ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশকে ‘বাড়ির মতোই লাগে’, বলছে ভারতীয় পরিবারটি

  • পোস্ট হয়েছে : ০২:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৪
  • 53

বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: ১৬ বছর ধরে সপরিবারে বাংলাদেশে বসবাস করছেন ভারতীয় নাগরিক মীরা মেনন। নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কারণে তার মা বারবার তাদের ভারতে ফিরে যেতে বলছেন। তবে ঢাকাকে নিজের বাড়ির মতো মনে করে মীরার মেয়ে। তাই এই দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া তাদের জন্য সহজ নয়।

গত জুলাইয়ে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হলে দেশজুড়ে সহিংসতা দেখা দেয়। এরপর বাংলাদেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের একটি বড় অংশ নিজ দেশে ফিরে যায়। একপর্যায়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান।

৪৫ বছর বয়সী মীরা মেননের বাড়ি দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যের ত্রিশূর জেলা। স্বামী ও ১৪ বছরের মেয়ে অবন্তিকাকে নিয়ে বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করছেন তিনি। মীরার স্বামী এখানকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত।

বাংলাদেশে সাম্প্রতিকতম আন্দোলন চলাকালে নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন মীরা। ঢাকা থেকে ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই’কে তিনি বলেছেন, ছুটি কাটাতে আমরা কেরালায় গিয়েছিলাম। গত ৪ আগস্ট ঢাকায় ফিরি। সেদিন (বাংলাদেশে) কারফিউ চলছিল। কিন্তু একদিনের মধ্যেই পরিস্থিতি যে এত নাটকীয় মোড় নেবে, সে বিষয়ে কোনো ধারণা ছিল না আমাদের।

মীরা বলেন, আমরা ঢাকায় যেখানে থাকি, বিক্ষোভের সময় সেখানে অস্বস্তিকর কোনো কিছু ঘটেনি। রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা টহল দিতেন, বাঁশি বাজানোর শব্দ শোনা যেতো। এতে আমার ঘুমের ওপর প্রভাব পড়তো।

ঢাকায় একটি প্রাণবন্ত ভারতীয় কমিউনিটি রয়েছে। এ কমিউনিটির লোকজন ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন। তাদেরই একজন মীরা মেনন। গৃহিণী মীরা বর্তমানে ঢাকা মালায়ালি অ্যাসোসিয়েশনের (ডিএমএ) সভাপতি।

তিনি বলেন, আমরা প্রতি বছর আমাদের বিভিন্ন উৎসব এখানেই উদ্‌যাপন করি। এই সেপ্টেম্বরেও এমন একটি উৎসব উদযাপনের পরিকল্পনা ছিল। সেটি হলো ২৭ সেপ্টেম্বরের ওনাম উৎসব। কিন্তু এই মুহূর্তে প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে আমরা বোট ক্লাবে আমাদের আসন সংরক্ষণ বাতিল করেছি।

মীরা জানান, এ ক্লাবের আরও অনেক সদস্য কেরালা বা ভারতের অন্যান্য স্থানে চলে গেছেন। তাদের কেউ কেউ সংক্ষিপ্ত ছুটি নিয়েছেন। কেউ আবার ঢাকায় ফিরবেন কি না, তা নিয়ে রয়েছেন দোটানায়। অল্প কিছু মানুষ তাদের পরিবারের সদস্যদের ভারতে রেখে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

‘চাইলেই ছেড়ে যেতে পারি না’

বিয়ের পর ২০০৮ সালে প্রথম বাংলাদেশে আসেন মীরা মেনন। তিনি স্বীকার করেন, পরিবার ও নিজের নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ এবং ঢাকাকে নিয়ে তাদের, বিশেষ করে মেয়ের বন্ধনের যে অনুভূতি— এ দুইয়ের মধ্যে থেকে অস্বস্তিতে ভুগছেন তিনি।

ভারতীয় এ নারী বলেন, আমরা প্রথম যখন বাংলাদেশে আসি, তখন আমার মেয়ের বয়স ছিল ১০ মাসের মতো। আক্ষরিক অর্থেই সে এখানে বেড়ে উঠেছে এবং ঢাকার সঙ্গে তার একটি বন্ধন তৈরি হয়েছে। আমাদের অনুভূতিও একই। ১৬ বছর ধরে আমরা ঢাকায় সুন্দরভাবে বসবাস করছি।

এই দীর্ঘ সময়ে মীরা এবং তার পরিবার ঢাকার জনজীবন ও সংস্কৃতির সঙ্গে ভালোভাবেই মানিয়ে নিয়েছেন। তার মেয়ে অবন্তিকা বর্তমানে নবম শ্রেণির ছাত্রী এবং ভারতনাট্যমের প্রশিক্ষিত নৃত্যশিল্পী। সে অনর্গল বাংলায় কথা বলতে পারে।

এ বিষয়ে অবন্তিকা জানায়, তাদের বাসার কাজের লোক এবং গাড়িচালক উভয়েই বাংলাদেশি। তাদের কথা শুনে শুনেই সে বাংলা বলতে শিখেছে।মীরার স্বামী সুরেশও একজন মালায়ালি। তিনি বেড়ে উঠেছেন মুম্বাইয়ে।

মীরা জানান, তার স্বামী নিজেকে শান্ত রাখতে সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের খবর থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেন। তবে ভারতে ফিরে যাওয়া বা অন্য কোথাও স্থানান্তরিত হওয়ার বিষয়টি কখনো কখনো তাদের ঘরোয়া আলোচনায় উঠে আসে।

অবন্তিকা জানায়, কিছুদিন আগে সে যখন কেরালায় ছিল, তখন তার নানি তাকে ভারতে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। ঢাকা সম্পর্কে নিজের অনুভূতি কেমন জানতে চাইলে ১৪ বছরের মেয়েটি বলে, ঢাকা আমার বাড়ির মতো। কেরালায় গেলে মনে হয় কোথাও ঘুরতে এসেছি।

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে মীরা বলেন, পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। তবে সামনের কয়েক সপ্তাহ বা মাসে ঠিক কী ঘটতে চলেছে, সে বিষয়ে কেউ জানেন না। অবশ্য, দৃশ্যত পরিস্থিতি স্বাভাবিক। স্কুল খুলেছে, অফিসে কাজকর্ম হচ্ছে এবং রাস্তাঘাটও স্বাভাবিক রয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা ১৬ বছর ধরে ঢাকায় রয়েছি। এই শহরের সঙ্গে আমাদের একধরনের বন্ধন তৈরি হয়েছে। আমরা চাইলেই সব ছেড়ে চলে যেতে বা অন্য কোথাও স্থানান্তর হতে পারি না। এটি কোনো তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় নয়। তাই আমরা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি।

সূত্র: দ্য ইকোনমিক টাইমস

বিজনেস আওয়ার/ ২৫ আগস্ট / হাসান

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

বাংলাদেশকে ‘বাড়ির মতোই লাগে’, বলছে ভারতীয় পরিবারটি

পোস্ট হয়েছে : ০২:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৪

বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: ১৬ বছর ধরে সপরিবারে বাংলাদেশে বসবাস করছেন ভারতীয় নাগরিক মীরা মেনন। নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কারণে তার মা বারবার তাদের ভারতে ফিরে যেতে বলছেন। তবে ঢাকাকে নিজের বাড়ির মতো মনে করে মীরার মেয়ে। তাই এই দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া তাদের জন্য সহজ নয়।

গত জুলাইয়ে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হলে দেশজুড়ে সহিংসতা দেখা দেয়। এরপর বাংলাদেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের একটি বড় অংশ নিজ দেশে ফিরে যায়। একপর্যায়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান।

৪৫ বছর বয়সী মীরা মেননের বাড়ি দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যের ত্রিশূর জেলা। স্বামী ও ১৪ বছরের মেয়ে অবন্তিকাকে নিয়ে বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করছেন তিনি। মীরার স্বামী এখানকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত।

বাংলাদেশে সাম্প্রতিকতম আন্দোলন চলাকালে নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন মীরা। ঢাকা থেকে ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই’কে তিনি বলেছেন, ছুটি কাটাতে আমরা কেরালায় গিয়েছিলাম। গত ৪ আগস্ট ঢাকায় ফিরি। সেদিন (বাংলাদেশে) কারফিউ চলছিল। কিন্তু একদিনের মধ্যেই পরিস্থিতি যে এত নাটকীয় মোড় নেবে, সে বিষয়ে কোনো ধারণা ছিল না আমাদের।

মীরা বলেন, আমরা ঢাকায় যেখানে থাকি, বিক্ষোভের সময় সেখানে অস্বস্তিকর কোনো কিছু ঘটেনি। রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা টহল দিতেন, বাঁশি বাজানোর শব্দ শোনা যেতো। এতে আমার ঘুমের ওপর প্রভাব পড়তো।

ঢাকায় একটি প্রাণবন্ত ভারতীয় কমিউনিটি রয়েছে। এ কমিউনিটির লোকজন ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন। তাদেরই একজন মীরা মেনন। গৃহিণী মীরা বর্তমানে ঢাকা মালায়ালি অ্যাসোসিয়েশনের (ডিএমএ) সভাপতি।

তিনি বলেন, আমরা প্রতি বছর আমাদের বিভিন্ন উৎসব এখানেই উদ্‌যাপন করি। এই সেপ্টেম্বরেও এমন একটি উৎসব উদযাপনের পরিকল্পনা ছিল। সেটি হলো ২৭ সেপ্টেম্বরের ওনাম উৎসব। কিন্তু এই মুহূর্তে প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে আমরা বোট ক্লাবে আমাদের আসন সংরক্ষণ বাতিল করেছি।

মীরা জানান, এ ক্লাবের আরও অনেক সদস্য কেরালা বা ভারতের অন্যান্য স্থানে চলে গেছেন। তাদের কেউ কেউ সংক্ষিপ্ত ছুটি নিয়েছেন। কেউ আবার ঢাকায় ফিরবেন কি না, তা নিয়ে রয়েছেন দোটানায়। অল্প কিছু মানুষ তাদের পরিবারের সদস্যদের ভারতে রেখে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

‘চাইলেই ছেড়ে যেতে পারি না’

বিয়ের পর ২০০৮ সালে প্রথম বাংলাদেশে আসেন মীরা মেনন। তিনি স্বীকার করেন, পরিবার ও নিজের নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ এবং ঢাকাকে নিয়ে তাদের, বিশেষ করে মেয়ের বন্ধনের যে অনুভূতি— এ দুইয়ের মধ্যে থেকে অস্বস্তিতে ভুগছেন তিনি।

ভারতীয় এ নারী বলেন, আমরা প্রথম যখন বাংলাদেশে আসি, তখন আমার মেয়ের বয়স ছিল ১০ মাসের মতো। আক্ষরিক অর্থেই সে এখানে বেড়ে উঠেছে এবং ঢাকার সঙ্গে তার একটি বন্ধন তৈরি হয়েছে। আমাদের অনুভূতিও একই। ১৬ বছর ধরে আমরা ঢাকায় সুন্দরভাবে বসবাস করছি।

এই দীর্ঘ সময়ে মীরা এবং তার পরিবার ঢাকার জনজীবন ও সংস্কৃতির সঙ্গে ভালোভাবেই মানিয়ে নিয়েছেন। তার মেয়ে অবন্তিকা বর্তমানে নবম শ্রেণির ছাত্রী এবং ভারতনাট্যমের প্রশিক্ষিত নৃত্যশিল্পী। সে অনর্গল বাংলায় কথা বলতে পারে।

এ বিষয়ে অবন্তিকা জানায়, তাদের বাসার কাজের লোক এবং গাড়িচালক উভয়েই বাংলাদেশি। তাদের কথা শুনে শুনেই সে বাংলা বলতে শিখেছে।মীরার স্বামী সুরেশও একজন মালায়ালি। তিনি বেড়ে উঠেছেন মুম্বাইয়ে।

মীরা জানান, তার স্বামী নিজেকে শান্ত রাখতে সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের খবর থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেন। তবে ভারতে ফিরে যাওয়া বা অন্য কোথাও স্থানান্তরিত হওয়ার বিষয়টি কখনো কখনো তাদের ঘরোয়া আলোচনায় উঠে আসে।

অবন্তিকা জানায়, কিছুদিন আগে সে যখন কেরালায় ছিল, তখন তার নানি তাকে ভারতে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। ঢাকা সম্পর্কে নিজের অনুভূতি কেমন জানতে চাইলে ১৪ বছরের মেয়েটি বলে, ঢাকা আমার বাড়ির মতো। কেরালায় গেলে মনে হয় কোথাও ঘুরতে এসেছি।

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে মীরা বলেন, পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। তবে সামনের কয়েক সপ্তাহ বা মাসে ঠিক কী ঘটতে চলেছে, সে বিষয়ে কেউ জানেন না। অবশ্য, দৃশ্যত পরিস্থিতি স্বাভাবিক। স্কুল খুলেছে, অফিসে কাজকর্ম হচ্ছে এবং রাস্তাঘাটও স্বাভাবিক রয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা ১৬ বছর ধরে ঢাকায় রয়েছি। এই শহরের সঙ্গে আমাদের একধরনের বন্ধন তৈরি হয়েছে। আমরা চাইলেই সব ছেড়ে চলে যেতে বা অন্য কোথাও স্থানান্তর হতে পারি না। এটি কোনো তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় নয়। তাই আমরা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি।

সূত্র: দ্য ইকোনমিক টাইমস

বিজনেস আওয়ার/ ২৫ আগস্ট / হাসান

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: