বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: একদিকে গলাকাটা বিদ্যুৎ বিলে জনগণের চরম ভোগান্তি। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীসহ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় দুই লাখ কর্মকর্তার বিদ্যুৎ বিল ‘শূন্য’। অর্থাৎ, শীর্ষ কর্তারা বিনামূল্যেই উপভোগ করছেন বিদ্যুতের সুবিধা। আর তার জন্য প্রতি বছর পাকিস্তান সরকারের গচ্চা দিতে হচ্ছে কয়েকশ কোটি রুপি। রোববার (৭ জুলাই) পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এআরওয়াই নিউজের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে আকাশছোঁয়া বিদ্যুৎ বিলে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। তারা বিশাল অংকের বিল মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। অথচ, দেশটির রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীকে বিনামূল্যে ‘আনলিমিটেড’ (সীমাহীন) বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি অবসরে যাওয়ার পরেও প্রতি মাসে বিনামূল্যে দুই হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ পান। এমনকি, তিনি মারা গেলেও তার স্ত্রী প্রতি মাসে দুই হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ বিনামূল্যে পাবেন।
বিনামূল্যে সীমাহীন বিদ্যুতের সুবিধা পান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীও। দেশটির প্রধান বিচারপতি দায়িত্বে থাকাকালীন এবং অবসরের পরে প্রতি মাসে দুই হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ বিনামূল্যে পান। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরও বিনামূল্যে সীমাহীন বিদ্যুৎ পান।
বিদ্যুৎ বিলের জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের প্রতি মাসে ২২ হাজার রুপি দেয় পাকিস্তান সরকার। তবে সংসদ সদস্যদের বিদ্যুৎ বিল নিজেদের পকেট থেকেই পরিশোধ করতে হয়।
এছাড়া, দেশটির পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (ওয়াপদা) প্রায় ১ লাখ ৯৯ হাজার কর্মী বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সুবিধা পান। আর এরজন্য পাকিস্তান সরকারকে প্রতি বছর কয়েকশ কোটি রুপি গচ্চা দিতে হয় বলে উল্লেখ করেছে এআরওয়াই নিউজ।
গরিবের ভোগান্তি
পাকিস্তানে মোটা অংকের বিদ্যুৎ বিল গরিবদের ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করেছে। এটি সইতে না পেরে অনেকে আত্মহত্যারও চেষ্টা করেছেন। সম্প্রতি ১৯ হাজার রুপির বেশি বিদ্যুৎ বিল দেখে গোলাম মুহাম্মদ নামে এক রিকশাচালক আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
গত এক বছরে বিদ্যুতের দাম প্রায় ৬৭ শতাংশ বাড়িয়েছে পাকিস্তান সরকার। সম্প্রতি বিদ্যুতের দাম আরও বাড়ানোর পক্ষে সায় দিয়েছে দেশটির মন্ত্রিসভা।
অথচ নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (টিএমএল-এন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) উভয় দলই বিনামূল্যে বিদ্যুৎ ইউনিটের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
নতুন প্রস্তাবে গার্হস্থ্য গ্রাহকদের জন্য প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের সর্বনিম্ন মূল্য ৪৮ দশমিক ৮৪ পয়সা করার কথা বলা হয়েছে। ন্যাশনাল ইলেকট্রিক পাওয়ার রেগুলেটরি অথোরিটি আগামী ৮ জুলাই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
বলা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণেই বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে পাকিস্তান সরকার।
বিজনেস আওয়ার/০৭জুলাই/ হাসান