বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : নেগেটিভ ইক্যুইটির সমস্যা কাটিয়ে তুলতে ও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের লক্ষ্যে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজগুলোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিশেষ তহবিল চেয়েছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এই বিশেষ তহবিলের আকার হবে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। এই তহবিল সংগ্রহের দায়িত্বে থাকবে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। যেখান থেকে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজগুলো শেয়াবাজারে বিনিয়োগের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ নিতে পারবেন।
রবিবার (২৫ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যালয়ে গভর্নরের সঙ্গে দেখা করে এ প্রস্তাব দিয়েছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ এবং নির্বাহী পরিচালক মোঃ মাহবুবুল আলম। বিএসইসির চেয়ারম্যানের দেয়া প্রস্তাবগুলোর প্রতি নীতিগত সমর্থন জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।
কমিশনার ড. শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ বিজনেস আওয়ারকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর শেয়ারবাজারের উন্নয়নে কমিশনকে সহযোগিতা করতে খুবই আন্তরিক। তাদের সঙ্গে আমরা যেকোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারছি। এখন নিয়মিত বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির মধ্যে সমন্বয় করে কাজ হচ্ছে। এতে করে কোন কিছু আর এখন ঝুলে নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সহযোগিতায় আমরা খুশি।
তিনি বলেন, আজকে আমরা শেয়ারবাজারের জন্য ফান্ড নিয়ে আলোচনা করেছি। এখন এই ফান্ড সংগ্রহ ও ব্যবহারের টেকনিক্যাল বিষয়গুলো নিয়ে শীঘ্রই বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আবার মিলিত হব। এখন আমাদেরকে ফান্ড নেওয়ার উপায় ও যথার্থ ব্যবহারের রাস্তা খুজে বের করতে হবে।
আরও পড়ুন….
রানার ব্যবহার করতে পারছে না আইপিও ফান্ড : বাড়াবে রিজার্ভ
সোনালি পেপার অতিরিক্ত কর দিতে রাজি, তবুও অর্ধেক নগদ লভ্যাংশ দেবে না
জানা গেছে, বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস এবং মার্চেন্ট ব্যাংকের নেগেটিভ ইক্যুইটি আছে, এই নেগেটিভ ইকুইটিকে সাপোর্ট করার জন্য এবং বিনিয়োগে হেল্প করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সফট ইন্টারেস্টে বিশেষ তহবিল চেয়েছি।
ব্রোকারেজ হাউজ এবং মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর যে পরিমাণ নেগেটিভ ইকুইটি আছে, বিশেষ তহবিলের আকার সেই পরিমাণ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এতে এই ফান্ডের আকার হবে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার মতো।
এই বিশেষ তহবিল আইসিবি ম্যানেজ করবে। মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজগুলো সেখান থেকে স্বল্প সুদে ঋণ হিসেবে নিতে পারবেন।
শেয়ারবাজারে ভয়াবহ দরপতনের প্রেক্ষিতে গত ফেব্রুয়ারিতে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক প্রত্যেকটি ব্যাংকের জন্য ২০০ কোটি টাকার বিশেষ ফান্ড গঠনের সুযোগ দেয়। এর পর একে একে কয়েক মাস পার হয়ে গেলেও এই তহবিল গঠনে ব্যাংকগুলো তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বিএসইসির বৈঠকে এ বিষয়টিও উঠে আসে। ব্যাংকগুলো যাতে দ্রুত এই বিশেষ তহবিল গঠন করে, সে জন্য বিএসইসির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুরোধ করা হয়। সেই সঙ্গে আইনি সীমার মধ্যে থেকে ব্যাংকগুলোকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়।
দেশের বাহিরে বিএসইসি ব্রোকারেজ হাউজের অনলাইন আউটলেট খোলার চেষ্টা করছে। যাতে বিদেশে যেসব বাংলাদেশীরা আছেন, তারা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারেন এবং দেশে রেমিট্যান্স আসে। এ ক্ষেত্রে ফরেন এক্সচেঞ্জ গাইডলাইনে কোন বাঁধা থাকলে তা সমাধান করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
শেয়ারবাজারে ‘জেড’ গ্রুপের যেসব অব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে, তাদের রিস্ট্রাকচার (পুনর্গঠন) করা বা কিভাবে তারা ‘জেড’ গ্রুপ থেকে রিকভারি করতে পারে, সে বিষয়ে আজ আলোচনা হয়েছে। এছাড়া ইন্ডিপেন্ডেন্ট পরিচালকদের সংখ্যা নিয়ে কর্পোরেট গভর্নেন্স গাইডলাইন কোড এবং ব্যাংক কোম্পানি আইনে কিছু অসামঞ্জস্য আছে। এটা দূর করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিজনেস আওয়ার/২৫ অক্টোবর, ২০২০/আরএ