা সাড়ে ৪ শতাংশের দাম।

ব্রোকারেজ হাউস লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে আজ সূচকের বড় উত্থানের পেছনে যেসব কোম্পানি বড় ভূমিকা রেখেছে, তার মধ্যে অন্যতম ছিল ব্র্যাক ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মা, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, বেস্ট হোল্ডিংস, রেনাটা, গ্রামীণফোন, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট, বীকন ফার্মা ও আইএফআইসি ব্যাংক। এই ১০ কোম্পানির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির কারণেই শুধু সূচক বেড়েছে ৪৩ পয়েন্ট। এর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারের ৫ শতাংশ বা ১ টাকা ৭০ পয়সা মূল্যবৃদ্ধিতে সূচক বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৭ পয়েন্ট।

ব্র্যাক ব্যাংকের পাশাপাশি ব্যাংক খাতের বেশির ভাগ শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি সূচকে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ঢাকার বাজারে আজ লেনদেন হওয়া ৩৬ ব্যাংকের মধ্যে ৩৫টির শেয়ারের দাম বেড়েছে। শুধু ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দাম অপরিবর্তিত ছিল। এটির শেয়ারের দামের ওপর এখনো সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইস আরোপ রয়েছে। এ কারণে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দাম ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে।

বিজনেস আওয়ার/০৬জুলাই / এ এইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: