ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রিয়াজদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না: আসিফ মাহমুদ

  • পোস্ট হয়েছে : ১০:৫১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৪
  • 77

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৪ আগস্ট রাজধানীর জিগাতলা এলাকায় গুলিবিদ্ধ রিয়াজ (২৩) মারা গেছেন। শনিবার (১৭ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিইউ) তার মৃত্যু হয়।

রিয়াজের মৃত্যুতে তাকে স্মরণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক এবং অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

ফেসবুক পোস্টে আসিফ মাহমুদ লিখেন, ‘রিয়াজকে দেখতে গিয়েছিলাম ৩ দিন আগে। মাথায় বুলেট নিয়ে এতোদিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে আজ (শনিবার) শাহাদাত বরণ করেছে রিয়াজ। ডাক্তাররা বলেছিলেন ওর আর বাঁচার সম্ভাবনা নেই।

মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা, কিছু করতে না পারার আক্ষেপ আর অস্বস্তি নিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জনে রিয়াজদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না।’রিয়াজ বরিশালের হিজলা উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের মাহমুদুল হকের ছেলে। তিনি মুলাদী সরকারি কলেজের ডিগ্রি ছাত্র ছিলেন।

রিয়াজের বড়ভাই হাসান বলেন, রিয়াজ জিগাতলা এলাকায় বোনের বাসায় থাকতো। ঘটনার দিন ৪ আগস্ট দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে বাসা থেকে বের হয়। এরপর জিগাতলা এলাকায় যাওয়া মাত্রই গুলিবিদ্ধ হয়। তাৎক্ষণিক গুরুতর আহতাবস্থায় প্রথমে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতাল নেওয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে ভর্তি করা হয়। ঢাকা মেডিকেলে ওর মৃত্যু হয়।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত ১ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে লাগাতার আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। ১৫ জুলাই শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরদিন ১৬ জুলাই সারা দেশে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। সেদিন অনেক স্থানে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। রংপুরে লাঠিচার্জ ও গুলি করে পুলিশ। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। এছাড়া ঢাকায় দুইজন ও চট্টগ্রামে তিনজন নিহত হন। এরপর আন্দোলন আরও বেগবান হয়। গুলি, সংঘর্ষ ও সংঘাতে বাড়তে থাকে হতাহতের সংখ্যা।

হতাহতের ঘটনায় ৯ দফা দাবি জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কিন্তু সরকার তা মানেনি। এরপর ৩ আগস্ট সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে সরকার পতনের এক দফা ঘোষণা করে তারা। পরদিন ৪ আগস্ট কারফিউয়ের মধ্যে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ ও সহিংসতায় ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এরপর ৫ আগস্ট ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সেদিন ছাত্র-জনতা কারফিউ ভঙ্গ করে রাস্তায় নেমে আসে। দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। পতন হয় টানা সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের।

বাংলাদেশে এই বিক্ষোভ ও সহিংসতা নিয়ে গত শুক্রবার জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর থেকে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ১৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে কমপক্ষে ৬৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এতে বলা হয়, এদের মধ্যে ৪ আগস্ট পর্যন্ত ৪০০-এর কাছাকাছি এবং বাকি প্রায় ২৫০ জন পরের দুইদিনে প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৩২ শিশু রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।

একইদিন ভারতের অনলাইনভিত্তিক গণমাধ্যম নর্থইস্ট নিউজকে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, এই সময়ে নিহত হয়েছে সহস্রাধিক মানুষ। তিনি বলেন, ‘ঢাকার কিছু জায়গায় এবং অন্যান্য জেলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুলিশ বাহিনী মানুষকে প্রাণঘাতী অস্ত্র দিয়ে আঘাত ও গুলি করে, যাদের বেশিরভাগই ছিল ছাত্র ও তরুণ।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর সাখাওয়াত হোসেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। পরে তাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

বিজনেস আওয়ার/ ১৮ আগস্ট / রহমান

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

রিয়াজদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না: আসিফ মাহমুদ

পোস্ট হয়েছে : ১০:৫১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৪

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৪ আগস্ট রাজধানীর জিগাতলা এলাকায় গুলিবিদ্ধ রিয়াজ (২৩) মারা গেছেন। শনিবার (১৭ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিইউ) তার মৃত্যু হয়।

রিয়াজের মৃত্যুতে তাকে স্মরণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক এবং অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

ফেসবুক পোস্টে আসিফ মাহমুদ লিখেন, ‘রিয়াজকে দেখতে গিয়েছিলাম ৩ দিন আগে। মাথায় বুলেট নিয়ে এতোদিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে আজ (শনিবার) শাহাদাত বরণ করেছে রিয়াজ। ডাক্তাররা বলেছিলেন ওর আর বাঁচার সম্ভাবনা নেই।

মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা, কিছু করতে না পারার আক্ষেপ আর অস্বস্তি নিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জনে রিয়াজদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না।’রিয়াজ বরিশালের হিজলা উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের মাহমুদুল হকের ছেলে। তিনি মুলাদী সরকারি কলেজের ডিগ্রি ছাত্র ছিলেন।

রিয়াজের বড়ভাই হাসান বলেন, রিয়াজ জিগাতলা এলাকায় বোনের বাসায় থাকতো। ঘটনার দিন ৪ আগস্ট দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে বাসা থেকে বের হয়। এরপর জিগাতলা এলাকায় যাওয়া মাত্রই গুলিবিদ্ধ হয়। তাৎক্ষণিক গুরুতর আহতাবস্থায় প্রথমে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতাল নেওয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে ভর্তি করা হয়। ঢাকা মেডিকেলে ওর মৃত্যু হয়।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত ১ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে লাগাতার আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। ১৫ জুলাই শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরদিন ১৬ জুলাই সারা দেশে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। সেদিন অনেক স্থানে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। রংপুরে লাঠিচার্জ ও গুলি করে পুলিশ। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। এছাড়া ঢাকায় দুইজন ও চট্টগ্রামে তিনজন নিহত হন। এরপর আন্দোলন আরও বেগবান হয়। গুলি, সংঘর্ষ ও সংঘাতে বাড়তে থাকে হতাহতের সংখ্যা।

হতাহতের ঘটনায় ৯ দফা দাবি জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কিন্তু সরকার তা মানেনি। এরপর ৩ আগস্ট সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে সরকার পতনের এক দফা ঘোষণা করে তারা। পরদিন ৪ আগস্ট কারফিউয়ের মধ্যে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ ও সহিংসতায় ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এরপর ৫ আগস্ট ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সেদিন ছাত্র-জনতা কারফিউ ভঙ্গ করে রাস্তায় নেমে আসে। দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। পতন হয় টানা সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের।

বাংলাদেশে এই বিক্ষোভ ও সহিংসতা নিয়ে গত শুক্রবার জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর থেকে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ১৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে কমপক্ষে ৬৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এতে বলা হয়, এদের মধ্যে ৪ আগস্ট পর্যন্ত ৪০০-এর কাছাকাছি এবং বাকি প্রায় ২৫০ জন পরের দুইদিনে প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৩২ শিশু রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।

একইদিন ভারতের অনলাইনভিত্তিক গণমাধ্যম নর্থইস্ট নিউজকে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, এই সময়ে নিহত হয়েছে সহস্রাধিক মানুষ। তিনি বলেন, ‘ঢাকার কিছু জায়গায় এবং অন্যান্য জেলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুলিশ বাহিনী মানুষকে প্রাণঘাতী অস্ত্র দিয়ে আঘাত ও গুলি করে, যাদের বেশিরভাগই ছিল ছাত্র ও তরুণ।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর সাখাওয়াত হোসেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। পরে তাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

বিজনেস আওয়ার/ ১৮ আগস্ট / রহমান

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: