পুলিশের গুলিতে নিহত বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাঈদের বাড়িতে শোকের মাতম। ইনসেটে আবু সাঈদ
রংপুরে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ (২৫) ছিলেন পরিবারের সবার ছোট। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনিই কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছিলেন।
বাকি বড় পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে এক ভাই উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন। অন্যরা প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ চুকিয়েছেন। পুরো পরিবারের বড় স্বপ্ন ছিল একমাত্র আবু সাঈদকে নিয়ে। কিন্তু অকালে ঝরে গেলো সে স্বপ্ন। আদরের ছোট ভাইকে হারিয়ে হতভম্ব বড় ভাই রমজান।
রমজান বলেন, ‘বাবা মকবুল হোসেন শারীরিক অসুস্থতায় শয্যাশায়ী। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে আবু সাঈদ ছিল মেধাবী। এজন্য পরিবারের সবার উপার্জন দিয়ে তাকে এতদূর পর্যন্ত পড়ালেখা চালিয়ে নিয়ে এসেছি। আশা ছিল একদিন সে অনেক বড় হবে, সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু সে আশা ভেস্তে গেলো।’
আদরের ছোট ছেলে আবু সাঈদের মৃত্যুর খবরে পাগলপ্রায় মা মনোয়ারা বেগম। তিনি বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।
নিহত আবু সাঈদ রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে।
বাবনপুর গ্রামের ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আবু সাঈদ ছিল ওই পরিবারের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। সব ভাইবোনের মধ্যে কেবল সেই উচ্চশিক্ষার দিক প্রসারিত করছিল। কিন্তু শেষ সময়ে এসে সব তছনছ হয়ে গেলো।’
তিনি বলেন, ‘আবু সাঈদ যেমন মেধাবী, তেমনি নম্র ও ভদ্র স্বভাবের ছেলে ছিল। তার মৃত্যুতে আমরা গ্রামবাসী গভীর শোকাহত।’
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুরে শহরের খামার মোড় থেকে কোটা আন্দোলনকারীরা জড়ো হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর গেটে এসে অবস্থান নেন। এসময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সঙ্গে মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যুক্ত হয়ে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া করতে থাকেন। আন্দোলনকারীরাও পুলিশ ও ছাত্রলীগকে ধাওয়া করে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে আবু সাঈদ নামের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থীসহ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। পরে আহতদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আবু সাঈদকে মৃত ঘোষণা করেন।