বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে তীব্র চাপের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। সোমবার (৫ আগস্ট) দুপুরে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান তিনি। তার সঙ্গে ছোট বোন শেখ রেহানাও দেশত্যাগ করেন। এরপরই মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত হয়।
শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করা হবে। এরপর ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে তিন বাহিনী প্রধান ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বৈঠকে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ বিষয়ে ড. ইউনূসও নিজের সম্মতি জানিয়েছেন।
এদিকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাক্ষাতকার নিচ্ছে। ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির সঙ্গেও বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন ড. ইউনূস। তাকে প্রশ্ন করা হয় বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা আইনশৃঙ্খলা। আপনি কি ভাবছেন? তিনি বলেন, অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এটা তো কিছুটা ভেঙে পড়েছেই। এখন আমাদের একটা উদযাপনের সময় চলছে, যেমনটা ১৯৭১ সালের পর হয়েছিল। লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। সবাই স্বাধীনতা উদযাপন করছে। শেষ পর্যন্ত আমরা সব রকম ঝামেলা থেকে মুক্তি পেয়েছি। আমরা এটা উপভোগ করছি। নতুন যুগের সূচনা হয়েছে।
শেখ মুজিবের ভাস্কর্য ভাঙা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর জন্য শেখ হাসিনাকে দায়ী করুন। তিনি জাতিকে সেদিকে নিয়ে গেছেন, তার পিতার ইমেজ নষ্ট করেছেন। তিনি পুরো দেশের জন্য এমন তিক্ত কিছুই করে গেছেন যে, তারা (আন্দোলনকারীরা) এটা করতেও কিছু মনে করছে না। পুরো দায় এই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর যিনি পুরো দেশকে এই পরিস্থিতিতে এনে দাঁড় করিয়েছেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করাই এখন অগ্রাধিকার পাচ্ছে। হাসিনা যেটা করতে পারেননি। তিনি সরকারের মধ্যে দুর্নীতি ঢুকিয়েছেন। তিনি যদি ল অ্যান্ড অর্ডার প্রতিষ্ঠা করতেন, তাহলে এটা হতো না। এখন আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে মানুষ উদযাপন করে ফিরে যাবে এবং কাজে ফিরবে ভিন্ন স্বাধীন পরিবেশে।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা অবশ্যই ফিরিয়ে আনতে হবে। আসলে মানুষ রাগের বশে এসব করছে। তবে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, যত দ্রুত সম্ভব পরিস্থিতি যেন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যায়।
ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করা হয় বাংলাদেশের বর্তমান অস্থিতিশীলতা কি আশপাশের দেশগুলোতেও প্রভাব ফেলতে পারে কি না? আপনি কী মনে করেন? তিনি এর জবাবে বলেন, অবশ্যই। এই কথাটাই আমি গত কয়েকদিনের প্রতিটা ইন্টারভিউতে বলেছি। যদি বাংলাদেশ অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে তবে এটা মিয়ানমার, সেভেন সিস্টারস, পশ্চিমবঙ্গসহ বাংলাদেশের চারদিকে ছড়িয়ে যাবে। সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়বে।
তিনি বলেন, যদি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ না থাকে, তবে আশেপাশের কেউই থাকতে পারবে না। বাংলাদেশ যদি বিপদে থাকে, সবাই বিপদে পড়বে। এটা ১৭ কোটি মানুষের দেশ, যার দুই-তৃতীয়াংশই তরুণ। আপনাকে অবশ্যই এমন কিছু করতে হবে যাতে তরুণরা খুশি থাকে। গণতন্ত্র অবশ্যই থাকতে হবে। এই তরুণরা তাদের জীবনে ভোট দিতে পারেনি। যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, তারা ভোট দিতে যায়নি। কারণ তারা জানে, এটা তো নির্বাচন নয়। এটাই তো পরিস্থিতি। তিনি বলেন, অবশ্যই আমাদের তরুণদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। অবশ্যই গণতন্ত্র থাকতে হবে এবং তাদের এই গণতন্ত্রের অংশ বানাতে হবে।
নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দুপুরে দেশে ফিরবেন বলে জানা গেছে। বর্তমানে তিনি ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অবস্থান করছেন।
বিজনেস আওয়ার/০৭ আগস্ট / হাসান