বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গত ২২ মার্চ এই একাদশতম সংসদের বিশেষ অধিবেশন (সপ্তম অধিবেশন) আহ্বান করেছিলেন রাষ্ট্রপতি। এ অধিবেশন দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের কথা ছিল। তবে দেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি বেড়ে যাওয়ার কারণে শেষ সময়ে রাষ্ট্রপতি তা স্থগিত করেন।
দেশে করনো পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পাশাপাশি সব ধরনের অফিস-আদালত খুলে দেওয়ার প্রেক্ষাপটে সর্বশেষ নতুন করে এ অধিবেশন ডাকা হলো। রাষ্ট্রপতির ভাষণের পর বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন নিয়ে একটি প্রস্তাব আনা হবে। ওই প্রস্তাবের ওপর দীর্ঘ আলোচনা শেষে তা পাস হবে।
সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৮ নভেম্বর সংসদের অধিবেশন শুরু হলেও এদিন বিশেষ অধিবেশনের কোনও কার্যক্রম থাকছে না। এদিন অধিবেশনের একটি অধ্যাদেশ উপস্থাপনসহ অন্যান্য স্বাভাবিক কার্যক্রম চলবে। এরপর এক বা দুই দিন বিরতি দিয়ে শুরু হবে বিশেষ অধিবেশনের প্রথম বৈঠক।
প্রথম বৈঠকের শুরুতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ভাষণ দেবেন। রাষ্ট্রপতি যে স্মারক বক্তৃতা দেবেন, রবিবার (২৫ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা তা অনুমোদন করেছে। বিশেষ অধিবেশনের বৈঠকগুলোতে অন্য কোনও কর্মসূচি থাকবে না। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সদস্যরাই জাতির পিতার কর্মময় জীবনের ওপর আলোকপাত করবেন এ বিশেষ অধিবেশনে।
করোনাকালে অনুষ্ঠিত বিগত তিনটি অধিবেশনে গণমাধ্যমকর্মী এবং কোনও অতিথির বৈঠকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে বিশেষ অধিবেশনে যেদিন মহামান্য রাষ্ট্রপতি ভাষণ দেবেন সেই দিন কিছু অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। একইসঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদেরও বেশি সুযোগ দেওয়া হবে বলে সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে।
সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, করোনাকালীন অতীতের তিনটি অধিবেশনের মধ্য বিশেষ অধিবেশনে রোস্টারভিত্তিক সংসদ সদস্যরা সংসদে প্রবেশ করবেন। এক্ষেত্রে তাদের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করে অধিবেশনে প্রবেশ করতে হবে। তবে বিশেষ অধিবেশনের যে বৈঠকে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ভাষণ দেবেন, সে বৈঠকে রোস্টারের ভিত্তিতে প্রবেশ করতে হবে না।
কোভিড-১৯ পরীক্ষায় নেগেটিভ ফলাফল আসা সব সংসদ সদস্যরা এদিন প্রবেশ করতে পারবেন। তবে পরের দিনগুলোতে আবার রোস্টার অনুসরণ করা হবে।এবার অধিবেশনে বিদেশি কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে না। বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ৮ নভেম্বর সংসদ শুরু হলেও ওইদিন বিশেষ অধিবেশনে বৈঠক হচ্ছে না। প্রথমদিনে অধ্যাদেশ উপস্থাপনসহ কিছু কার্যক্রম আছে সেগুলো অনুষ্ঠিত হবে। এরপর এক কিংবা দুই দিন বিরতি দিয়ে আমরা বিশেষ অধিবেশনের কার্যক্রম শুরু করব। ওইদিন মহামান্য রাষ্ট্রপতি ভাষণ দেবেন।
স্পিকার বলেন, করোনাকালের অন্যান্য অধিবেশেনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব সুরক্ষা নিয়ে আমরা অধিবেশন আয়োজন করবো। রোস্টার ভিত্তিতে মাননীয় সদস্যরা যোগ দেবেন। তবে যেদিন মহামান্য রাষ্ট্রপতি ভাষণ দেবেন সেদিন কোভিড-১৯ নেগেটিভ সব সদস্যরা অংশ নিতে পারবেন। অধিবেশনটি কয়দিন চলবে সেটি এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণের কারণে আমরা কোনও বিদেশি অতিথিকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি না। আমাদের সংসদ সদস্যগণই জাতির পিতার কর্মময় জীবন আলোকপাত করে বক্তব্য রাখবেন। যেদিন মহামান্য রাষ্ট্রপতি ভাষণ দেবেন সেদিন আমরা কিছু অতিথিকে আমন্ত্রণ জানাবো। গণমাধ্যমকর্মীরা চাইলে সেদিন আসতে পারবেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী সাড়ম্বরে উদযাপনে এ বছরকে ‘মুজিববর্ষ’ ঘোষণা করে নানা কর্মসূচি নিয়েছিল সরকার। তার অংশ হিসেবে এই বিশেষ অধিবেশন আয়োজনসহ জাতীয় সংসদের পক্ষ থেকে বছরব্যাপী নানা কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়। তবে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে কারণে সরকার তার কর্মসূচি কাটছাঁট করে এবং ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে পালন শুরু করে। এরই অংশ হিসেবে সংসদ সচিবালয়ও তার কর্মসূচি কাটছাঁট করেছে।
অবশ্য মুজিববর্ষ উপলক্ষে সংসদ প্রাঙ্গণে এমপি মন্ত্রীদের বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি, মুজিববর্ষের ওয়েবসাইট উদ্বোধন, স্মারক ডাকটিকিট উন্মোচন, ৪ নভেম্বর সংবিধান দিবস উদযাপন, মাসব্যাপী আলোকচিত্র ও প্রামাণ্য দলিল প্রদশর্নী, ‘সংসদে বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামে একটি বইয়ের প্রকাশনাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে সংসদ সচিবালয়।
বিজনেস আওয়ার/২৭ অক্টোবর, ২০২০/এ