ঢাকা , বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এসএমই মার্কেটের কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ডিভিডেন্ড প্রতারণার অভিযোগ

  • পোস্ট হয়েছে : ০৬:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৪
  • 82

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে এসএমই প্ল্যাটফর্মে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো তাদের বিনিয়োগকারীদের সঠিকভাবে ডিভিডেন্ড দিচ্ছে না।

শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে বিনিয়োগকারীরা এমন অভিযোগ দায়ের করেছেন।

বিনিয়োগকারীরা তাদের অভিযোগে বলেছেন, উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত এসএমই কোম্পানিগুলো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে। কিন্তু ঘোষিত ডিভিডেন্ড বিনিয়োগকারীদের কাছে প্রেরণ করে না।

কিন্তু ডিভিডেন্ড বিতরণ না করেও কোম্পানিগুলো স্টক এক্সচেঞ্জে ডিভিডেন্ড বিতরণ করেছে বলে স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট দাখিল করছে।

ফলে এসএমই মার্কেটের শেয়ারে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ হারাচ্ছেন বলে তারা বলছেন। বিনিয়োগকারীদের দাবি, এসএমই মার্কেটের বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

শেয়ারবাজারের এসএমই মার্কেটে বর্তমানে ২০টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে।

এসএমই মার্কেটের বিনিয়োগকারী মুহাম্মদ হারুনুর রশীদ অভিযোগ করেছেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানি কৃষিবিদ ফিড লিমিটেড থেকে ডিভিডেন্ড পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি। গত দুই বছর কোনো ডিভিডেন্ড পাননি তিনি। বিএসইসির কাছে তার অভিযোগ পত্রে ঘোষিত ডিভিডেন্ড সঠিকভাবে বিতরণ করতে ব্যর্থ হওয়া কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

একইভাবে কৃষিবিদ ফিড লিমিটেড থেকে ডিভিডেন্ড না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন আরেক বিনিয়োগকারী মেশাহুল কবির চৌধুরী। তিনি দাবি করেছেন, কোম্পানিটি ডিভিডেন্ড বিতরণের কথা জানালেও তিনি এখনও তা পাননি। তিনি কোম্পানির সঙ্গে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।

সৈয়দ মাহবুব আহমেদ নামের এক বিনিয়োগকারী জুন ২০২৩ অর্থবছরের ডিভিডেন্ড না পাওয়ার জন্য বিডি পেইন্টস-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।

এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএসইসির এক কর্মকর্তা ডিভিডেন্ড না পাওয়ার অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, অনেক কোম্পানি ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে, কিন্তু সঠিকভাবে বিতরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। বিএসইসি এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এছাড়া, যেসব কোম্পানি সময়মতো ডিভিডেন্ড বিতরণ করেনি, তাদের তালিকা বিএসইসি-তে প্রেরণ করার জন্য উভয় স্টক এক্সচেঞ্জগুকে নির্দেশ দিয়েছে।

আইন অনুসারে, কোম্পানিগুলোকে সম্পূর্ণরূপে এবং সঠিকভাবে ডিভিডেন্ড বিতরণ করার পরে স্টক এক্সচেঞ্জে একটি বিতরণ বা কমপ্লায়েন্স প্রতিবেদন জমা দিতে হয়। তবে কিছু কিছু কোম্পানি ডিভিডেন্ডের মাত্র ৬০-৭০ শতাংশ বিতরণ করে স্টক এক্সচেঞ্জে শতভাগ ডিভিডেন্ড প্রেরণের রিপোর্ট দিচ্ছে। যার ফলে বিনিয়োগকারীরা প্রতারিত হচ্ছেন।

এই বিষয়ে শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, অনেক নন-ফাংশনাল এবং খারাপ পারফরম্যান্স কোম্পানি এসএমই প্ল্যাটফর্মে তালিকাভুক্ত হয়েছে। যারা ডিভিডেন্ড দিতে সক্ষম নয়। নিয়ন্ত্রকের উচিত কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।

বিএসইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ডিভিডেন্ড পরিশোধ না করায় ওরিজা এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, মোস্তফা মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ, মামুন এগ্রো প্রোডাক্টস, মাস্টার ফিড এগ্রোটেক, আছিয়া সি ফুডস, কৃষিবিদ সিড, কৃষিবিদ ফিড, বিডি পেইন্টস এবং অ্যাপেক্স উইভিং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলস লিমিটেডের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছেন।

তবে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর্মকর্তারা নিজেদের অনিয়ম আড়াল করার জন্য বলছেন, তারা যথাযথভাবে ডিভিডেন্ড দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু অনেক বিনিয়োগকারী তাদের পোর্টফোলিওতে তথ্য আপডেট করেনি এবং ব্যাংকগুলিও ডিভিডেন্ড পাঠাতে সময় নেয়।

বিজনেস আওয়ার/ ২৬ আগস্ট / এ এইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

এসএমই মার্কেটের কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ডিভিডেন্ড প্রতারণার অভিযোগ

পোস্ট হয়েছে : ০৬:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৪

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে এসএমই প্ল্যাটফর্মে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো তাদের বিনিয়োগকারীদের সঠিকভাবে ডিভিডেন্ড দিচ্ছে না।

শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে বিনিয়োগকারীরা এমন অভিযোগ দায়ের করেছেন।

বিনিয়োগকারীরা তাদের অভিযোগে বলেছেন, উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত এসএমই কোম্পানিগুলো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে। কিন্তু ঘোষিত ডিভিডেন্ড বিনিয়োগকারীদের কাছে প্রেরণ করে না।

কিন্তু ডিভিডেন্ড বিতরণ না করেও কোম্পানিগুলো স্টক এক্সচেঞ্জে ডিভিডেন্ড বিতরণ করেছে বলে স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট দাখিল করছে।

ফলে এসএমই মার্কেটের শেয়ারে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ হারাচ্ছেন বলে তারা বলছেন। বিনিয়োগকারীদের দাবি, এসএমই মার্কেটের বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

শেয়ারবাজারের এসএমই মার্কেটে বর্তমানে ২০টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে।

এসএমই মার্কেটের বিনিয়োগকারী মুহাম্মদ হারুনুর রশীদ অভিযোগ করেছেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানি কৃষিবিদ ফিড লিমিটেড থেকে ডিভিডেন্ড পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি। গত দুই বছর কোনো ডিভিডেন্ড পাননি তিনি। বিএসইসির কাছে তার অভিযোগ পত্রে ঘোষিত ডিভিডেন্ড সঠিকভাবে বিতরণ করতে ব্যর্থ হওয়া কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

একইভাবে কৃষিবিদ ফিড লিমিটেড থেকে ডিভিডেন্ড না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন আরেক বিনিয়োগকারী মেশাহুল কবির চৌধুরী। তিনি দাবি করেছেন, কোম্পানিটি ডিভিডেন্ড বিতরণের কথা জানালেও তিনি এখনও তা পাননি। তিনি কোম্পানির সঙ্গে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।

সৈয়দ মাহবুব আহমেদ নামের এক বিনিয়োগকারী জুন ২০২৩ অর্থবছরের ডিভিডেন্ড না পাওয়ার জন্য বিডি পেইন্টস-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।

এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএসইসির এক কর্মকর্তা ডিভিডেন্ড না পাওয়ার অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, অনেক কোম্পানি ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে, কিন্তু সঠিকভাবে বিতরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। বিএসইসি এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এছাড়া, যেসব কোম্পানি সময়মতো ডিভিডেন্ড বিতরণ করেনি, তাদের তালিকা বিএসইসি-তে প্রেরণ করার জন্য উভয় স্টক এক্সচেঞ্জগুকে নির্দেশ দিয়েছে।

আইন অনুসারে, কোম্পানিগুলোকে সম্পূর্ণরূপে এবং সঠিকভাবে ডিভিডেন্ড বিতরণ করার পরে স্টক এক্সচেঞ্জে একটি বিতরণ বা কমপ্লায়েন্স প্রতিবেদন জমা দিতে হয়। তবে কিছু কিছু কোম্পানি ডিভিডেন্ডের মাত্র ৬০-৭০ শতাংশ বিতরণ করে স্টক এক্সচেঞ্জে শতভাগ ডিভিডেন্ড প্রেরণের রিপোর্ট দিচ্ছে। যার ফলে বিনিয়োগকারীরা প্রতারিত হচ্ছেন।

এই বিষয়ে শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, অনেক নন-ফাংশনাল এবং খারাপ পারফরম্যান্স কোম্পানি এসএমই প্ল্যাটফর্মে তালিকাভুক্ত হয়েছে। যারা ডিভিডেন্ড দিতে সক্ষম নয়। নিয়ন্ত্রকের উচিত কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।

বিএসইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ডিভিডেন্ড পরিশোধ না করায় ওরিজা এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, মোস্তফা মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ, মামুন এগ্রো প্রোডাক্টস, মাস্টার ফিড এগ্রোটেক, আছিয়া সি ফুডস, কৃষিবিদ সিড, কৃষিবিদ ফিড, বিডি পেইন্টস এবং অ্যাপেক্স উইভিং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলস লিমিটেডের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছেন।

তবে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর্মকর্তারা নিজেদের অনিয়ম আড়াল করার জন্য বলছেন, তারা যথাযথভাবে ডিভিডেন্ড দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু অনেক বিনিয়োগকারী তাদের পোর্টফোলিওতে তথ্য আপডেট করেনি এবং ব্যাংকগুলিও ডিভিডেন্ড পাঠাতে সময় নেয়।

বিজনেস আওয়ার/ ২৬ আগস্ট / এ এইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: