বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: জীবন বীমা পলিসি বিক্রির সময় গ্রাহককে সঠিক তথ্য না দেয়া, অবাস্তব প্রতিশ্রুতি বা ভুল তথ্য দিয়ে বীমা পলিসি বিক্রি, বীমা চালু রাখার সুফল সম্পর্কে গ্রাহকদের সচেতনতার অভাব, এজেন্টদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ঘাটতি, এজেন্ট কর্তৃক গ্রাহকের প্রিমিয়ামের অর্থ আত্মসাত, গ্রাহকদের সামর্থ্যের তুলনায় উচ্চ মূল্যের বীমা পলিসি বিক্রি, যথা সময়ে বীমা দাবি পরিশোধ না করায় গ্রাহকদের মাঝে নেতিবাচক ধারণা তৈরিসহ নানা কারণে বছরে লাখ লাখ গ্রাহক হারাচ্ছে জীবন বীমা কোম্পানিগুলো।
এতে একদিকে গ্রাহকরা যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি বীমা সম্পর্কে সৃষ্টি হচ্ছে নেতিবাচক ধারণা। ফলশ্রুতিতে পলিসি তামাদির উচ্চহারের কারণে কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি সংকুচিত হচ্ছে আর্থিক সামর্থ্য।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) বলছে, ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে দেশের জীবন বীমা খাতের ৩৫টি কোম্পানির তিন লাখ ৬৪ হাজার ৬২৩ টি বীমা পলিসি ল্যাপস বা তামাদি হয়েছে। ২০২৩ সালে তামাদি হয়েছিল ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৮১৫টি বীমা পলিসি।
আইডিআরএ’র তথ্য দেখা যায়, গত ১৫ মাসে ১৯ লাখ সাত হাজার ৪৩৮ জন গ্রাহক হারিয়েছে জীবন বীমা কোম্পানিগুলো। সে হিসেবে গড়ে প্রতি মাসে বীমা কোম্পানিগুলোর এক লাখ ২৭ হাজারেরও বেশি গ্রাহক ঝরে পড়ছে।
এতে দেখা যায়, ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে সর্বোচ্চ পলিসি তামাদি হয়েছে সোনালী লাইফের, ৬৭ হাজার ৫৫৫টি। এর পরের অবস্থানে রয়েছে ডেল্টা লাইফ, কোম্পানিটির ৫৭ হাজার ৯৮১টি বীমা পলিসি তামাদি হয়েছে।
অন্যদিকে, ন্যাশনাল লাইফের ৩১ হাজার ৬৬৭টি পলিসি তামাদি হয়েছে এই বছরের শুরুতে। এর আগে ২০২৩ সালেও সর্বোচ্চ পলিসি তামাদি হয় সোনালী লাইফের, তিন লাখ ৯৬ হাজার ৫২২টি। ডেল্টা লাইফের দুই লাখ ৪৬ হাজার ৭৫৯টি পলিসি তামাদি হয়।
এ ছাড়াও পপুলার লাইফের এক লাখ ৬৫ হাজার ৭১২টি এবং ন্যাশনাল লাইফের এক লাখ ৫১ হাজার ৪০৫টি পলিসি তামাদি হয় ২০২৩ সালে।
বীমা কোম্পানিগুলো বলছে- নিড বেজড সেলতথা গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী বীমা পলিসি বিক্রি না করা, এজেন্ট কর্তৃক বীমা গ্রাহককে অবাস্তব প্রতিশ্রুতি বা ভুল তথ্য প্রদান, বীমা চালু রাখার সুফল সম্পর্কে গ্রাহকের অজ্ঞতা, এজেন্টদের যোগ্যতার অভাব ও বীমা কোম্পানি পরিবর্তন এবং গ্রাহকের আর্থিক অবস্থার অবনতির কারণে বীমা পলিসি তামাদি হয়ে যাচ্ছে।
কতিপয় কোম্পানি বীমা দাবি পরিশোধ না করে নেতিবাচক ইমেজ তৈরি, প্রিমিয়ামের কিস্তি প্রদানে গ্রাহকের অনিহা, দ্বিতীয় বর্ষ থেকে কমিশন হার কমে যাওয়ায় গ্রাহকের নিকট এজেন্টদের না যাওয়া, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এবং প্রবাসী গ্রাহকদের প্রিমিয়াম যথাসময়ে জমা না করার কারণে পলিসি তামাদি হচ্ছে বলেও দাবি বীমা কোম্পনিগুলোর।
বিজনেস আওয়ার/০৮ জুলাই/ এ এইচ