স্পোর্টস ডেস্ক: ২০০৭ সালে দেশে পেশাদার ফুটবল চালু হওয়ার পর প্রতিটি আসরেই অংশ নিয়েছে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র। ২০১২-১৩ মৌসুমে তারা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ওই মৌসুমে ট্রেবলও জিতেছিল ব্লুজরা।
অন্যদিকে ধানমন্ডি ক্লাবের নাম বদলে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের তৃতীয় আসরে। অভিষেক আসরসহ তিনবার (২০১১-১২, ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫) প্রিমিয়ার লিগ জিতেছে এই ক্লাবটি। দেশের ফুটবলে ভালো একটা অবস্থানে থাকা এই ক্লাব দুটির এবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে অংশ নেওয়াই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এক যুগেরও অধিক সময় ধরে ক্লাব দুটির পৃষ্ঠপোষকতা করেছে একটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর প্রতিষ্ঠানটি সরে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে ক্লাব দুটি। এর মধ্যে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব ভাংচুরও করা হয়েছে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর। ক্লাবের সাইনবোর্ড নেই।
ধানমন্ডি ক্লাবের সঙ্গে শেখ জামাল নাম যোগ হওয়ার আগে যারা ক্লাব পরিচালনায় ছিলেন তারা অবহেলিত ছিল এই কয়েক বছর। শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব হয়তো আবার তাদের পুরোনো নাম ধানমন্ডি ক্লাবে ফিরে যাবে। কিন্তু এই দুঃসময়ে ফুটবল দল গঠনে এগিয়ে আসবেন কারা? এই অনিশ্চয়তায়ই দলটির প্রিমিয়ার লিগ থেকে নাম প্রত্যাহার করতে যাচ্ছে।
তবে ক্লাব থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কিছু জানানো হয়নি। এমনকি বাফুফেকেও তারা কিছু জানায়নি। ক্লাবটির সঙ্গে যেসব খেলোয়াড় চুক্তি করেছিলেন তারা এখন বিপাকে পড়েছেন।
শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব প্রিমিয়ার লিগে নাম লেখানোর সময় থেকে ম্যানেজার ছিলেন আনোয়ারুল করীম হেলাল। কয়েক মৌসুম ধরে তিনি দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। এখন ক্লাবটির ভবিষ্যত কী, তা জানতে চাইলে এই ফুটবল সংগঠক বলেন, ‘আমি গত দুই মৌসুম ধরে ক্লাবের কোনো কিছুর সাথে ছিলাম না। শুনেছি এতদিন যারা পৃষ্ঠপোষতা করেছে তারা এবার না করে দিয়েছে। এখন এই অল্প সময়ের মধ্যে কারো পক্ষেই হাল ধরা সম্ভব নয়। আর মাত্র চারদিন আছে ফুটবল দলবদলের। তাই ঠিক বলতে পারছি না ক্লাবটির ভাগ্যে কী আছে।’
একই অবস্থা শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রেরও। বিগত সময় যারা ক্লাব পরিচালনা করেছে তারা সরে যাওয়ায় এখনো পুরোনো সংগঠকরা কিছু একটা করার চেষ্টা করলেও সম্ভব হচ্ছে না।
ক্লাবের অন্যতম পরিচালক সালেহ জামান সেলিম বলেন, ‘শনিবার একটি সভা করবো। তারপর আমাদের যা সিদ্ধান্ত তা জানিয়ে দেবো বাফুফেকে।’
কী সিদ্ধান্ত আসতে পারে তা জানতে চাইলে সালেহ জামান সেলিম বলেন, ‘বুঝতেই তো পারছেন কী সিদ্ধান্ত আসতে পারে। ফুটবল দল গঠন তো মাত্র দুই চার কোটি টাকার ব্যাপার না। তবে শনিবার সভায় সিদ্ধান্ত হওয়ার আগে নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছি না।’
শেখ রাসেল ও শেখ জামাল না খেললে বিপাকে পড়বেন প্রায় ৫০ জন ফুটবলার। বাকি ক্লাবগুলো ঘর গুছিয়ে নেওয়ায় শেখ জামাল ও শেখ রাসেলের ফুটবলারদের অন্য কোনো ক্লাবে গিয়ে খেলার সুযোগও কম। দুই একজনের সুযোগ মিললেও হয়তো আর্থিকভাবে বড় ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা।
শেখ জামাল ও শেখ রাসেলের পক্ষে বাফুফে প্রদত্ত ফরমে কোনো খেলোয়াড়ের স্বাক্ষর করা হয়ে গেলে তাদের অন্য ক্লাবে খেলতে গেলে অনাপত্তিপত্র লাগবে। ১৯ আগস্ট শেষ হবে দলবদল। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে দলবদলের সময় বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য ফিফায় আবেদন করেছিল বাফুফে। ফিফা রাজী হয়নি তাতে। সংস্থাটি জানিয়ে দিয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ করতে হবে দলবদল।
দুটি ক্লাবের না খেলার গুঞ্জন সম্পর্কে বাফুফে সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমার কাছে এমন কোনো তথ্য নেই। ক্লাবগুলোর কথা চিন্তা করেই আমরা সময় বাড়ানোর আবেদন করেছিলাম ফিফার কাছে। তারা সময় বাড়ানোর অনুমতি দেয়নি। ফিফার নির্দেশনার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দল যদি কম হয় আমাদের কম দল নিয়েই খেলা শুরু করতে হবে।’
বিজনেস আওয়ার/ ১৬আগস্ট / রানা